১৯২ যুক্ত যন্ত্র করুন। মানুষকে মারিয়া পিটিয়া বা উপদেশ দিয়া ভাল করা যায় না, তাহার অনেক দৃষ্টান্ত আধুনিক শিক্ষাপ্রণালীতে এবং শিক্ষিতসমাজে প্রত্যক্ষ হইতেছে। মামুষের চরিত্রগঠন যন্ত্রের সাহায্যে বা বলের সাহায্যে হয় না ; অনুকূল ক্ষেত্রকে অমুকুল ঋতুতে উপযুক্ত রূপে কর্ষণ করিয়া তাহন্তে বীজ বপন করিলে যেমন রস-বাত-তাপাদির সহায়তায় আশামুরূপ শস্য জন্মে, সেইরূপ পল্লীগ্রাম এবং পল্লীসমাজকে আদর্শের অনুকূলভাবে প্রস্তুত করিয়া তাহার মধ্যে বালকবালিকাদিগকে ছাড়িয়া দিলে তাহারা সেই আদর্শের অনুরূপ ইবেই হইবে। আমার এ কথার কেহ উপহাস করিতেছেন কি না জানি না, কিন্তু আমার ধ্রুব বিশ্বাস, দেশে সাহিত্যের চর্চ বদ্ধিত করিলে, গ্রামে গ্রামে পুস্তকালয় স্থাপন, সদ্গ্রন্থের সংগ্ৰহ এবং তৎপাঠে সাধারণের আগ্রহ জন্মাইতে পারিলে আমাদের পল্লীর অবস্থা বাস্তবিকই নন্দনকাননের অনুরূপ হইবে, এবং তাঁহাতে যে সকল নরশিশু জাত ও প্রতিপালিত হইবে, তাহারা ভবিষ্যতে আপন আপন চরিত্রে নিশ্চয়ই দেবত্ব লাভ করিতে পরিবে । মহিলাদিগের সহায়ত এ পর্য্যন্ত যাহা বলা হইল, তাহা পুরুষদিগকে উপলক্ষ্য করিয়াই বলা হইরাচে। কিন্তু কেবল পুরুষদিগের দ্বারা এই মুমহৎ কাৰ্য্য সম্পাদিত হইতে পারে না । পুরুষের সভা-সমিতি স্থাপন করিতে পারেন, গ্রন্থ নিৰ্ব্বাচন করিতে পারেন, গ্রন্থ বিক্রয়ের ব্যবস্থা করিতে পারেন, চাদ দিয়া গ্রামে গ্রামে পুস্তকালয়ের প্রতিষ্ঠা করিতে পারেন ; কিন্তু শিশুকে শিক্ষা দিবার ভার, শিশুকে বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, আষাঢ়, ১৩১৯ আদর্শের অনুরূপ করিয়া গড়িয়া তুলিবাব ভীর রমণীদিগের হাতে। প্রাথমিক অবস্থা: জননীই শিশুর ধাত্রী, শিক্ষয়িত্রী এবং উপদেশদাত্রী। সেই সময়ে জননী যদি শিশুর শারীরিক, মানসিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক প্রকৃতির দিকে তুল্যরূপে দৃষ্টি রাখিয়া তাহাকে শিক্ষিত এবং গঠিত করিতে পারেন, তবেষ্ট একদিন শিশুর আদর্শচরিত্র লাভের সম্ভাবনা থাকে ; নতুবা প্রথম অবস্থায় ধরিয়াই যদি তিনি শিশুটির চরিত্রকে অণকাবাকা করির। কুৎসিতভাবে গড়িয়া ছাড়িয়া দেন, তাই তষ্টলে সে শিশুর পক্ষে সহস্ৰ চেষ্টাতেও আর সেই আদর্শের অনুরূপ সঙ্গজ, সরল, নিৰ্ম্মল, উন্নষ্ঠ চরিত্র লাভ করিবার সম্ভাবনা থাকে ন । কোন দেশের মানুষগুলি কিরূপ, সেই দেশের শিশুদিগের শিক্ষা-ব্যবস্থা দেখিলেই তাঙ্ক অনুমান করা যাইতে পারে। এই ব্যবস্থ বিশুদ্ধ করিতে হইলে সৰ্ব্বাগ্রেই রমণীদিগের সহানুভূতি এবং সাহচর্য্যের প্রয়োজন। এই সাহচৰ্য্য কেবল ইচ্ছা, যত্ন বা অনুরাগ থাকিলেই হয় না। শিশুর সৰ্ব্ববিধ শিক্ষায় কৃতিত্ব লাভ করিতে হইলে শারীরতত্ত্ব, মনস্তত্ত্ব, নীতিতত্ত্ব এবং অধ্যাত্মতত্ত্বে জ্ঞান থাক চাই। কিন্তু সে নিতান্ত সহজ কথ নহে । আমাদের সমাজের কথায় কাজ কি, যে সমাজে স্ত্রী-শিক্ষার বহুল বিস্তার হইয়াছে, সে সমাজেও অধিকাংশ গৃহে এরূপ জননীর নিতান্ত অভাব । সুখের বিষয়, আমাদের রামায়ণ এবং মহাভারত যেভাবে লিপিত, তাহাতে নীতিতত্ত্ব এবং অধ্যাত্মতত্ত্ব বৈজ্ঞানিক ভাবে অধ্যয়ন না করিলেও ঐ সকল গ্রন্থ কেবল কাব্যের মত পড়িয়া গেলেই নীতি তত্ব
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৯৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।