So মাহ চক্ষে দেখা যায় না, কিন্তু দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরস্পরের মধ্যে যে অঙ্গাঙ্গী সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত, যে সম্বন্ধকে অবলম্বন করিয়া, সৰ্ব্ববিধ দৈহিক চেষ্টা প্রকাশিত হইতেছে, তাহারই মধ্যে এই প্রাণবস্তু প্রত্যক্ষ হইয়া থাকেন ; তেমনি তাহার সমাজেও একটা প্রাণবস্তু আছে, হিন্দু এ কথায় চিরদিনই বিশ্বাস করিয়া আলিয়াছেন। এই সমাজ-প্রাণকে৪,চক্ষে দেখা যায় না। কিন্তু সমাজের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরস্পরের মধ্যে যে অঙ্গাঙ্গী সম্বন্ধ রহিয়াছে, তাঁহারই বিবিধ চেষ্টার ভিতরে এই সমাজ প্রাণও প্রত্যক্ষ হইয়া থাকেন। আর হিন্দুর, এ সিদ্ধান্তকে য়ুরোপীয়দের পক্ষেও আজিকালি একটা অদ্ভূত কল্পনা ৰলিয়া উড়াইয়া দেওয়া সম্ভব নহে। কারণ যুরোপীয় পণ্ডিতেরাও এখন এই কথাই বলিতেছেন। আধুনিক সমাজতত্ত্ববিদগণ মানবসমাজে জীবধৰ্ম্ম আরোপ করিয়া, তাহাকে নিঃসঙ্কোচে জীব-উপাধি প্রদান করিয়াছেন । সোসিয়ালু অৰ্গেনিজম্ (social organism) al Assis-à- oft যুরোপীয় চিস্তায় সৰ্ব্বথা গৃহীত হইয়াছে। আর এটা যদি কেবল একটা কথার কথা নহয়, এর পশ্চাতে যদি কোনো প্রামাণ্য সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা হইয় থাকে, তবে জনসমাজের ভিতরে একটা আত্মশ্বরিত প্রাণন-চেষ্টারও প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য্য হইয় উঠে। জীব বলিলেই তার একটা ব্যক্তিত্ব বা নিজত্ব আছে, এটা বোঝায়। এই ব্যক্তিত্ব বা নিজত্ব সাধারণ জীবধৰ্ম্ম । জীবমাত্রেরই একটা নিজস্ব লক্ষ্য ও সেই লক্ষ্যলাভের জন্য যথোপযুক্ত উপায়নিৰ্ব্বাচন ও সেই উপায়-অবলম্বনে আপনার সফলতালাভের প্রয়াস করিবার একটা আভা বঙ্গদর্শন { ১২শ বৰ্ষ, বৈশাখ, ১৩১৯ •ন্তরীণ শক্তিও আছে। জীবের সর্ববিধ জীবন চেষ্টার ভিতর দিয়া তার জীবনের এই চরমলক্ষ্যটী নিয়ত ফুটিয়া উঠে। জীবের ভিতরকার ও বাহিরের বিভিন্ন সম্বন্ধ ও সৰ্ব্ববিধ বিধিব্যবস্থা এই লক্ষ্যটার সন্ধানেই চলে। জনসমাজেরও সমষ্টিভাবে একটা গতি, একটা ঐতিহাসিক বিবর্তন-চেষ্টা,একটা নিয়ম আছে, ইহা সকলেই স্বীকার করেন। কিন্তু গতি আছে, তথাপি নির্দিষ্ট গন্তব্য নাই ; বিধান আছে, তথাপি কোনো স্থির লক্ষ্য নাই ; নিয়ম আছে, তথাপি সে নিয়ম কোন কিছুই স্থিরভাবে আয়ত্ত, প্রকাশিত বা প্রতিষ্ঠিত করিতে চাহে না,-ইহা কুত্ৰাপি জীবধৰ্ম্ম বলিয়া গণ্য হয় না। "এরূপ অসঙ্গতি বুদ্ধিতে আসে না, কল্পনা করাও অসম্ভব। কিন্তু জনসমাজকে কেবল অৰ্গেনিজম্। বলিলেই যথেষ্ট বলা হয় না। জনসমাজে শুদ্ধ জীবত্ব আরোপ করিয়াই, তার প্রকৃতি ও গতির সম্যক্ অর্থ প্রকাশ করা যায় না। জনসমাজকে, এই জন্য, কেবল অৰ্গেনিজুম্ না বলিয়া বিইংই ( Being ) বলিতে হয়। ইতালীয় মনীষী মহামতি ম্যাটসিনী মানবসমাজকে এই বিইং উপাধি প্রদান করিয়াছেন। য়ুরোপীয়দের মধ্যে আধুনিক কালে, বোধ হয়, ম্যাটসিনীই মানব সমাজের মূল প্রকৃতিটা অতি পরিষ্কার রূপে ধরিয়াছিলেন। Humanity is a Being-আধুনিক যুগে ম্যাটসিনীই প্রথমে অকুতোভয়ে এ কথাটা বলিয়ছেন। আর বিইং ( Being) বস্তু অচেতন নহে, সচেতন । তাহা স্বপ্রকাশ ও স্বপ্রতিষ্ঠ। তার আত্মজ্ঞানই তার গতির কারণ ও স্থিতির ভূমি হইয়া আছে। পাশ্চাত্যেরা যাহাকে বিইং (Being ) বলেন, হিন্দু তাঁহাকে আত্মা বলেন। আমরা
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।