পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२8 প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। কিন্তু পূৰ্ব্বজন্মের স্বরুতিবলেই হউক, আর অহেতুকী ভাগবতীকৃপাগুণেই হউক, সুরেন্দ্রনাথ আপনার কৰ্ম্মজীবনের ভিতর দিয়াই যে এক প্রকারের যোগসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন, ইহাও একেবারে অস্বীকার করা যায় না। সুরেন্দ্রনাথ রাগদ্বেষবিমুক্ত করাগী পুরুষ নহেন । পুত্ৰদারগৃহাদিতে তাঁর আসক্তি নাই এবং এ সকলের ইষ্টানিষ্টলালে তাবু চিত্ত বিচলিত হয় না, এমনও নহে। প্রত্যুত তার মত প্রতিশীল পতি ও সস্তানবৎসল পিতা আমাদের দেশেও সৰ্ব্বদা সৰ্ব্বত্র দেখা যায় না। কিন্তু র্তাহার কৰ্ম্মজীবনের আহবানে, নলিনীদলগত জলবিন্দুর ন্যায়, এই সকল স্নেহমমতার আসক্তি র্তাহার চিত্ত হইতে সৰ্ব্বদাই অনায়াসে ঝরিয়া পড়িতে দেখিয়াছি। প্রথম জীবনে নবীন পুত্ৰশোক এবং শেষ জীবনে নিদারুণ পত্নীবিয়োগ, এ সকলের কিছুতেই ক্ষণকালের জন্যও র্তাহার স্বাদেশিক কৰ্ম্মচেষ্টার কোনোই ব্যাঘাত জন্মাইতে পারে নাই। ভারত-সভার প্রতিষ্ঠা-দিনে স্বরেন্দ্রনাথের পুত্র-বিয়োগ হয় । বন্ধুগণ যখন র্তাহাকে সভাস্থলে আসিবার জন্য ডাকিতে যান, তখন সুরেন্দ্রনাথ নিদারুণ পুত্রশোকে অধীর হইয়া, ছিন্নমূল কদলীর ন্যায়, ধূলায় লুষ্ঠিত হইতেছিলেন । কিন্তু ভারতসভার প্রতিষ্ঠার জন্য সভাস্থলে তাহার উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন হইয়াছে শুনিয়া, সেই শোকাহত স্বরেন্দ্রনাথ তখনই শোকবেগ সংবরণ করিয়া, চক্ষের জল ও অঙ্গের ধূলি মুছিয়া, উঠিয় দাড়াইলেন । এইরূপ ধৈৰ্য্য ও ংযমপূৰ্ব্বজন্মলন্ধযোগশক্তির প্রভাবেই প্রাকৃত জনে সম্ভব হয়। আবার বিগত কংগ্রেসের বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ম, শ্রাবণ, ১৩১৯ প্রাক্কালে, এই বৃদ্ধ বয়সে, পলীবিয়োগবিধুর স্বরেন্দ্রনাথ এক দিনের জন্যও যে আপনার দৈনন্দিন কৰ্ম্ম হইতে অবসর গ্রহণ করেন নাই ইহা দেখিয়াও র্তাহাকে মুক্তপুরুষ বলিয়াই মনে হয়। এই মুক্তভাব সাধনালব্ধ নহে, কিন্তু সহজসিদ্ধ । ইহাই তাহার কৰ্ম্মজীবনের মূলস্বত্র। আর সেই কৰ্ম্মজীবনে তিনি যে অনন্যসাধারণ প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছেন, এই সহজসিদ্ধ মুক্তভাবই তাহার নিগৃঢ় হেতু । এই মুক্তভাব আছে বলিয়াই, স্বরেন্দ্রনাথ কখনও অতীতের নিষ্ফলতার স্মৃতিকে ধরিয়া ভূতলে পড়িয়া থাকেন নাই। ইহার জন্যই তিনি নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও কখনো আত্মহারা হ’ন নাই। আর এই জন্যই সময়ে সময়ে অশেষ প্রকারের নিন্দ ও অপবাদের ভাগী হইয়াও, সুরেন্দ্রনাথ কখনই আপনার অভীষ্ট কৰ্ম্মপথ পরিত্যাগ করেন নাই। স্বরেন্দ্রনাথ জনপ্রিয় লোকনায়ক হইয়াও কোনো দিনই লোক-নিন্দার হাত এড়াইতে পারেন নাই। বরং সময়ে সময়ে তিনি এতটাই লোক-নিন্দার ভাগী হইয়াছেন যে, অন্য লোকে সেই অপবাদ মাথায় লইয়৷ আবার কখনও লোক-নেতৃত্বের দাবী করিতে সাহস পাইত কি ন সন্দেহ। রাজকৰ্ম্ম হইতে অপস্থত হইয়া, নিতান্ত বিপন্ন হইয় পড়িলে যে বিদ্যাসাগর তাহাকে অযাচিত আশ্রয়দান করিয়াছিলেন, সুরেন্দ্রনাথ যখন সেই বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটন কালেজের প্রতিদ্বন্দ্বী সিটি কালেজে কৰ্ম্ম গ্রহণ করেন এবং অল্পদিন মধ্যে আপনি সেই মেট্রোপলিটন কলেজের আর একট প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী, রিপণ কলেজের, প্রতিষ্ঠা করেন