পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা] নাই । সুতরাং এই আশ্ৰমধৰ্ম্মই প্রাচীন হিন্দু সাধনার সমাজতত্ত্বের বিশেষত্ব। কিন্তু কালক্রমে এই বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্মও যখন সামাজিক উন্নতি ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সহায় না হইয়৷ তাহার অন্তরায়ই হইয়া উঠিতে লাগিল, যখন ব্রাহ্মণ ব্ৰহ্ম-স্বভাবসুলভ সত্ত্বগুণ, ক্ষত্রিয় ক্ষত্রপ্রকৃতিসুলভ রজোগুণ হারাষ্টয়াও কেবল জন্মের দোহাই দিয়াই ব্রাহ্মণত্বের বা ক্ষত্ৰিয়ত্বের অধিকার ও মর্যাদা দাবী করিতে লাগিলেন, তখন সমাজের ও ব্যক্তির উভয়ের কল্যাণার্থে প্রাচীন কুলধৰ্ম্মকে অতিক্রম रुब्राझे यांवथुक श्ध्न डॉठंश ।। ७झे ख्छझे গীতায় ভগবান প্রথমে বর্ণাশ্রমের সম্পূর্ণ সমর্থন করিয়াও শেষে, গুহাদপি গৃহ্যতম যে ধৰ্ম্মতত্ত্ব তাহার অভিব্যক্তি করিয়া বলিলেন — সৰ্ব্বধৰ্ম্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ। অহং ত্বাং সৰ্ব্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচ ॥ অতএব বর্ণাশ্রমপ্রধান হিন্দুর সমাজতত্ত্বেও সৰ্ব্বকৰ্ম্মন্যাসপূর্বক, মহাজন-পন্থ। অবলম্বন করিয়া, এই বর্ণাশ্রমের অধিকার অতিক্রম করিবারও প্রশস্ত পথ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে । আর ইহাই প্রকৃত পক্ষে হিন্দুর সমাজতত্বের ও সমাজনীতির শেষ শিক্ষা ও শ্রেষ্ঠতম সিদ্ধান্ত । রাজা এই সিদ্ধান্তের উপরেই আপনার সামাজিক সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা করিয়া ইহার সঙ্গে আধুনিক যুরোপীয় সাধমার শ্রেষ্ঠতম ও উচ্চতম সামাজিক সিদ্ধান্তের সঙ্গতি সাধন করিয়াছিলেন। কৰ্ম্মসাধনই সামাজিক জীবনের উপজীব্য কৰ্ম্মের ভিতর দিয়া ব্ৰহ্মকে লাভ করাই, সমাজজীবনের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য লাভের জন্ত প্রথমে ঐকান্তিক সমাজামুগত্য, তৎপরে সমাজের চরিত-চিত্র ২৩৫ এই আনুগত্য স্বীকার করিয়াও ভগবানে সমাজবিধি-নির্দিষ্ট সৰ্ব্বপ্রকারের কৰ্ম্মাপণ, তার পরে মহাজনপদ আশ্রয় করিয়া এই সমাজামুগত্য বর্জন ও নিষ্কাম কৰ্ম্মযোগ সাধন,—এই ত্রিপাদেতে হিন্দুর কৰ্ম্মসিদ্ধান্ত পূর্ণত প্রাপ্ত হইয়াছে। কিন্তু মধ্য-যুগের হিন্দুয়ানী নিষ্কাম কৰ্ম্ম বলিতে ঐহিক ও পারলৌকিক সৰ্ব্ববিধ ফলভোগ বাসন পরিত্যাগ করিয়া, লোক ংগ্ৰহাৰ্থে বর্ণাশ্রম-বিহিত কৰ্ম্মানুষ্ঠানই বুঝিয়া আসিয়াছে। এখনও অনেকৈ নিষ্কাম কৰ্ম্ম বলিতে ইহাই বুঝেন। রামমোহন মধ্যযুগের হিন্দুয়ানীর আশ্রম-বিরহিত সুতরাং ধৰ্ম্মহীন বর্ণভেদের উপরে প্রতিষ্ঠিত কৰ্ম্মজীবনের সংস্কার সাধনার্থে, প্রাচীন ঋষিপন্থা অবলম্বন করিয়াই, লোক-শ্রেয়কে একমাত্র প্রকৃত নিষ্কাম কৰ্ম্ম বলিয়া ব্যাখ্যা করেন। এইরূপে তিনি প্রাচীন হিন্দু কৰ্ম্মতত্ত্বকে একদিকে সত্যোপেত ও বস্তুতন্ত্র এবং অন্যদিকে সত্যভাবে স্বদেশী ও সাৰ্ব্বজনীন করিয়া তুলিবার চেষ্টা করেন। কি তত্ত্ববিচারে ও ধৰ্ম্মসাধনে কিম্ব সামাজিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠায় ও সমাজ সংস্কারে, রামমোহন কোনো বিষয়েই আপনাকে স্বদেশের শাস্ত্র ও সাধন, সংস্কার ও সিদ্ধান্ত হইতে একান্ত ভাবে বিচ্ছিন্ন করেন নাই। কিন্তু এই উন্নত, উদার, একই সঙ্গে স্বদেশী ও সাৰ্ব্বজনীন যুগ-আদর্শ সাধনের যোগাত। এবং অধিকার তখনে দেশের লোকের জন্মায় নাই। রাজ আদর্শটাই দেখাইয়া দেন, কিন্তু সেই আদর্শ যেরূপ ক্ষেত্রে সাধন করিয়া আয়ত্ত করা সম্ভব, তখনও সে অমুকুল ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠা হয় নাই । আর একদিক দিয়া কেশবচন্দ্র এবং অন্যদিকে সুরেন্দ্রনাথ এই অমুকুল ক্ষেত্র গঠনের বিশেষ সাহায্য করিয়াছেন । (ক্রমশ) শ্রীবিপিনচন্দ্র পাল ।