পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] এই সকল লেখকের, ভাষায় এবং ভাবে কি জানি কি একটা তরলত, একটা চঞ্চলত, একটা অগভীরতা রহিয়াছে, তাহা বুঝিতে পুরি না, কাজেই বাক্যে প্রকাশ করা অসম্ভব । এই সকল লেখকের লেখা তরতর করিয়া কাণের মধ্যে কি একটা মধুরতা, একটা ললিত্য, একটা ক্ষণস্থায়ী আকর্ষণ ঢাক্ট্রি ग्नि যায় তাহা বুঝিতে পারি না, কিন্তু হৃদয় পর্যন্ত যে তাহ প্রবেশ করে না, হৃদয়ে যে তাহার একটা দাগ অঙ্কিত হয় না, দুই দিন পরে চেষ্টা করিলেও যে তাহ আবার স্মৃতি-পথে আনিতে পারি না, এ কথা বুঝি। বঙ্গভাষায় লিখিত অনেক স্বচিন্তিত সুন্দর প্রবন্ধ প্রাদেশিকতার বিষে এমনই মূৰ্ছিত যে, প্রাস্তবাসী বাঙ্গালীর পক্ষে তাহার থাক না থাকা তুল্য। আমার স্মরণ আছে, এক সময়ে বাঙ্গালার কোন প্রদেশে প্রায় দেড়শত বালককে নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায় সরল শরীর পালনের মৌখিক পরীক্ষা করিতে হইয়াছিল। লেখক ছাত্রদিগকে অবস্থা বিশেষে পলতার ডালনা খাইবার ব্যবস্থা দিয়াছেন। নিম্ন প্রাথমিক পাঠশালার শিক্ষকের এই সকল প্রাদেশিক শব্দ বুঝেন কি ন জানিবার জন্য আমার কৌতুহল হইল, এবং বালকদিগকে ঐ দুইটি শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসা করিলাম। আশ্চর্য্যের বিষয়, তথা দুঃখেরও বিযয়, দেড়শত বালকের মধ্যে একজনও এ দুইটি শব্দের অর্থ বলিতে পারিল না। এই সকল পরীক্ষায় বালকের পুস্তকের অর্থ বড় একটা বুঝে না, শিক্ষকের কথাগুলি মুখস্থ করিয়াই পরীক্ষায়ু উত্তীর্ণ, হয়। শিক্ষকের বুঝতে পারেন নাই বলিয়াই ঐ দুটি ক্ষুদ্র শঙ্ককে উপেক্ষা করিয়াছিলেন, সভাপতির অভিভাষণ >bダ○ নতুবা তাহীদের শ্রুতিধর ছাত্রদিগের নিরুত্তর থাকিবার কোন কথা ছিল না। অভিধানের সংগ্ৰহকৰ্ত্তারা সাধারণতঃ সাধু ভাষায় প্রচলিত শব্দগুলিরই সঙ্কলন করিয়া থাকেন, এবং ইহাই সুসঙ্গত । প্রতি জেলার প্রাদেশিক শব্দ যদি বাঙ্গালার অভিধানে স্থান লাভ করে, তাহা হইলে তাহ যে শব্দ কল্পদ্রুমের কত গুণ বড় হইবে তাঁহা বলা যায় না। সম্ভবতঃ শিক্ষকের অভিধান খুলিয়া দেখিয়াছেন, কিন্তু তাছাতে পাতাৎ পান নাই, ডানাও পান নাই। গ্রন্থকার যদি “পলতার ডালমা” না লিথিয়াপটোল পত্রের ব্যঞ্জন” লিখিতেন, তাহ। হইলে নিতান্তই যে সরলতার ব্যাঘাত ঘটিত, এমন নহে ; পরস্তু তাহার লেখার উদ্দেশ্য সুসিদ্ধ হইত, বাঙ্গালীর সর্বত্র সকলেই তাহার কথার অর্থ বুঝিতে পারিত। আজকাল সরল লেখার একটা অর্থ হইয়াছে, সরল বর্ণের লেখা, যুক্তবর্ণের অভাব । যুক্তবর্ণ দেখিলেই অনেকে শিহরিয়া উঠেন, কিন্তু অর্থ বুঝিতে পাধিলে বালকের যে যুক্তবর্ণকে বড় একটা ভয় করে না, তাহা ভাবিয়া দেখেন না । যাহা হউক, এই সকল লেখক যে পথ প্রশস্ত মনে করিপেন সেই পথেই চলিবেন, আমাদের ক্ষুদ্র চিৎকারে হার নিরস্থ হইবেন না। কিন্তু আমাদের নিজের প্রতি একটা গুরুতর কৰ্ত্তব্য রহিয়াছে ; এবং বৰ্ত্তমান অবস্থায় সেই গুরুত্ব শতগুণে বৰ্দ্ধিত হইয়াছে । আমরা বঙ্গের এক নিভৃত প্রাস্তে পড়িয়া রঙ্গিয়াছি ; বঙ্গের সকল প্রদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে মিলিয়া মিশিয় তাহীদের সমস্ত প্রাদেশিক শব্দের সঙ্গে পরিচিত হইতে পারি, আমাদের সে সুযোগ বা ক্ষমতা নাই। এ