পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩০ ভাবপ্রবণ লোকেরা সকলেই স্বল্পবিস্তর লঘুচিত্ত ও চঞ্চল ও নিষ্ঠাহীন বলিয়া প্রসিদ্ধ। ইংরেজের চরিত্রে এ লঘুচিত্ততা, এ চাঞ্চল, এ নিষ্ঠাহীনতা নাই বলিলেই হয়। ষ্টেডের আন্তরিক ভাবপ্রবণতার মধ্যেও এরূপ লঘুচিত্তত বা চাঞ্চল্য বা নিষ্ঠাহীনতা ছিল না। তার সুগঠিত মস্তকের নিবিড় কেশরাশি যেমন তার ভাবপ্রবণতার পরিচয় দান করিত, তেমনি আবার তার প্রশস্ত ললাট, উন্নত কপোল, অপেক্ষাকৃত স্থল অধরোষ্ঠ ও আয়ত চিবুকের ভিতর দিয়া তার চরিত্রের স্থৈৰ্য্য ও গাম্ভীৰ্য্য, কৰ্ত্তব্যনিষ্ঠা ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞতার আতাই ফুটিয়া বাহির হইত। র্তার চোখ দু'ট ছোট ছিল। কিন্তু সেই ছোট গোলকের তীব্র দৃষ্টির ভিতর দিয়া লোকচরিত্র বুঝিবার একট। অসাধারণ শক্তি এবং আপনার স্বত্বস্বর্থ রক্ষা করিবার উপযোগী একটা বণিকস্বভাবসুলভ চতুরতাও প্রকাশিত হইয়া পড়িত। ষ্টেডের মুখের দিকে চাহিলেই মনে হইত, এ লোককে ক্ষেপান যায়, কিন্তু ঠকান যায় না। এ ব্যক্তি ফলাফল প্রত্যক্ষ করিয়া, কোন অভীষ্ট-সিদ্ধির জন্ত সৰ্ব্বনাশকে অকুতোভয়ে আলিঙ্গন করিতে পারে; কিন্তু ভাল করিয়া না বুঝিয়া, আপনি কোন বিষয়ের সত্যাসত্য প্রত্যক্ষ ও প্রমাণিত না করিয়া, অন্ধ বিশ্বাসের প্রেরণায় বা কোন হুজুকের টানে, গোলে হরিবোল দিয়া, অন্ধকারে এক পা-ও চলিতে পারে ন। ষ্টেডের চেহারার ভিতর দিয়াই এ সকল যেন ফুটিয়া বাহির হইত। বঙ্গদর্শন ১২শ বৰ্ম, জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৯ ষ্টেডের বাল্যশিক্ষ: ষ্টেড, অতি সামান্ত গৃহস্থের ঘরে জন্মিয়৷ অতি সামান্য ভাবেই জীবনযাত্র আরম্ভ করেন । যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে আমরা আজিকালি উচ্চশিক্ষা বলিয়া জানি, সে শিক্ষালাভের সুযোগ তাহার ঘটে নাই । ষ্টেড কোন বড় স্কুলে যান নাই। বিলাতে আমাদের দেশের মত বর্ণভেদ নাই, কিন্তু শ্রেণীভেদ আছে। বর্ণভেদে সামাজিক পদমৰ্য্যাদাকে একান্ত ভাবে ব্যক্তিবিশেষের জন্ম ও কুলের উপরেই প্রতিষ্ঠিত করে। শ্রেণীভেদে সামাজিক পদ-মৰ্য্যাদাকে অনেক পরিমাণে ধনের উপরে প্রতিষ্ঠিত করিয়া থাকে । বর্ণভেদের উপরে যে সমাজ গঠিত, সেখানে ধনের মূল্য কখনই অতিমাত্রায় বাড়িয়া যাইতে পারে না । সেখানে ধনী ও নিধনের মধ্যে কোনো প্রকারের আত্যস্তিক ব্যবধানের প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। অন্যদিকে শ্রেণীভেদের উপরে যে সমাজ গড়িয় উঠে, সেখানে ধনের মূল্যটা আপন হইতেই চড়িয়া যায়। সেখানে ধনী ও নিধনের মধ্যে জীবনের সকল পথেই একটা দুরতিক্রমণীয় ব্যবধানের প্রতিষ্ঠা হয়। বর্ণভেদপ্রতিষ্ঠিত সমাজে, যে বড় কুলে জন্মাইল, তার ধন থাকু বা না থাকৃ, আপনার কুলোচিত বিদ্যা ও জ্ঞান তাহাকে উপার্জন করিতেই হয় ! সমাজও সেখানে আত্মরক্ষার জন্য আপন হইতেই এই বিদ্যা ও জ্ঞান উপার্জনের ব্যবস্থা করিয়া দেয় । কিন্তু শ্রেণীভেদপ্রতিষ্ঠিত সমাজে টাকা দিয়া বিদ্যা কিনিতে হয়। এইজন্য শ্রেণীভেদের উপরে যে সমাজের প্রতিষ্ঠা, সেখানে বিদ্যালাভ