>QW。 নিখিললীলারসে আত্যস্তিকভাবে আপনাকে বিসর্জন করিয়া, জীবন্মুক্তিলাভ করেন। কাষ্ঠলোষ্ট্রের উপাসক হইতে এই জীবন্মুক্ত মহাপুরুষগণ পর্যন্ত, সকল শ্রেণীর সাধকই হিন্দুগোষ্ট্রভূক্ত। ইহারা সকলেই আপন আপন অধিকারে প্রতিষ্ঠিত হইয়া ঋজু কুটীল, উচ্চ নিয়, বিবিধ পন্থ অবলম্বনে একই চরম সাধ্যের সাধনা করিতেছেন। আর ধৰ্ম্মবস্তুকে মানুষের প্রকৃতির মূল প্রতিষ্ঠিত করিয়াই, হিন্দুর ধৰ্ম্ম " আপনার মধ্যে এমন অশেষ বিচিত্রতার সমাবেশ করিতে পারিয়াছে। ফলতঃ মানবপ্রকৃতি হইতেই যদি ধৰ্ম্মের উৎপত্তি হয়, তবে এই প্রকৃতিতে যেমন অশেষ বিচিত্রত থাকিবেই থাকিবে তেমনি এই প্রকৃতি সকলের সমান নয় বলিয়া, মানুষের মতামতও কখনো এক, হয় না, তার শক্তি সাধ্যও কখনো সমান হয় না । আমাদের মতামত তে। আর আকাশ হইতে উড়িয়া পড়ে না ; আমাদের মনের, বুদ্ধির, প্রজ্ঞার যতটা বিকাশ হইয়াছে ও যে সকল বাহিরের বিষয়ের সঙ্গে বিবিধ সম্বন্ধে আবদ্ধ হইয়া এই মন ও বুদ্ধি ক্রমে ক্রমে ফুটিয়া উঠিয়াছে, সে সকলের ফলেই আমাদের মতামত গড়িয়া উঠে। অতএব যেখানে লোকের, মনবুদ্ধি ঠিক এক রকম বিকশিত হয় নাই, আর যেখানে তাহীদের বাহিরের অভিজ্ঞতাও সমান নয়, সেখানে তাদের মতামত কদাপি সমান হইতেই পারে না। মানুষের সত্যিকার মতামত যদি ভ্রান্ত হয়, সে ভ্রান্তির নিরসন করিতে হইলে, তাহার মনের প্রকৃতিটাকে বদলাইতে হইবে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে যে সকল পরিপাশ্বিক অবস্থা ও ব্যবস্থার ভিতর দিয়া সেই মানস প্রকৃতিটী বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, আষাঢ়, ১৩১৯ এতাবৎকাল আপনার সার্থকতা লাভের চেষ্টা করিয়াছে, সে সকল অবস্থা এবং ব্যবস্থায়ও যথাসম্ভব পরিবর্তন ঘটান আবখ্যক হইবে। নতুবা কখনই তার সত্যিকার মতামতগুলির সংশোধন বা পরিবর্তন সম্ভব হইবে না। খৃষ্টীরা প্রভৃতি জগতের প্রচারকধৰ্ম্ম এই সত্যটা ভাল করিয়া ধরিতে পারেন নাই। এ সকল ধৰ্ম্ম নানা অবস্থার, নানা অধিকারের, নানা জাতির মধ্যে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করিতে চেষ্ট করেন। তার ফল এই দাড়ায় যে খৃষ্টীয়ান প্রভৃতি ধৰ্ম্মের কথাগুলিই এই সকল লোকে শিথিয়া রাখে, সে সকল কথার অন্তরালে যে সকল নিগূঢ় তত্ত্ব লুকাইয়া আছে, তাগ কিছুতেই ধরিতে পারে না । এবং এইজন্য কাল ক্রমে তীন অধিকারের লোকের মধ্যে এই সকল তত্ত্ব প্রচারিত হইয়া, হীন অর্থ পাইয়া, খৃষ্টীয়া প্রভৃতি প্রচারকধৰ্ম্ম সকলের মৌলিক শ্ৰেষ্ঠত কিছুতেই রক্ষা করা আর সম্ভব হয় নী যিশুখৃষ্ট জুদিয়ার লোক। ইহুদীয় সাধনার পরিণত ফলরূপেই সে দেশে যিশুখৃষ্ট্রের জন্ম হয় । যিশুখৃষ্ট্রের উপদেশ ও সাধনপন্থার সঙ্গে ইহুদীয় সাধনার ও ইহুদীয় সমাজ-জীবনের একটা অতি ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল। কিন্তু এই সকল উপদেশ ও সাধন যখন প্রাচীন গ্রীশীয় চিন্তার সঙ্গে মিলিয়া গেল, গ্রীশীয় সমাজের সুধীগণ যখন যিশুখৃষ্ট্রের ধৰ্ম্মকে গ্রহণ ও সাধন করিতে আরম্ভ করিলেন, তখন এই ধৰ্ম্মই এক - নূতন আকার ধারণ করিতে লাগিল। ইহুদী সাধনার ঝোঁক চিরদিনই কর্থের দিকে ছিল। জিহোভার সঙ্গে ইহুদীয় জাতির আদিপুরুষ এব্রাহেমের একটা বিশেষ সৰ্ত্তের উপরেই
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৬১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।