R.>ミ ইহার কিছু পূর্বেই সঙ্কোচের সহিত নিবেদনের প্রথমেই বলিয়াছেন—‘বালুক কঙ্করময় মরুভূমিতে স্থানে স্থানে ফোয়ার আছে, শিক্ষকের শুষ্ক জীবনেও মাঝে মাঝে ভাবের ফোয়ার থেলে ; এই ফোয়ারায় আধি ব্যাধি শোক তাপ ক্লিষ্ট সংসার-পথিকের একদণ্ডের তরেও কি শ্রাত্তি ক্লাস্তি দূর হইবে না ? গ্রন্থ সমালোচনায় প্রবৃত্ত হইবার পূর্বেই বলিয়। রাখি 'গ্রন্থকারের এই আশায় আশঙ্কার কোন কারণ নাই ! তার গ্রন্থপ্রকাশ সার্থক হইয়াছে। কথা উঠিতেছে, শিক্ষকের জীবন কি শুষ্ক ! ষে জীবন শত শত জীবনকে সরস করিয়া দেয়, তাহা কি শুষ্ক । হিন্দুর আদর্শ বল-বিধবা, যিনি গৃহের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, যিনি সংসারে বহু জীবনকে সুখ শান্তিময় করিয়া রাখেন সেই বিধবার পবিত্র জীবন কি শুষ্ক ? অন্যের পক্ষে যাহা সরস, নিজের পক্ষে তাহা সেরূপ না হওয়া কি অসম্ভব ? কিন্তু সে অনেক কথার কথা ! ইহা তর্কের বিষয় নহে, অনুভবের। শিক্ষকের জীবন অনেকটা হিন্দুর ঘরের বাল-বিধবারই মত, কিন্তু এ প্রসঙ্গ তুলিয়া, গ্রন্থের সমালোচনারূপ ‘টেকনিকালিটিতে মোকদ্দমা নষ্ট করিলে ত চলিবে না। ‘মেরিটে’ বিচার করিতে হুইবে । সুতরাং এ সকল প্রসঙ্গে আর কাজ নাই । মরুভূমে ওয়েসিস্ ছুটে, পাষাণে ফোয়ায় ফুটে, এ কথা খুব সত্য। উপস্থিত প্রমাণ ললিত বাবুর এই ফোয়ারা । ফোয়ারায় অধিকাংশষ্ট রসের উৎস, তাহার বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, আষাঢ়, ১৩১৯ ষোলটি ধারা। ঠিকই হইয়াছে, অন্নে ষোড়শ ব্যঞ্জন বড় তৃপ্তিকর। রমণীর বোড়শ বৎসর বড় মধুর, আবার ষোলকলা ভিন্ন সুধাকরের পূর্ণত ঘটে না। কিন্তু, হাতের পাচ অম্বুল সমান হয় না। ফোয়ারার ষোলটি রচনাই যে, সমান রসের ফোয়ারা তা বলিতে পারি না। বারাণসী-দর্শনে কবিতাটি এ গ্রন্থে দেওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না, বরং না দিলেই ছিল ভাল, ইহাতে রস নাই, বরং একটু কস আছে ; তবে গ্রন্থকার নিজেই বলিয়াছেন প্রাণীজগতের ন্যায় সাহিত্যজগতে অপত্যস্নেহ অন্ধ। ইহায় উপরে আর কথা চলে না। তারপর তীর্থদর্শন। লেখাটি বেশ, কিন্তু এ গ্রন্থে উহ। তেমন খাপ খায় নাই। আর বিরহ ? বিরহে লেখার নূতনত্ব আছে, মুন্সিয়ান আছে, ভাবুকত অাছে, কিন্তু এ গ্রন্থের পক্ষে বড় গুরুপাক। বাসরের মজলিসে “মনে কর শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর,” এ সঙ্গীত— হইলেনই বা বর বড় সুকণ্ঠ—বরের পক্ষে শোভন হয় না; এ ক্ষেত্রেও বিরহে সেই দোষ ঘটিয়াছে। আর বাকি তেরটি রচনা, সত্যই রসের ফোয়ার। এই রসের সঙ্গে আবার নানা মূল্যবান উপলখও আছে। এই সকল রচনায় লেখকের পাণ্ডিত্য, গবেষণা, বহুদর্শিত প্রভৃতি বহুগুণের সমাবেশ বেশ স্বচ্ছন্দভাবে মিশিয়া গেছে, অথচ বিদ্য জাহির করিবার লেশমাত্র চেষ্টা আছে বলিয়৷ কুত্রাপি মনে হয় না। ললিত বাবু বিদ্যা দেখাইয়াছেন, রত্নও দিয়াছেন, তাহার বিদ্যারত্ন উপাধি সার্থক । এই গ্রন্থের স্থানে স্থানে যে খুত নাই
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২১৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।