Ꮌbre জানিতে পারে, পরম্পরের সঙ্গে মিলিত হইয়া একযোগে কাৰ্য্য করিতে পারে । কর-পদের অঙ্গুলীগুলি যতদিন মূলদেহের সঙ্গে ংযুক্ত থাকে, ততদিন তাহদের দ্বারা মূলদেহের শোভা এবং কাৰ্য্য উভয়ই সম্পাদিত হয়; কিন্তু তাহারা যদি কখনও দৈব দুৰ্ব্বিপাকে দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়ে, তখন দেহের অস্তিত্ব থাকিলেও তাহার শোভা এবং কার্য্যে ব্যাঘাত ঘটুে, পরস্তু, অঙ্গুলীগুলির অস্তিত্ব একেবারেই বিলুপ্ত হইয়া যায়। প্রান্তবাসী বাঙ্গালীর বওঁমান বিচ্ছেদে সম্মিলিত বঙ্গের অস্তিত্বের কোন ব্যাঘাত ঘটবে না বটে, কিন্তু এক দশমাংশ শক্তি যে কমিয়া গেল তাহ। অবগুই স্বীকার করিতে হইবে। আর এই বিচ্ছিন্ন অংশের অস্তিত্বই বা কতদিন থাকিবে— কতদিন এই বিচ্ছিন্ন অংশের অধিবাসিগণ বাঙ্গালী বলিয়া পরিচয় দিবীর অবকাশ পাইবে ? এখন ইহার শাসন-সংরক্ষণ প্রভৃতি গবর্ণমেণ্ট সম্পৰ্কীয় সৰ্ব্ববিষয়ে বঙ্গালী জাতি হইতে সম্পূর্ণরূপে পৃথক হইল, কেবল বাঙ্গালীর মাতৃভাষাটাই ইহাদিগের বাঙ্গালী বলিয়৷ পরিচয় দিবার অবলম্বন হইয়া বৃহিল। ইহাও দীর্ঘকাল থাকিবে না। বৃহৎ শক্তির সঙ্গে ক্ষুদ্র শক্তির সংস্থাশ হইলে বৃহৎ শক্তি ক্ষুদ্র শক্তিকে গ্রাস করিয়া ফেলে, অধিকমাত্র জলের সঙ্গে বিন্দুমাত্র জলের যোগ করিয়া দিলে সেই বিন্দু আর ক্ষণমাত্রও আপনার অস্তিত্ব রক্ষা করিতে পারে না । এই ৭• লক্ষ বাঙ্গালী যে অল্পকাল মধ্যে আপনাদের অস্তিত্ব আসামবাসী এবং বিহারবাসীর অস্তিত্বে ডুবাইয় দিতে বাধ্য না হইবে, এ কথা দৃঢ়তার সহিত কে বলিতে পারে ? ব্যক্তিগত ভাবেই বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, আষাঢ়, ১৩১৯ হউক আর জাতিগত ভাবেই হউক, আপনার অস্তিত্বের বিলোপ কেহ আকাঙ্ক্ষা করে না। আমরা আজ নৈরাশ্বের অপার সমুদ্রে পড়িয়া সস্তরণ করিতেছি। সন্তরণদ্বারা যে কূল পাইব না, তাহা আমরা জানি ; কিন্তু সন্তরণ ছাড়িলে যে জীবনের আশা একেবারেই যায়, তাহা বুঝিয়াই সন্তরণ করিতে আমরা বাধ্য। মানুষ জলে পড়িয়া যতক্ষণ হাবুডুবু খায়, যতক্ষণ হস্তপদ সঞ্চালন করে, ততক্ষণষ্ট তাহার বঁচিবার আশা, কারণ ততক্ষণই অন্যের দৃষ্টি-আকর্ষণ এবং সাহায্য-প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু সে যখন মরিয়া ফুলিয়া ঢেপ হইয়া ভাসিতে থাকে, তখন লোকে তাহাকে দেখিলেই ঘৃণায় চক্ষু ফিরায়, তাহাকে তুলিয়া লইবার জন্য কেহ হস্তু প্রসারণ করে না। মানুষ বন্দুকের গুলি খাইয়া যতক্ষণ নড়ে চড়ে, যতক্ষণ হস্তপদের অক্ষেপ প্রদর্শন করে, ততক্ষণই তাহকে বাঁচাইবার জন্ত চিকিৎসক প্রাণপণ চেষ্টা করেন, গুলি উদ্ধার করিবার জন্য নানারূপ কৌশল অবলম্বন করেন ; কিন্তু যে মুহূর্তে তাহার নড় চড় এবং খেচুনী থামিয়া যায়, সেই মুহূর্তেই চিকিৎসকের যত্নও থামিয়া যায়, ডোমে তাহাকে লোক-নয়নের অন্তরালে লইয়া ফেলিয় দেয়। র্যাহারা আত্মরক্ষার প্রকৃতির এইরূপ বিধানের কথা অবগত আছেন, তাহারা আমাদের এই হাহুতাঁধে, এই অশ্রুপাতে, এই আক্ষেপ-উৎক্ষেপে বিরক্ত না হইয়া ভরসা করি আমাদিগকে সহানুভূতির চক্ষেই দেখিবেন, এবং র্যাহার যতটুকু শক্তি থাকে, আমাদিগের সহায়তায় তাহার প্রয়োগ করিবেন।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।