२०२ ফলাফলটা জানিয়া লইবার জন্য উৎসুক হইয়া একদিন সন্ন্যাসীকে জোর করিয়া ধরিয়া বসিল। সন্ন্যাসী অমুরুদ্ধ হইয়। একান্তভাবে তাহার জন্মকুণ্ডলী, কররোপ এবং ললাটফলক পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন ; ক্ষণমধ্যেই সন্ন্যাসীর প্রশান্ত মুখমণ্ডলআনন্দে প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল। সন্ন্যাসী হাসিয়া বলিলেন “অতিপ্রবল রাজযোগে তোমার জন্ম। ভারতবর্ষের একছত্র সম্রাট এইযোগে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। "তোমার জীবনে অতুল সম্পদ এবং অসীম উন্নতি অপরিহার্য্য।” ভূমিষ্ট হইয়। সন্ন্যাসীকে প্রণাম করিয়া অনুকূল বলিল “ভাগ্যোদয়ের স্বত্রপাত কবে হইতে ?” সন্ন্যাসী ধীরে ধীরে বলিলেন “চৌত্রিশ বর্ষ সাত মাস একুশ দিনে তোমার ভাগ্যরিস্ত। এই প্রবল উন্নতি আমরণ शंग्नौ श्रद ।” সপ্তাহান্তে সন্ন্যাসী গ্রাম ত্যাগ করিয়া গেলেন। নবোদ্যমে অমুকুল “শঙ্কুনিৰ্ম্মাণ” “সৰ্ব্বদেশীয় লগ্নমান আনয়ন” “রবিভুক্তি” “সপ্তশলাকা বিচার” গভূতি গভীর গবেষণায় চিত্ত সমর্পণ করিল। অনুকূলের সৌভাগ্যখ্যাতি দেখিতে দেখিতে গ্রাম মধ্যে প্রচারিত হইয়া গেল । যুবতীগণ দলে দলে আসিয়৷ অন্তরাল হইতে অনুকূলকে দেখিয়া চক্ষু পরিতৃপ্ত করিয়া গেলেন। বালিকারা আসিয়া তাহাকে মালা পরাইয় গেল। প্রবীণারা মুক্ত কণ্ঠে তাহার রূপগুণের প্রশংসা করিতে লাগিলেন। যুবকেরা তাহাকে বন্ধুভাবে পাইবার জন্য প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করিতে লঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, আষাঢ়, ১৩১৯ লাগিল। ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় তাহাকে জানাইয়া গেলেন যে তাহার জন্য নিতান্ত নিষ্কাম ভাবে তিনি আজ এক বৎসর কাল নারায়ণকে তুলসী দিয়া আসিঠেছেন এবং কবিরাজ মহাশয় উচ্চকণ্ঠে বলিয়া গেলেন যে তিনি যে এতদিন ধরিয়া বহু পরিশ্রমে ১০০ টাকা ভরির “ষড়গুণবলি জারিত মকরধ্বজ" কাহার জন্য প্রস্তুত করিয়৷ আসিতেছেন তাহ৷ এইবার গ্রামের অদুরদর্শী লোকেরা অচিরেই জানিতে পরিবে । এইরূপে চারিদিক হইতেই যখন অমুকুলের আসন্ন সৌভাগ্য স্বচিত হইতেছিল, সেই সেই সময়ে অনুকূল তাহার শ্বশুর মহাশয়ের নিকট হইতে এক পত্র পাইয়া ধৈর্য্য হীরাইল। অনুকুলের শ্বশুর মাখন লাল চক্রবৰ্ত্তি পুলিস বিভাগে দারগার কাজ করিতেন। সুতরাং মনুষ্য চরিত্র সম্বন্ধে তাহার একটা স্বভাবগত অনাস্থা জন্মিয়াছিল। জামাতার ভাবী সৌভাগ্যে প্রথম শ্রেণীর প্রধান দারগা সহসা আস্থা স্থাপন করিতে পারেন নাই। সেই জন্য তিনি র্তাহার অধীনস্থ একটি জমাদারের পদ শূন্ত হওয়ায় জামাতাকে লিখিয়াছিলেন যে র্তাহার বিবেচনার আপীততঃ অমুকুলের সেই পদটি গ্রহণ করা কর্তব্য। পুলিস বিভাগে তাহার যেরূপ প্রতিপত্তি আছে তাহাতে অমুকুল একবার এ কাযে প্রবেশ করিলে, অল্পদিনের মধ্যেই তিনি তাহাকে দারোগার পদে উন্নীত করিয়া দিতে পরিবেন। ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করিয়া এ বয়সে অলস ভাবে বসিয়া থাকা উচিত
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২০৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।