পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] যাহাঁকে “আমি” বলি, যাহাঁকে অপর মানুষে• তুমি বা তিনি বলে, এই অহং-প্রত্যয়বাচক বস্তুই আত্মবস্তু4 তাহাই স্বপ্রকাশ ও স্বপ্রতিষ্ঠ। এ বস্তু আপনি আপনার গতি-হেতু ও স্থিতিভূমি, হিন্দুর শাস্ত্রে, জীবান্তৰ্য্যামী এই আত্মবস্তুকেই নারায়ণ বলিয়াছেন। “জীবছদে জলে বসে সেই নারায়ণ ।” এই নারায়ণই ব্যষ্টিভাবে জীবান্তৰ্য্যামী—পরমায়। আর এই নারায়ণই, সমষ্টিভাবে, মহাবিষ্ণুরূপে, সমগ্র মানবসমাজেরও আত্মা। ম্যাট্‌সিনী যে বস্তুকে লক্ষ্য করিয়া “হিউম্যানিট ইজ এ বিইং” ( Humuity is a Being) ® **il afïûíô, সেই বস্তুকে প্রত্যক্ষ করিয়াই, হিন্দু সাধক মহাবিষ্ণু নাম দিয়াছেন। এই হিউম্যানিটীর ভাব বা আদর্শকে যুরোপের নিকট হইতে ধার করিয়া, বিশ্বমানব উপাধি দিয়া নিজেদের জাতীয় সাধনায় বা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত করিবার ’চেষ্টা করা হিন্দুর পক্ষে একান্তই অনাবশ্বক। - আমাদের মহাবিষ্ণুতে এই ভাবটী যেমন সুন্দররপে ফুটিয়া উঠিয়াছে, য়ুরোপের হিউম্যানিটীতে এখনো তেমন ফুটয় উঠে নাই কোথাও কোথাও খৃষ্টীয়-সাধনায় খৃষ্টেতে বরং এ ভাবটা ফুটিয়াছে। এই মহাবিষ্ণুই বিশ্ব-আত্মা। এই দেহ নারায়ণেরই কায়ব্যুহ। তিনিই হৃষীকেশ,—এই সকল জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কৰ্ম্মেন্দ্রিয়ের প্রতিষ্ঠা ও নিয়ন্ত । তিনিই আঁমাদের অন্তরস্থ পর-আত্মা বা পর

  • বঙ্কিমচন্দ্র আনন্দমঠে মাতৃ-মূৰ্ত্তি প্রদর্শন করিবার সময়ে মাকে মহাবিষ্ণুর অঙ্কে স্থাপন করিয়াছেন। ইহাই মার নিত্যমূৰ্ত্তি। মহাবিষ্ণুর অঙ্ক ইতেই মা ক্ৰমে জুগন্ধাত্রী, কালী, দুর্গ রূপে সমাজ-বিবৰ্ত্তনে প্রকাশিত হইয়া থাকেন। বুঙ্কিমচন্দ্রের মহাবিষ্ণুই যুরোপীয়দিগের হিউম্যানিটী । o

‘5ਜ਼ਿਲਿ >> মাত্মা,—বিজ্ঞান-চৈতন্তের আশ্রয় ও প্রতিষ্ঠা ! তিনিই কৰ্ম্মাধিপ,—দেহমনের সর্ববিধ চেষ্টার নিয়ামক ও ফলদাতা। আবার সমষ্টিভাবে, মহাবিষ্ণুরূপে, এই নারায়ণই সমাজ-দেহে বাস করিতেছেন। জনসমাজ এই মহাবিষ্ণুরই কায়ব্যুহ-স্বরূপ। তিনিই ধৰ্ম্মাবহ ও পাপমুদ সমাজ নিয়মেরতিনিই একমাত্র নিয়ন্ত সমাজবিবর্তনের তিনিই একমাত্র প্রবর্তক ও পরিচালক। ম্যাটসিনী যে হিউম্যানিটকে বিইং বলিয়াছেন, সেই তত্ত্বই বস্তুতঃ আমাদের শাস্ত্রোক্ত নারায়ণ বা মহাবিষ্ণু। আর আপনার ,সমাজকে হিন্দু এই সৰ্ব্বান্তৰ্য্যামী, এই সমাজস্তৰ্য্যাণী, এই বিশ্ব-আত্মা মহাবিষ্ণুর বহিঃপ্রকাশ ও কায়ব্যুহরূপে দেখেন বলিয়াই, তাহার নিকটে সমাজের আনুগত্য ও ধৰ্ম্মের আনুগত্য একই কথা হইয়াছে। হিন্দুসমাজতত্বে গতিশক্তির স্থান কিন্তু তাই রলিয়া হিন্দু যে কখনো আপনার সমাজের প্রাচীন ও প্রচলিত বিধি-ব্যবস্থার পরিবর্তন করিতে উদ্যত হন না, এবং এই সকল পরিবর্তন প্রবর্তিত করিবার সময় প্রচলিত সমাজ-বিধির আনুগত্য অস্বীকার করেন না, এমনে নয়। হিন্দুর চক্ষে সমাজটা দেহমাত্র, নারায়ণই এ দেহের প্রাণ। আর প্রাণের প্রয়োজনেই দেহ ; "দেহের প্রয়োজনে তো প্রাণ নয়। প্রাণ দেহের সঙ্গে যুক্ত থাকিয়াও, সৰ্ব্বদাই দেহ অপেক্ষ বড় হইয়া রহে । নারায়ণ সৰ্ব্বদাই সমাজ হইতে বড়। আর সমাজের রীতিনীতি যখন কালবশে নারায়ণের আত্মপ্রকাশের অনুপযোগী হইয়া, তার আত্মপ্রয়োজনেই, পরিবর্তনযোগ্য হইয়া উঠে, তখন তিনি স্বয়ং সাধুসঙ্গজনগণেতে আবিষ্ট বা