る。 লাভ করিতে পারে না। আর দৈবকৃপায় সুরেন্দ্রনাথের কৰ্ম্মজীবনে এই যোগাযোগ ঘটিয়াছিল বলিয়াই তিনি এতটা সফলতা লাভ করিতে পারিয়াছেন। সুরেন্দ্রনাথ আজি পর্য্যন্তও তার স্বদেশের প্রাণবস্তুর সংস্পর্শ লাভ করিতে পারিয়াছেন কি না সন্দেহ । র্তার কৰ্ম্মজীবনের প্রথমে যে তিনি এই প্রাণস্রোতের একান্ত বাহিরে পড়িয়াছিলেন, ইহা অস্বীকার করা অসম্ভব। কিন্তু তার সমসাময়িক ইংরেজিশিক্ষিত স্বদেশবাসিগণের সকলেরই এই অবস্থা ছিল। সেকালে ইংরেজিশিক্ষিত বাগালীগণ ইংরেজিতেই কথাবার্তা ও পত্রব্যবহার করিতেন, ইংরেজি ধরণেই চিন্ত৷ করিতেন, ইংরেজি সাহিত্যের অলঙ্কারাদি অবলম্বনেই নিজেদের ভাবাঙ্গসাধনের চেষ্টা করিতেন। ইংরেজসমাজের আদর্শে নিজেদের সমাজকে এবং ইংলণ্ডের রাষ্ট্ৰতন্ত্রের অনুযায়ী আপনাদের রাষ্ট্রীয় জীবনকে গড়িয়া তুলিবার জন্য ইহারা সকলেই স্বল্পবিস্তর লীলায়িত ছিলেন। এই অবস্থায় যে মুরেন্দ্রনাথের ইংরেজি-শব্দ-সম্পদ-পুষ্ট, ইংরেজিঅলঙ্কার-ভূষিত, ইংরেজি ভাবে অনুপ্রাণিত, য়ুরোপীয় ইতিহাসের দৃষ্টাস্তে উদ্দীপিত বাগিতা র্তাহার স্বদেশের ইংরেজিশিক্ষিত সম্প্রদায়ের প্রাণকে মাতাইয়া তুলিয়াছিল, ইহা কিছুই ৰিচিত্র নহে । ইংরাজি-শিক্ষা, স্বাধীনচিস্তা ও ব্যক্তিত্বাভিমান ইংরেজিশিক্ষা এদেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের প্রাণে একটা প্রবল ব্যক্তিত্বাভিমান জাগাইতেছিল। অষ্টাদশ ও উনবিংশ খৃষ্ট শতাব্দীৰ য়ুরোপীয় সাধন এই ব্যক্তিত্বাভিমানকেই সত্য স্বাধীনতার আদর্শ বলিয়া গ্রহণ বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, শ্রাবণ, ১৩১৯ করিয়াছিল, প্রাচীন যুগের যুরোপীয় সাধনা এই ব্যক্তিত্ববোধ—ইংরেজিতে যাহাকে sense of personality Ital–Sta. FfHi ফুটিয়া উঠে নাই । গ্রীসীয় সাধনা জনসমাজকে অঙ্গীরূপে এবং সেই সমাজান্তর্গত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে অঙ্গরূপেই দেখিয়াছিল। অঙ্গীকে ছাড়িয়া যেমন অঙ্গের কোনই সার্থকতা নাই ও থাকা সস্তবে না, সেইরূপ সমাজকে ছাড়িয়াও সমাজান্তর্গত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির কোনো স্বতন্ত্র সার্থকতা যে আছে বা থাকিতে পারে, গ্রীসীয় সাধনায় এই জ্ঞান পরিস্ফুট হয় নাই। সুতরাং গ্রীসে যে সকল ব্যক্তি সমাজ জীবনের পরিপুষ্টসাধনে একান্ত অসমর্থ হইত, তাঙ্গদিগের বাচিয়া থাকারও কোনো প্রয়োজন ছিল না । সমাজের ঐকাস্তিক আনুগত্যই সে দেশে প্রত্যেক ব্যক্তির একমাত্র ধৰ্ম্ম বলিয়া পরিগণিত হইত । যেমন গ্রীসে সেইরূপ প্রাচীন ইহুদায়ও কোনো প্রকারের ব্যক্তিত্ববোধ জাগিতে পায় নাই । ইহুদীয় সাধন জনসমাজের সমষ্টিগত সার্থকতাই উপলব্ধি করিয়াছিল। ব্যষ্টিভাবে সমাজের অন্তর্গত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিরও যে একটা নিজস্ব লক্ষ্য ও সার্থকতা আছে, এই জ্ঞান ইহুদী চিন্তাতে ভাল করিয়া ফুটয় উঠে নাই। প্রথম যুগের খৃষ্টীয় সাধনা এক দিকে ইহুদীয় এবং অন্যদিকে গ্রীসীয় ও রোমক সাধনার উপরেই প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং রোমক ব্যবহার-তত্ত্বের প্রভাবে এই নূতন খৃষ্টীয় সাধনায় কিয়ৎ-পরিমাণে পাপ পুণ্যের দণ্ড-পুরস্কারসম্বন্ধে একটা ব্যক্তিত্ব বোধ জাগিলেও বহুদিন পর্য্যন্ত প্রকৃত ব্যক্তিত্ব-মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। ইহুদীয় সমাজতন্ত্র এবং গ্রীসীয় ও রোমক রাষ্ট্ৰতন্ত্রের
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।