৩য় সংখ্যা ] অধিকারের প্রতীকোপাসনা আছে ; তেমনি অসংখ্য দেবদেবীরপূজাও প্রচলিত রহিয়াছে। আর এই সকল দেবদেবী যে সকলেই এক জাতীয় তাহা, নহে। শিতলা বা ওলাবিবির পূদ্র যে শ্রেণীর, কালী, দুর্গ, লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রভৃতি পৌরাণিক দেবদেবীর পূজা সে শ্রেণীর নছে । আবার এই সকল পৌরাণিক দেবদেবীর ভজনা যে শ্রেণীর, ভক্তিপ্রাণ বৈষ্ণব বা শৈব সিদ্ধাস্তের রাধাকৃষ্ণের বা শিব-শক্তির ভজনা সে শ্রেণীর নহে। হিন্দুর ধৰ্ম্মে যেমন অতি নিয় অধিকারের প্রতীকোপাসনার ব্যবস্থা আছে, তেমনি মধ্যমধিকারের সম্পদুপাসনার ব্যবস্থাও রহিয়াছে। দুই বস্তুর মধ্যে কোনো সামান্য ধৰ্ম্ম প্রত্যক্ষ করিয়া, ইঙ্গদের ক্ষুদ্রতরযে বস্তু,—এবং ক্ষুদ্রতর বলিয়াই যাহা বিশেষভাবে ইন্দ্রিয়ের আয়ত্ত,—তাতার সাগধ্যে বৃহত্তর বস্তুর যাহা জ্ঞান লাভ করা যায়, তাঙ্গক্ষে সম্পদজ্ঞান বলে। ভূগোল শিক্ষার্থী দৃষ্ট ও করায়ত্ত কমললেবুর সাহায্যে অদৃষ্ট ও অনায়ত্ত পৃথিবীর আকারের যে জ্ঞানলাভ করেন, তাহ৷ এই সম্পদজ্ঞান। কমলালেবু ও পৃথিবীর মধ্যে আকারগত যে সামান্ত ধৰ্ম্ম আছে, কমললেবুকে সম্মুখে রাখিয়া, সেই সামান্তধৰ্ম্ম অবলম্বনে কেহ যদি অদৃষ্ট পৃথিবীর ধ্যান ও আরাধনা করিতে যান, র্তার সে উপাসনাকে সম্পদুপাসনা বলা যাইবে। স্বর্ঘ্যের সঙ্গে ব্ৰক্ষরস্তুরও কতকটা সামান্য ধৰ্ম্ম আছে। স্বৰ্য্য স্বপ্রকাশ ; আর কিছুতে স্বৰ্য্যকে প্রকাশ করিতে পারেনা; সূর্যনিজেইনিজকে প্রকাশিত করেন । আর নিজকে প্রকাশিত ,করিতে পাইয়াই যুগপৎ তিনি এই জগতকেও লোকচকে প্রকাশিত করিয়া থাকেন। সুতরাং সুর্য্য যেমন হিন্দুর ধৰ্ম্মের বিচিত্ৰত Ꮌ©☾ স্বপ্রকাশ, তেমনি জগৎপ্রকাশক। চিংস্বরূপ ব্ৰহ্মবস্তুও স্বপ্রকাশ ও জগৎ প্রকাশক । সেই চিদালোকেই আমাদের পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় জগতের যাবতীয় জ্ঞাতব্য বিষয়কে জানিতেছে । আর এই বিশ্বকে এইভাবে প্রকাশিত করিতে যাইয়াই, চিৎজ্যোতি যে ব্রহ্মবণ্ড তাহা আপনাকেও প্রকাশিত করিতেছেন ; এই জন্যই শ্রীতি কহেন “তদ্বিষ্ণে পরমম্ পদং সদা পশুস্তি শরয় দিবি চক্ষুরাততং " বন্ধুবস্তুর সঙ্গে সূর্য্যের এই সামান্ত ধৰ্ম্ম লক্ষ্য করিয়া, গায়ত্রিমন্ত্র-সাহায্যে এই প্রত্যক্ষ সবিতার ধ্যান , ও আরাধনা করা সম্পর্পোসনার অন্তর্গত। যেমন স্বর্যোপাসনা, তেমনি মনোপাসনা, তেমনি প্রাণোপাসনা, এ সকলই সম্পদুপাসন । কিন্তু হিন্দুর ধৰ্ম্মে আরো উচ্চ অঙ্গের স্বরূপ-উপাসনারও ব্যবস্থা আছে। এখানে সৰ্ব্বপ্রকারের ইন্দ্রিয়চেষ্টার লৈয়গ্নিক ও মানসিক উভয়ক্ষেত্রেই আত্যস্তিক নিবৃত্তিলাভ করা আবশ্বক করে। এই নিবৃত্তিলাভ হইলে, উপাসক আত্মস্বরূপে অবস্থিতি করিয়া, সমাধিযোগে ব্ৰহ্মস্বরূপের সাক্ষাৎকার পাইয়া, স্বরূপোপাসনার অধিকারী করেন। কিন্তু এই স্বরূপোপাসনাতেই হিন্দুর সাধনা আপনার চরম চরিতুর্থিতা লাভ করে না । ব্ৰহ্মজ্ঞানের অধিকারেই স্বরূপোপাসনার প্রতিষ্ঠা । কিন্তু এই ব্রহ্মজ্ঞানের উপরেও উন্নততর অবস্থা আছে । সে লীলার অবস্থা । এখানে উপনিষদের ব্ৰহ্ম ভাগবতের লীলারসময় ভগবানরূপে ফুটিয়া উঠেন। আর সাধক উপনিষদ র্যাহাঁকে “রসে৷ বৈ সঃ’ তিনি রসস্বরূপ বলিয়ছিলেন, তাহাকেই নিখিলরসামৃতমূরিপে প্রত্যক্ষ করিয়া তাহারই এই
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৬০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।