२२९ উঠে। এই জাল সাত্ত্বিকতাতেই আমাদের দেশটা এখন ছাইয়া ফেলিয়াছে। এ অবস্থায় লোক-সমাজে পুনরায় সত্য সাত্ত্বিকতার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করিতে হইলে, জনগণের অন্তরস্থিত রজোগুণকেই আগে বাড়াইয়া তোলা আবশ্যক হয়। স্বরেন্দ্রনাথ আচরণ ও উপদেশের দ্বারা আপনার দীর্ঘ কৰ্ম্মজীবনে এই যুগপ্রয়োজন সাধন করিয়ই আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাসে এরূপ অক্ষয় কীৰ্ত্তি অর্জন করিতে পারিয়াছেন। স্বরেন্দ্রনাথ যখন রাষ্ট্রীয় কৰ্ম্মক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়াছিলেন তখন যদি তিনি লোকচক্ষে কোনো উচ্চ সাত্ত্বিকী অাদর্শ ধরিতে যাইতেন, তাছা হইলে তাহাতে দেশব্যাপী তামসিকতারই প্রভাব বাড়িয়া যাইত, প্রকৃত সাত্ত্বিকতা লোকচরিত্রে কখনই প্রতিষ্ঠা লাভ করিতে পারিত না । দেশের কল্যাণের জন্য সে সময় রজোগুণের প্রেরণারই বিশেষ প্রয়োজন ছিল। আর সমাজপ্রকৃতির এই অন্তঃপ্রয়োজনের অনুরোধে সে সময়ে সৰ্ব্ব প্রকারের লোকচিতৱতই বিশেষ ভাবে রজোধৰ্ম্মাক্রান্ত হইয়াছিল । সুরেন্দ্রনাথ ধৰ্ম্মসংস্কারক নহেন। স্বদেশের ধৰ্ম্মজীবনে শক্তিসঞ্চার করিবার জন্য বিধাতা তাহীকে ডাকেন নাই। সামাঙ্গিক, এবং বিশেষভাবে রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থার সংস্কার সাধনব্রতেই ভগবান ব্রাহীকে বরণ করিয়াছেন। কিন্তু র্তাহার সমসাময়িক ধৰ্ম্মসংস্কারকগণ ও তখন দেশের ধৰ্ম্মজীবনের মধ্যে একটা প্রবল রাজসিক ভাবই জগাইয়াতুলিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। সে সময়ে এইরূপ চেষ্টারই প্রয়োজন এবং তাঁহাই অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। অতএব কালধৰ্ম্মবশেই স্বরেন্দ্রনাথের প্রকৃতি বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, শ্রাবণ, ১৩১৯ ও চরিত্র রাজসিক হইয়াছে। এরূপ ন হইলে তিনি যে কাজ করিয়াছেন, তাহী কথনই করিতে পারিতেন না । লোভ, প্রবৃত্তি, আরম্ভ, অশম ও স্পৃহা এই সকলই রাজসিকতার প্রধান লক্ষণ। ধনমানদি লাভ হইতে আরম্ভ করিলে, তাহা উত্তরোত্তর আরও অধিক পরিমাণে লাভ হউক, এই যে অভিলাষ তাহাঁরই নাম লোভ । পরদ্র ব্যাদিতে যে লালসা তাহাকেও লোভ বলে বটে, কিন্তু সে লোভ নিরতিশয় নিকৃষ্ট বস্তু, অতি নিম্ন অধিকারের ধৰ্ম্মও এই লোভকে প্রশ্রয় দেয় না। এই লোভ রাজসিক বস্তু নহে। কিন্তু ধৰ্ম্মামুমোদিত উপায়ে উত্তরোত্তর ধনমানাদি বুদ্ধি করিবার যে আকাজ, তাহাই রজোগুণের লক্ষণ । নিয়ত কৰ্ম্ম করিবার যে ইচ্ছ, তাহারই নাম প্রবৃত্তি। কোনো বিযয় বা প্রতিষ্ঠানকে গড়িয়া তুলিবার যে উদ্যম, তাহাই আরম্ভ। ইহা করিয়া, পরে উই৷ করিব, এইরূপ সংকল্প-বিকল্পত্মিক যে বুদ্ধি, তাহাই আশম । সৰ্ব্বপ্রকারের সীমান্য বস্তুতে যে তৃষ্ণ তাহাই স্পৃহা। এই লোভ, প্রবৃত্তি, আরম্ভ, অশম ও স্পৃহা, শাস্ত্রে এই সকলকেই রঙ্গোলক্ষণ বলিয়াছেন। সুরেন্দ্রনাথের মধ্যে এই সকল লক্ষণগুলিই বেশ ফুটিয়া উঠিয়াছে। আর এই সকলের দ্বারাই তার প্রকৃতির রজোপ্রাধান্ত প্রমাণিত হয়। এই রাজসিকতাই স্বরেন্দ্রনাথের জীবনের ও চরিত্রের একদিকে বলের ও অন্যদিকে দুৰ্ব্বলতার হেতু হইয়া আছে। তার ভাল ও মদ, উৎকর্য ও অপকর্ষ, উভয়ই এই রাজসিক প্রকৃতি হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। আপনার কৰ্ম্মজীবনের প্রারম্ভেই সুরেন্দ্র
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২২৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।