পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> かや কিন্তু স্বর্গের সহিত মর্ত্যের সম্বন্ধ কি তাহ আমরা বোধ হয় ভাবিয়া দেখি নাই। পুণ্যবলে, ধৰ্ম্মবলে, হয় ত স্বর্গের আনন্দ অনুভব করিবার দাবী দাওয়া আমাদিগের থাকিতে পারে। হয় ত পুণ্যবল ক্ষয় হইলে আমর পুনৰ্ব্বার মর্ত্যে স্থল ভাবে বিচরণ করিতে বাধ্য কিন্তু কবি তাহাতে সন্তুষ্ট নহেন। তাহার মতে মানবসন্তানের ধৰ্ম্মজগতে একটা দায়ীত্ব আছে। স্বৰ্গ হইতে বিদায়ের সময় কবি বলিতেছেন :– থাক স্বৰ্গ হাস্যমুখে, কর মৃধাপান দেবগণ! স্বর্গ তোমাদেরি মুখস্থান মোরা পরবাসী । মৰ্ত্ত্যভূমি স্বর্গ নহে, সে যে মাতৃভূমি তাই তার চক্ষে বহে অশ্ৰুজলধারা, যদি দুদিনের পরে কেহ তারে ছেড়ে যায় দুদণ্ডের তরে। যত পাপী তাপী, মেলি বাগ্র আলিঙ্গন সবারে কোমলবক্ষে বাধিবারে চায়, ধূলিমাথ ততুস্পশে হৃদয় জুড়ায় জননীর । স্বগে তব বহুক অমৃত, মর্ত্যে থাক্ সুপে দুঃখে অনন্ত মিশ্রিত প্রেমধারা । অশ্রুজলে চিরখ্যাম করি? ভূতলের স্বৰ্গখণ্ড গুলি ! অথচ, @ ‘দেবগণ । মাঝে মাঝে এই স্বৰ্গ হইবে স্মরণ দূর স্বপ্ন সম—-যবে কোনো অৰ্দ্ধরাতে সহস। হেরিব জাগি' নিৰ্ম্মল শয্যাতে পড়েছে চন্দ্রের আলো, নিদ্রিত প্রেয়সী, লুষ্ঠিত শিথিলবাহু ( লোকালয় ১৯৩১৯৪ ) তার পর নিদ্রিত প্রেয়সীর কথা। পূর্ণিম! নিশিতে নিদ্রিত। প্রেরণীর সোহাগ চুম্বন বঙ্গদর্শন { ১২শ বর্ষ, আষাঢ়, ১৩১৯ আমাদের কপালে কোন কালে ঘটিয়াছিল এমন মনে পড়ে না, এবং যদিও ঘটিয়া থাকে তবে তাহাতে সহস্রজন্মের পূর্বের স্বৰ্গসুখকথা স্মরণ পথে আসিয়া ছিল, এহেন জাতি-স্মরতার দপ আমরা করিতে অক্ষম | কিন্তু জননীমৰ্ত্ত্যভূমির অশ্রুধারাবিমোচন করার দায়ীত্ব যে আমাদিগের আছে, সে কথা কবির সহিত আমরা প্রাণপণে স্বীকার করি। সে অশ্রদ্ধার যে কেবল মূৰ্ত্তমানবের নয়ন বিগলিত তাহাই নহে। পশুপক্ষী, বৃক্ষলত, কীটপতঙ্গ এবং সমগ্র বিশ্ব তাহার অংশীদার । এই যে একটা অনাদি চিরন্তন মাতৃবন্ধন তাহ। কেবল "করুণ' এবং "জ্ঞান’ দ্বারা বুঝান যায় না। এবং, সে বন্ধন আত্মমুক্তি কল্পনা করিয়া ও ছিন্ন করা যায় না, কারণ সমগ্ৰ বিশ্বকে তাহ বেষ্টন করিয়া আছে । ‘বন্ধন ? বন্ধন বটে, সকলি বন্ধন স্নেহপ্রেম আশাতৃষ্ণ ; সে যে মাষ্ট্ৰপাণি স্তন হ’তে স্তনাস্তরে লইতেছে টানি’, স্তন্যত্যুষ্ণ নষ্ট করি মাতুবন্ধপাশ ছিন্ন করিবারে চাস্ কোন মুক্তিভ্রমে ? আমরা হিন্দু। শ্ৰাদ্ধ, তৰ্পণ, যাগ যজ্ঞ, পূজা এবং অর্চনার মাপ্যে সেই বন্ধন চিরকালষ্ট রাখিয় দিয়াছি। পাশ্চাত্যজগতে বিজ্ঞানের অভু্যদয়ের পূৰ্ব্বে, সেই বিশ্বজনীন বন্ধনের সম্পূর্ণ তথ্য কোন কাব্যগ্রন্থে পাঞ্জ যায় না। মাতৃস্বরূপ বিশ্বপ্রকৃতির মধ্য দিয়: মানবায়ার সহিত পরমাত্মার যে গৃঢ় সম্বন্ধ বৰ্ত্তমান, তাহ হিন্দুসন্তানের স্মৃতিপথে, ক্রিয়াকুলাপে, চিরকাল অক্ষুণ্ণভাবে রঙ্গিয় গিয়াছে। সে ভাব ভোগাগ্নি দ্বারা দগ্ধ হইবার নছে। মুক্তি কিংবা নিৰ্ব্বাণদ্বারা মিটিবার মঙ্গে ।