পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8र्श #२१] ] সমাজজীবনের সকল অঙ্গকেই অধিকার করিয়ছিল সত্য। একদিকে যেমন ধৰ্ম্মের তত্ত্বাঙ্গ ও সাধনাঙ্গ, উভয় অঙ্গকেই তিনি সুশোভিত ও বুদ"ত করিয়া, প্রাচীন ঋষিপন্থ অবলম্বনেই তাহাঁকে সত্যেপেত ও সময়োপযোগী করিয়া তুলিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, সেইরূপ অন্যদিকে সমাজজীবনেও যে সকল অহিত্যচার পুঞ্জীকৃত হইয়া উঠিয়াছিল, তাহারও সংস্কারসাধনে সময়োচিত যত্ন করিতে ক্রট করেন নাই। আর দেশের রাষ্ট্রীয় জীবনেও যাহতে প্রজাসাধারণের স্বত্ব-স্বাধীনতার সম্প্রসারণ হয়, রাজা রামমোহন সে দিকেও যথাযোগ্য যত্ন করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহার কৰ্ম্মজীবনের এই ব্যাপকতা ও বহুমুখীনতা সত্ত্বেও রামমোহন বিশেষভাবে ধৰ্ম্মসংস্কারক বলিয়াই প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন । কোনও একাত্ত ধৰ্ম্মপ্রাণ সমাজে কোনও নূতন আদর্শের প্রতিষ্ঠা করিতে হইলে সৰ্ব্বাদে তাঙ্গকে ধৰ্ম্মের ভিতর দিয়াই ফুটাইয়া তুলিতে হয়, নতুবা সে আদর্শ সে সমাজের মৰ্ম্মকে স্পর্শ করিতে পারে না । এই জন্য রাজ রামমোহন নবযুগের সৰ্ব্বাঙ্গীন আদর্শের সাক্ষাৎকার লাভ করিলেও তাঁহার কৰ্ম্মের বেীক যে ধৰ্ম্মের সংস্কারকার্য্যের উপরেই বেশি পড়িয়াছিল, ইহা কিছুই আশ্চৰ্য্য নহে। রাজার স্বাধীনতার আদর্শ স্বাধীনতাই রাজা রামমোহনের শিক্ষা ও সাধনার মূল মন্ত্র ছিল। ধৰ্ম্মের তত্ত্বাঙ্গে ও সাধনাঙ্গে এই দুই দিকেই রাজা বিশেষভাবে এই স্বাধীনতার আদর্শকে গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু একদিক দিয়া অষ্টদশ শতাব্দীর রোপীয় সাধনার স্বাধীনতার আদর্শের সঙ্গে চরিত-চিত্র ২৩৩ রাজার আদর্শের যোগ ও মিল থাকিলেও, ইহা সৰ্ব্বতোভাবেই সেই আদর্শ অপেক্ষ শ্ৰেষ্ঠতর ও পূর্ণতর ছিল। আর স্বদেশের সনাতন সভ্যতা ও সাধনার সঙ্গে রাজার যে গভীর আধ্যাত্মিক যোগ ছিল, তাহাই তাহার স্বাধীনতার আদর্শের এই শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণ। রাজা বৈদান্তিক সাধনের একান্ত পক্ষপাতী ছিলেন। এইজন্য বৈদাস্তিক মুক্তির আদর্শের সঙ্গে রাজা রামমোহনের স্বাধীনতার আদর্শের অতি নিগূঢ় যোগ ছিল। বেদান্ত মার্গ অবলম্বন করিয়া, ইদং প্রত্যয়বাচক সৰ্ব্ববিধ অনাত্ম-বস্তুর ঐকাস্তিক অধীনত হইতে, অহং প্রত্যয় বাচক আয়ু বস্তুকে মুক্ত করাই রাজা রামমোহনের শিক্ষা ও সাধনার মূলমন্ত্র ছিল। র্তাহীর ধৰ্ম্মের শিক্ষা ও সামাজিক শিক্ষা সকলই এই আদর্শের অনুযায়ী ছিল। রাজার বহুমুখী সাধনার প্রত্যেক ও সকল বিভাগের সঙ্গেই একটা অতি গভীর ও ঘনিষ্ঠ মোক্ষসম্পর্ক ছিল। আর এই মোক্ষ-সম্বন্ধই রাজার আদর্শকে আধুনিক যুরোপীয় সাধনার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের আদর্শ হইতে পৃথকৃ করিয়া রাশিয়াছে। রাজার দেশ-প্রচলিত কৰ্ম্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ তাঙ্গর এই বৈদাস্তিক আদর্শের উপরেষ্ট প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। কিন্তু বেদান্ত সিদ্ধান্তের একান্ত পক্ষপাতী হইয়াও রাজা সম্পূর্ণরূপে শঙ্কর বেদান্তের মায়াবাদ গ্রহণ করেন নাই। অন্তদিকে বৈষ্ণব সিদ্ধান্তের সগুণ ব্রহ্মবাদকেও একান্তভাবে গ্রহণ করেন নাই । কিন্তু শঙ্কর সিদ্ধান্ত ও রামমুক্ত সিদ্ধাস্তের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য স্থাপনের চেষ্টা করিয়া, ভারতের প্রাচীন ঋষিপন্থার সঙ্গে আধুনিক যুরোপের