৪র্থ সংখ্যা ] করে। কিন্তু "প্রকৃত পক্ষে সুরেন্দ্রনাথ বীর পুরুষ নহেন। আমরা সচরাচর যাহাঁকে বীরত্ব বলি, তার অন্তরালে অনেক সময় একটা ফলাফল বিচার-বিরস্থিত একগুয়ামো লুকাইয়া থাকে। এই প্রকারের একগুয়ামো সুরেন্দ্রনাথের মধ্যে নাই ; থাকিলে, সুরেন্দ্রনাথ যে সফলতা লাভ করিয়াছেন, তাহা কখনই পাইতেন না। সুরেন্দ্রনাথ যে খুব সাহসী পুরুষ, এমনে বলা যায় না। যে অসমসাহসিকতা অসাধ্য সাধনের প্রয়াস করিয়া, সৰ্ব্বস্বাস্ত হইয়া, পরিণামে নিঃশেষ নিষ্ফলতা মাত্র লাভ করে, সুরেন্দ্রনাথের মধ্যে কখনো সেরূপ অসমসাহসিকতা দেখা যায় নাই। কিন্তু অবিচলিত ধৈৰ্য্য যে বীরত্বের লক্ষণ, আর নিন্দ-স্তুতি উভয়কে সমভাবে উপেক্ষা করিয়া আপনার অভীষ্টসিদ্ধির পথে চলিবার শক্তির ভিতরে যে সাহসিকতা লুকায়িত থাকে, সে বীরত্ব ও সে সাহস সুরেন্দ্রনাথের মধ্যে সৰ্ব্বদাই দেখা গিয়াছে। যে মনের বল থাকিলে লোকে বিরোধী শক্তির আঘাতে বরং ভাঙ্গিয়া যায় কিন্তু কখনোই তাহার নিকটে নত হয় না – এই আত্মঘাতী মানসিক বল সুরেন্দ্রনাথের কখনো ছিল না। কিন্তু যে মনের বল আপনার রুচি ও প্রবৃত্তি, মান ও অপমান, আয়াস ও শ্রমূরিশ, এ সকলকে অগ্রাহ করিয়া, সকল অবস্থাতেই, সেই অবস্থার সঙ্গে যথাসম্ভব সন্ধি ও সামঞ্জস্য সাধন করিয়া, আপনার লক্ষ্যের অনুসরণ করিতে পারে, সুরেন্দ্রনাথের সে মানসিক শক্তি যে পরিমাণে আছে, আমাদের আর কোনো লোকপ্রসিদ্ধ রাষ্ট্রীয়-নায়কের মধ্যে তাঁহা নাই। যে নিগুঢ় কৌশল-সহায়ে চরিত-চিত্র ২১৯ জীব বিবিধ বিরোধী অবস্থা ও ব্যবস্থার মধ্যে পড়িয়াও, প্রাকৃতিক নিৰ্ব্বাচনের নিয়মানুযায়ী, আত্মরক্ষীয় ও আত্মচরিতার্থতালাভে সমর্থ হয়, স্বরেন্দ্রনাথ অতি আশ্চৰ্য্যরূপে সে কৌশলট লাভ করিয়াছেন। . এই কৌশলট যে জীব লাভ করিতে পারে, সেই কেবল বিশ্বব্যাপী নিৰ্ম্মম জীবন-সংগ্রামে জয়লাভ করিয়া আত্মরক্ষা ও বংশরক্ষা করিতে পারে। এই কুশলতাগুণেই সুরেন্দ্রনাথও'জীবন-সংগ্রামের জয়টীকা ললাটে ধারণ করিয়া,ভারতের আধুনিক রাষ্ট্রর ইতিহাসে আপনার অক্ষয় কীৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করিতে পারিয়াছেন । সুরেন্দ্রনাথের রজ:প্রাধান্য স্বরেন্দ্রনাথের অন্তঃপ্রকৃতি যে খুব সাত্বিক তাহা নয়। নিৰ্ম্মলত্ব, ভাস্বরত্ব ও অনাময়ত্ব, এ সকলই সত্বের লক্ষণ। সাত্ত্বিক প্রকৃতির লোকের বুদ্ধি অতীন্দ্রিয় বস্তুধারণায় তৎপর হয় ; চিত্ত বিকারশূন্ত ও কৰ্ম্ম নিষ্কাম হয় । এ সকলের কোনো লক্ষণই এ পর্য্যস্ত সুরেন্দ্রনাথের চিস্তায় ও চরিত্রে প্রকাশিত হয় নাই। র্তার স্বদেশের সভ্যতা ও সাধনা, যুগযুগান্তব্যাপী তপস্তার ফলে, বহুদিন হইতেই সত্ত্বপ্রধান হইয়া আছে, সত্য। কিন্তু সুরেন্দ্রনাথ যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেন, সে কালে কৰ্ম্মবশে এই সমাজের পুরী ভ্যস্ত সত্ত্বিকতাও ঘোর তামসিকতার দ্বারা আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। সৰ্ব্বত্রই যুগসন্ধিকালে এইরূপ হইয়া থাকে। এইজন্য যে শিক্ষা ও সাধনায় এই সত্ত্বিকীভাব ফুটিয়া উঠে, স্বরেন্দ্রনাথ সে শিক্ষা দীক্ষা প্রাপ্ত হন নাই। স্বরেন্দ্রনাথের বাল্যকালে কলিকাতা ও তন্নিকটবৰ্ত্তী স্থানের
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২২৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।