৩য় সংখ্যা ] এই জন্যই পুনর্জন্ম আমরা মানিয়া থাকি “অসীম সংসারে রয়েছে পৃথিবীভরি বালিক বালক , সন্ধ্যাশয্য, মার মুখ, দীপের আলোক । এই অদ্ভূত শৈশব-গাথা শিশু নামক কাব্যখণ্ডে কবি বর্ণনা করিয়াছেন। তাহারই it is stood of: the child is the father of the man, of Ko Stérigorosa এই গভীর বাণীর মৰ্ম্ম বুঝিতে পারিব। এই বিশ্বজগত শিশুর মহামেলা' । সেই শিশুর জন্মকথায় কবি সমগ্র সনাতন ধৰ্ম্মশাস্ত্রের মৰ্ম্ম উদঘাটিত করিয়াছেন। স্বৰ্গ হইতে বিদায় লইয়৷ পূৰ্ব্বকল্পের শিশুগণ কি করিয়া মর্ত্যে জননীর অঙ্ক পুন প্রাপ্ত হইল ? ছান্দোগা, বৃহদারণ্যক প্রভৃতি উপনিষদে জীবের পুনরাবৰ্ত্তন সম্বন্ধে অনেক কথা আছে। তাহার মৰ্ম্ম এই যে ছালোক হইতে ভূলোক পৰ্য্যন্ত চিরন্তণ একট। পথ রহিয়া গিয়াছে যাহা দিয়া মানবসন্তানগণের অহরহ পুনরাবৰ্ত্তন হইতেছে। সে পথ প্রকৃতিরই ক্রোড়স্থ । যে তন্ত্রানুক্রমে সেই পথ সৃষ্টি হইত্ত্বেছে, কবির অন্যান্ত কাব্যাংশ হইতে অঙ্গর আভাষ দিতে চেষ্টা করিব । আপাততঃ রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিপ্রকরণের দ্বৈতরহস্য’ট মনে রাখা উচিত। ঈশ্বর আপনিই নিজের মায়াকে স্ত্রীপ্রকৃতিরূপে বিস্তার করিয়া ভাবরাজ্যের স্বষ্টি করেন । শাস্ত্রের মতও তাই, দার্শনিকু হেগেলের মতও তাই। ইহ। তাহার আনন্দ লীলা । যে ভাবে রমণীরূপে আপন মাধুরী, আপনি বিশ্বের নাথ করিছেন চুরি ; যেভাবে নবীন মেঘ বৃষ্টি ক'রে দান তটিনী ধারারে স্তন্য করাইছে পান, যেভাবে পরম-এক আনন্দে উৎসুক তরুণ রবি । ४७१ আপনারে দুই করি লভিছেন সুখ, দুইএর মিলনঘাতে বিচিত্র বেদন নিত্য বর্ণ গন্ধগীত করিছে রচনা, হে রমণি ! ক্ষণকাল আসি মোর পাশে চিত্ত ভরি’ দিলে সেই রহস্য আভাসে । তাই “জন্মকথায় থোক ‘মাকে শুপায় ডেকে’ "এলেম আমি কোথ৷ জননী প্রকৃতি কহিল “ইচ্ছ। তয়ে ছিলি মনের মাঝরে’। যদি শিশুর মনে কোন খট্কা উপস্থিত হয় তাই কবি পুনরায়ু বুঝাইতেছেন, ‘তুই আমার ঠাকুরের সনে ছিলি পূজার সিংহাসনে, তারি পূজায় তোমার পূজা করেছি। এটা সনাতন ধৰ্ম্মের কথা । অন্য কোন দেশের কবিতা, কোন মহাকাবো, একথা আমরা পাই নাই । বঙ্গের মা ষষ্টীর কুটীরে থোকার দর্শনশাস্ত্র, পোকার জন্মতন্ত্র ও বিজ্ঞান, সামান্য কয়ট কথায় কবি কি সুন্দর ভাবে চিত্ৰিত করিয়াছেন! তাঙ্গতে তাহার আর্য্য প্রতিভা ফুটিয়া উঠিয়াছে। কবি হয়ত নিজে কখন সে দর্শন ও বিজ্ঞান স্বীয় কাব্যের মধ্যে প্রযুক্ত করিতে চাহেন নাই, কিন্তু তাহার হৃদয়ের উচ্ছ,াসের সহিত কথায় কথায়, ছন্দে ছন্দে তাহ। প্রকাশ হইয়াছে। পোক ইচ্ছা শক্তির স্বরূপ হইয়া, মনের মাঝারে দিয়া, কিরূপে আসিল ? উত্তর সে ‘চিরকালের আশায় ছিল, ‘মায়ের, দিদি মায়ের পরাণে ছিল ; শুধু তাই নয়, গৃহদেবীর কোলের মধ্যে অনেক কাল লুকাইয় ছিল । যৌবনের সঙ্গে মাতার তরুণ অঙ্গে ‘সৌরভের মত মিলাইয় ছিল। সব দেবতার আদরের পমা নিত্যকালের তুই পুরাতন, তুই প্রভাতের আলোর সমবয়সী তুই জগতের স্বপ্ন হতে থেকে ?
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৭২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।