১৯ e বাঙ্গালা পুস্তকের একটা উল্লেখযোগ্য পুস্তকালয় হইতে পারে। উদ্যোগী লোক থাকিলে এক বৎসরে না হউক, অন্তত: ৫ বৎসরে যে কোন গ্রামে এই ২০০ টাকা সংগ্ৰহ হইতে পারে। প্রয়োজন বুঝিতে না পারিলে ২ টাকা ব্যয় করাও অপব্যয় বলিয়া বোধ হয়, কিন্তু দেশের সুখ, সুবিধা এবং উন্নতি সম্বন্ধে সাহিত্যের উপযোগিতা লোকে যদি বুঝিতে পারে, তাহ হইলে পুস্তকালয়ের জন্য ২.০ শত টাকা ব্যয় অতিদরিদ্র গ্রামও সার্থক মনে করিবে। কিরূপে পুস্তকালয়টি নিরাপদ থাকিবে, কি করিলে গ্রন্থগুলি বিনষ্ট বা অপহৃত হইবে না, কিনিয়মে সকলে ঐ সকল গ্রন্থ লইয়া পড়িয়া ফিরাইয়া দিলে পুস্তকালয়ের অপচয় হইবে না, অথচ লোকের জ্ঞান-ভাণ্ডার বিস্তৃতি লাভ করিবে, পুস্তকালয়ের স্থাপয়িতাগণই তাহা অবধারণ করিবেন, সে বিষয়ে অধিক বাক্যব্যয় করিয়া সময় হরণ করা নিম্প্রয়োজন। সাহিত্য-চৰ্চার ফল কোন গণিতবিদ্যবিশারদ পণ্ডিত জিজ্ঞাস করিয়াছিলেন—“ হোমরের নামে সকলেই পাগল ; কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, হোমর কি প্রমাণ করিয়াছেন ? ” ইহার উত্তরে হীরম্ নামক একজন পণ্ডিত বলিয়াছেন “ হোমর যদি সমগ্র গ্রীকজাতির বন্ধন-রক্ষুস্বরূপ হইয় তাহাদিগকে মুখ, সমৃদ্ধি ও সভ্যতার দিকে অগ্রসর করিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি যথেষ্ট প্রমাণ করিয়াছেন” । আমাদের দেশের কোন পণ্ডিত কাব্যশাস্ত্রকে ভবরোগের মুখসেব্য ঔষধের সঙ্গে তুলনা করিয়াছেন। ধৰ্ম্মসাধন সাধারণ লোকের পক্ষে তিক্ত, কিন্তু কাব্যচর্চা করিলে সুমিষ্ট রস-উপভোগের বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ম, আষাঢ়, ১৩১৯ সঙ্গে সঙ্গে ধৰ্ম্মসাধন হইয়া যায়। পণ্ডিতের কাব্য সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন, সাধারণ সাহিত্য সম্বন্ধে সেই কথাই অধিকতর দৃঢ়তার সহিত বলা যাইতে পারে। এক গুরুর শিষ্য, এক দেবতার উপাসক, এক গ্রন্থের পাঠক প্রায় একই স্বভাব সম্পন্ন হইয়া থাকেন। তাঁহাদের চিন্তা, বাক্য এবং কাৰ্য্য প্রায় একই প্রকৃতির হইয়া থাকে, একই খাতে চলিয়া থাকে। ইংলণ্ডে যে সময়ে মধ্যযুগের অবসান হইয়৷ নবযুগের আরম্ভ হইল, বাইবেলের অনুবাদ পাঠ করিয়া ইংলণ্ডবাসী আবালবৃদ্ধ স্ত্রীপুরুষের ভাব, চিস্তা, আবেগ এবং আদর্শ একই প্রকৃতির হইয়া দাড়াইল, তখনকার অবস্থা বর্ণনা করিতে যাইয় ইতিহাস-লেখক বলিয়াছেন, "England became the land of a book and that book was the Bible." siis Is Norg তখন একখানি মাত্র গ্রন্থের প্রভাবে অভিভূত হইয়াছিল, সেই গ্ৰন্থখানি বাইবেলু। বান্তবিক মনুষ্যসমাজে সদগ্রন্থের প্রভাব যে কতদূর গভীর এবং কতদূর বিস্তৃত, বর্ণনায় কেহ তাহার ইয়ত্ত করিতে পারে না। যে জ্ঞানে জীব জগতের মধ্যে মানবের অব্যাহত প্রভুত্ব, সাহিত্য তাহার সেই জ্ঞান-ভাণ্ডার । যে দেশের সাহিত্য যত উন্নত এবং বিস্তৃত, আর যে দেশের লোক সেই সাহিত্যের প্রতি যত অনুরক্ত, জগতে সেই দেশ এবং সেই জাতি তত সুধী, তত উন্নত এবং তত প্রভাবশালী—এ, কথার সত্যতা প্রমাণ করিবার জন্য দূরে যাইবার প্রয়োজন হইবে না, এই ভারতবর্ষেই, আমাদের অতি নিকটেই, যাহাঁদের একটা সাহিত্য আছে, আর যাহাঁদের কোন প্রকার সাহিত্য নাই, এই উভয়ের মধ্যে প্রভেদ কি, চারিদিকে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৯৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।