পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] প্রকৃতিকে বিশেষভাবে সাত্ত্বিক, বা রাজসিক, বা তামসিক করিয়া তোলে, সেইরূপ ভিন্ন ভিন্ন জাতির প্রকৃতিতেও গুণ বিশেষের প্রাধান্ত ঘটয়া থাকে। কোনও জাত বা এই জন্য তামসিক, আর কেহ বা রাজসিক,আর কেহ বা সাত্ত্বিক প্রকৃতির হয়। কোনও জাতির সভ্যতা ও সাধন। রজঃ-প্রধান, আর কাহারও বা তমোপ্রধান, আর কোনও জাতির সভ্যতা ও সাধনা বা সত্ত্ব-প্রধান হইয়া থাকে। যুরোপের সভ্যতা ও সাধনী রজঃ-প্রধান । ভারতের সভ্যতা ও সাধনা সত্ত্ব-প্রধান। যুরোপের সাধনাতেও সত্ব রজঃ তমঃ এই তিন গুণেরই প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠা আছে। রজ:-প্রধান বলিয়া য়ুরোপীয় সাধনায় তামসিকতা নাই, বা সাত্ত্বিকতা ফুটে নাই, এমন নহে। জীব সাধন-বলে কখনও কখনও এই গুণত্রয়কে অতিক্রম করিয়া যাইতে পারে বটে,কিন্তু এরূপ মুক্তলোক সৰ্ব্বত্রই অতি বিরল। সাধারণ মানুষের ভিতরে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ সৰ্ব্বদাই এই গুণত্রয় বিদ্যমান থাকে। ভিন্ন ভিন্ন জাতির সাধনায় এবং সভ্যতায়ও সৰ্ব্বদাই এই তিন গুণ বিদ্যমান আছে । ভারতবর্ষেও অনেক তামসিক এবং রাজসিক লোক আছেন। ভারতের বহুমুখী সাধনায় রাজসিক এবং তামসিক উভয় প্রকৃতিরই যথাযোগ্য অনুশীলনেরও ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এ সকল সত্ত্বেও ভারতের সভ্যতার ও সাধনার ঝোক সাত্ত্বিকতারই দিকে। শুদ্ধ সাত্ত্বিক চরিত্রই আমাদের দেশের আদর্শ চরিত্র। যুরোপীয় সাধনার ঝোক রাজসিকতারই দিকে। এই জন্য রঞ্জিসিক চরিত্রইসে দেশের আদর্শ চরিত্র। মরেন্দ্রনাথ বাল্যাবধি য়ুরোপীয় সভ্যতা ও চরিত-চিত্র २२> সাধনার ঐকান্তিক প্রভাবের ভিতরে বাড়িয়া উঠিয়াছেন বলিয়া, এই যুরোপীয় আদর্শের রাজসিক চরিত্রই লাভ করিয়াছেন। আর সুরেন্দ্রনাথের প্রকৃতি ও চরিত্র শুদ্ধ সাত্ত্বিক নয়, কিন্তু একাস্তুই রাজসিক, ইহা কোনোই নিন্দার কথাও নহে। ফলতঃ প্রকৃত সাত্ত্বিক প্রকৃতির লোক এ সংসারে অত্যন্ত বিরল । অন্য দেশের তো কথাই নাই, আমাদিগের এই সত্ন-প্রধান সভ্যতা এবং সাধনাতেও বিশুদ্ধ সাত্বিক চরিত্র যেখানে সেখানে পাওয়া যায় না । সচরাচর লোকে যাহাকে সাত্ত্বিকতা বলিয়া মনে করে, অনেক সময় তাহ কেবল ঘোরতর তামসিকতারই রূপান্তর মাত্র। সত্ত্ব এবং তমঃ উভয়েরই কতকগুলি বাহিরের লক্ষণ এক প্রকারের বলিয়া অতি সহজেই এইরূপ ভ্রম হইয়া থাকে। সাত্ত্বিকতার বৃদ্ধিতে অনেক লোকের মধ্যে কখনও কখনও এমন একটা অবস্থা আসিয়া পড়ে, যাহাঁতে তাহাদিগকে সৰ্ব্বপ্রকারের বাহিরের কৰ্ম্মচেষ্ট হইতে বিরত করে। এই কৰ্ম্মচেষ্টtহীনতা তমোগুণেরও লক্ষণ । তবে এই সাত্ত্বিকী নিশ্চেষ্টতার অন্তরালে ভগবন্নির্ভর আর তামসিকী নিশ্চেষ্টতার অন্তরালে নিদ্ৰালস্ত্য প্রভূতি জড়গুণ বিদ্যমান থাকে । কিন্তু এ দু'য়ের প্রভেদ বুঝিতে না পারিয়া, লোকে অনেক সময় এই নিদ্রালস্য প্রভৃতি জড়ধৰ্ম্মসস্তুত নিশ্চেষ্টতাকেই সান্ধিকতার লক্ষণ বলিয়া ভ্রম করে। প্রত্যেক যুগসন্ধিকালে পূৰ্ব্বতন যুগের বিধিব্যবস্থা ও রীতি নীতি যখন লোকের একান্ত অভ্যস্ত হইয়াতমেধিৰ্ম্মক্রান্ত হয়, তখন, সত্ত্ব-প্রধান সমাজেও, এই জাল সাত্বিকতার প্রভাব অত্যন্তই বাড়িয়া