৪র্থ সংখ্যা ] যে একান্তই প্রয়োজন ছিল, কিছুতেই এ কথা অস্বীকার করা যায় না। পূৰ্ব্বসংস্কারবর্জিত না হইলে কেহ এ জগতে সত্যের সাধনা করিতে পারে না। এই সংস্করবর্জনের নামই চিত্তশুদ্ধি। কি ব্যক্তি কি সমাজ উভয়েরই আত্মচরিতার্থতালাভের জন্য এই চিত্তশুদ্ধির অবশ্যক হয়। ‘নেতি’র ভিতর দিয়াই ‘ইতি’তে যাইতে হয়। ব্যতিরেক পন্থার পরেই অস্বয়ী পন্থীর প্রতিষ্ঠা । ইহাই আমাদিগের প্রাচীন বেদান্তের শিক্ষা। ইংরেজ মনীষী কালাইল, Through Eternal Nay to Eternal Yea, এই সূত্রে আমাদের এই প্রাচীন উপদেশেরই পুনরাবৃত্তি করিয়াছেন । সমাজের সকল অযৌক্তিক বন্ধন ছেদন করিতে উদ্যত হইয়া, ধৰ্ম্মের শাস্ত্রবদ্ধ সকল অনুশাসন অগ্রহ করিয়া, কেবল আপনার ব্যক্তিগত বিচারবুদ্ধি ও ংজ্ঞানের উপরে দাড়াইতে যাইয়া, আমাদিগের দেশের আধুনিক শিক্ষা-প্রাপ্ত সম্প্রদায় এই নেতি বা “না”-এর পথ ধরিয়াই, নিজেদের ও সমাজের চিত্তশুদ্ধিসাধনের চেষ্টা করিয়াছিলেন। আধুনিক বাঙালী শিক্ষিত সমাজ যেরূপ আগ্রহ সহকারে যতটা স্বার্থভ্যাগ স্বীকার করিয়া এই নৃত্তন ধৰ্ম্ম ও সমাজসংস্কারের পথ ধরিয়া চলিয়াছিলেন, ভারতের আর কোনো প্রদেশের লোকে সেরূপ বরেন নাই । আর এই সাধনবলেই আধুনিক স্বাধীনতার আদর্শ বাংলাদেশে যতটা ফুটিয়া উঠিয়ছে ভারতের আর কোথাও সেরূপ ফুটিয়া উঠে নাই । বাংলার স্বাধীনতার ও স্বদেশ চৰ্য্যার আদর্শ ফলতঃ যে যাহাই বলুন না কেম বাংলার নিকট হইতেই যে ভারতের অপরাপর প্রদেশবাসিগণ বহুল পরিমাণে এই আধুনিক চরিত-চিত্র ২৩১ স্বাধীনতার ও স্বদেশচর্য্যার উদ্দীপনা লাভ কৰিয়াছেন, ইহা অস্বীকার করা যায় না । সমগ্র ভারত যখন নিদ্রিত, কেবল বাংলাই তখন জাগিয়া উঠিয়াছিল । ব্রিটিশ ভারতের অন্ত কোন প্রদেশে যখন ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার সঞ্চার হয় নাই, বাঙালী তখনও এই মুক্তিমন্ত্রসাধনে নিযুক্ত ছিল । আর এই জন্তই বাংলার স্বাধীনতার আদর্শের পূর্ণতা ই সজীবুত বাঙালীর স্বাদেশিকতার ধৰ্ম্মপ্রাণত ও একনিষ্ঠা এবং বাংলার রাষ্টীয় জীবনের শক্তি ও শুদ্ধতা, এ সকল এ পর্য্যন্ত ভারতের অন্য কোন প্রদেশে দেখা যায় নাই । অন্যান্য প্রদেশের ধৰ্ম্মসংস্কার-চেষ্টা একদিকে নূতনকেও নিঃসঙ্কোচে আলিঙ্গন করিতে সমর্থ হয় নাই এবং অন্যদিকে পুরাতনের সনাতন প্রাণ-বস্তুকে অবলম্বন করিয়া তাহাকেও সজীব ও সময়োপযোগী করিয়া তুলিতে পারে নাই। কিন্তু নূতনের কুযুক্তি এবং পুরাতনের কুসংস্কারের মধ্যে একটা খিচুড়ী পাকাইবারই চেষ্টা করিয়াছে । সমাজ-সংস্করচেষ্টাতেও অন্যান্য প্রদেশে এইরূপ অসঙ্গতিদোষ দেদীপ্যমান বুহিয়াছে । সমাজ-সংস্কর করিতে যাইয়া বাংলা আপনার বিচার-বুদ্ধির অনুযায়ী শুদ্ধ শ্ৰেয়ের পথই ধরিতে চাহিয়াছে, প্রেয়ের পথে চলিবার জন্য ব্যস্ত হয় নাই, কিন্তু অন্যান্য প্রদেশের সমাজ সংস্কারের চেষ্টাতে ন্যায়ের প্রেরণ অপেক্ষা সুপের প্রলোভনই বলবত্তর ইহ আছে। সত্যের আনুগত্য অপেক্ষা সুবিধার অস্বেযণই তাহাতে বেশী। অন্যান্য প্রদেশের রাষ্ট্ৰীয় চেষ্টার মধ্যেও এখনও পর্য্যন্ত একটা সঙ্কীর্ণ প্রাদেশিকত বিদ্যমান
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।