পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বঙ্গদর্শন ,সম্প্রদায়ের অনেকেই যেরূপভাবে এই শিক্ষা কামবশং নূতনকেও আলিঙ্গন করিতে ধাবিত হন না, আর কার্পণ্যবশাং পুরাতনের জীর্ণতাকেও আঁকড়াইয়া ধরিয়া রহেন না; কিন্তু ইহাদের পরস্পরের গুণাগুণ ও দাওয়াদাবীর পরীক্ষ হইয়া পরিণামে যে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠিত হইবেই হইবে, ধীরভাবে তাহারই প্রতীক্ষায় বসিয়া থাকেন—গ্রত্যেক যুগসন্ধিস্থলে, সমাজের সনাতনী প্রাণশক্তি তাহাদিগকেই আশ্নয় করি আত্মরক্ষা করে। কলহকোলাহলপ্রিয় ইতিহাস' এই সকল লোকের খোজ লয় না। কিন্তু ইতিহাসের দ্বারা উপেক্ষিত হইয়াও, আসল্প-সমাজ-বিপ্লবের মুখে, এই সকল ধৰ্ম্মনিষ্ঠ, কৰ্ম্মনিষ্ঠ, আত্মনিষ্ঠ, শান্ত ও সমহিতচিত্ত স্বধীজনই অতি সন্তৰ্গণে, সেই সঙ্কটকালে, সমাজের সনাতন প্রকৃতিটকে প্রাণে পূরিয়া বঁাচাইয়া রাখেন।, গুরুদাস বাৰু ও আধুনিক শিক্ষিত সম্প্রদায় ংলার স্বদেশী সমাজ একটা প্রবল বিপ্লবস্রোতের মাঝখানে আসিয়া পড়িয়াছে। আর এই সঙ্কটকালে যে অত্যঙ্গসংখ্যক ধীর-প্রকৃতি সুধীজনকে আশ্রয় করিয়া আমাদের সমাজের সনাতন প্রাণবস্তু আপনাকে বাচাইয়া রাখবার চেষ্টা করিতেছে, গুরুদাস বাবু তাহাদের মধ্যে সৰ্ব্ব প্রধান । যে বিদেশীয় শিক্ষা ও সাধনার প্রভাবে এই যুগান্তর উপস্থিত হইয়াছে, গুরুদাস বাবু সেই শিক্ষা ও সাধনাকে সুন্দররূপেই অধিগত করিয়াছেন। এ দেশের আধুনিক শিক্ষাপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের তিনি অগ্রণী। যে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই বিদেশীয় শিক্ষা ও সাধনার সেতু-স্বরূপ হইয়া আছে, গুরুদাস বাবু তাহার অন্যতম অধিনায়ক । কিন্তু গুরুদাস বাবুর সমসাময়িক ইংরেজি-শিক্ষাপ্রাপ্ত [ ১২শ বৰ্ষ, বৈশাখ, ১৩১৯ দীক্ষারদ্বারা একান্ত অভিভূত হইয়া পড়িয়াছিলেন, গুরুদাস বাবুকখনো সেরূপ হন নাই। অন্যদিকে যাহার এই শিক্ষাদীক্ষা পাইয়াও, ইহার প্রতি একটা গভীর ও অযৌক্তিক বিরাগ বশতঃ এই শিক্ষাদীক্ষাতে দেশ মধ্যে যে অবশুম্ভাবী পরিবৰ্ত্তনের স্রোত আনিয়াছে, সৰ্ব্বতোভাবে তাহার প্রতিরোধ করিতে বদ্ধপরিকর হন ; গুরুদাস বাবু কখনো একান্তভাবে তাহাদেরও সঙ্গে মিশিয়া যান নাই। মানুষের বিদ্যা তাহার ভূত্য হইয়াই থাকিবে,তাহারই ঈঙ্গিতসাধনে সৰ্ব্বদা নিযুক্ত হইবে ; ইহাই বিদ্যালাভের সত্যলক্ষ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা আজিকালি সৰ্ব্বস্বাস্ত হইয়া যে বিদেশীয় বিদ্যা-অৰ্জ্জনের চেষ্টা করিতেছি, তাহা অনেক স্থলেই আমাদের ভৃত্য না হইয়া, আমাদের প্রভু হইয়াই বসিতেছে। আমরা অনেকেই এই অভিনব বিদ্যাকে নিজেদের কৰ্ম্মে নিয়োগ করিতে পারিতেছি না; প্রত্যুত এই বিষ্ঠাই আমাদিগকে ভয়াবহ পর-ধৰ্ম্মে নিয়োগ করিতেছে। মানুষের শিক্ষা ও সাধনা তাহার আত্মজ্ঞানেরই ফুরণ করবে; ইহাতেই শিক্ষাদীক্ষার স্বার্থকতা লাভ হয় । কিন্তু বর্তমান বিদেশীয় শিক্ষা ও সাধন আমাদের আত্মজ্ঞানের স্ফুরণ ন করিয়া, অনেক সময় কেবল আত্মবিস্কৃতিই জন্মাইয় দেয়। এই বিদেশী বিদ্যার বলে আত্মলাভ করা দূরে থাক, অনেক সময় আমরা আত্মবিক্রয় করিয়াই বসি । এইরূপ আত্মবিশ্বতি ও আত্মবিক্রয় আমাদের ইংরেজিশিক্ষিত সম্প্রদায়ের সাধারণ ধৰ্ম্ম হইয়া গিয়াছে। সংস্কারক ওসংস্করণ-বিরোধী, উভয় দলেরই মধ্যে ইহা দেথা যায় । এক শ্রেণীর সমাজ ও ধৰ্ম্ম