মিলন * প্রিয়তম, তাজ ছেলেবেলার একটা খেলা মনে পড়িয়াছে। তোমার সঙ্গে কতদিন সে খেলা করিয়াছি । আজি এস সেই খেলা খেলি, আজ তুমি আর ইহলোকে নাই— কিন্তু আমি মনে করিব যেন তুমি বাচিয়৷ আছ, আর আমি তোমাকে প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় পত্র লিপিব—যেন তুমি পড়িবে। কেন জান ?—এ সংসারে আমার দুঃখের কথা বলি—এমন কেহ নাই , তুমি বাচিয়া থাকিতেষ্ট বা আমাদের আপনার বfলবার কে ছিল ? প্রিয়তম, যখন বরের ধারে দাড়াইয়া, কফিনের উপর তোমার নাম পড়িলাম, তখনও আমি দে ভীষণ সত্য সম্পূর্ণ ধারণা করিতে পারি নাই ! আমার সমস্ত হৃদয় যেন অসা গু হইয়। গিয়াছিল—আমি যেন সমস্ত অনুভব-শক্তি হারাইয়াছিলাম-- শোক, দুঃখ কিছুই মনে আসিতেছিল ন । পাদরী যখন গম্ভীর স্বরে মন্ত্র পড়িতেছিলেন তখন আমি তার হাতের দিকে চাহিয়৷ ছিলাম এবং গত গরমেও যে কেন তিনি গরম দস্তানা পড়িয়াছেন—তাই ভাবিতেছিলাম। আমি ভাবিতেছিলাম--তুমি বলিতে যে পাদরী সাহেবের মুখ খান যেন ছাকড় গাড়ীর ঘোড়ার মত। তুলনাটা মনে করিয়৷ হাসি আসিতেছিল। পাশে দেখি তোমার পিসি চোখ রগড়াইয়। রগড়াইয়া অনেক চেষ্টার পর এক ফোটা জল বাহির • ইংরাজী হইতে অনুদিত। 8 করিয়া চারিদিকে দেখিতেছিলেন—কেহ র্তার চোখের জল দেখিল কি না । তখন আমার বেশ একটু আমোদ বোধ হইতেছিল। আমার মনে হইতেছিল যেন আমি একটা মজার স্বপ্ন দেখিতেছি ঘুম ভাঙ্গিলে দেখিল জানােলা দিয়া রোদ আসিতেছে তুমি পাশেই শুইয়া আছ— তোমাকে জাগাইয়ী স্বপ্নেক কথা বলিয়৷ দু’জনে খুব হাসিব । হঠাৎ মাটি পড়ার শব্দে আমার চমক ভাঙ্গিল—সব কথা মনে পড়িয়া গেল—হ জগদীশ্বর ! তবে ইহা স্বপ্ন নয়—সব সত্য ! অ।মি আর থাকিতে পারিলাম না—তোমার পাশ্বে যাইবার জন্য ছুটিয়া বাইতেছিলাম— কে আমার হাত ধরিল । চাহিয়৷ দেখিলাম তোমার ভগিনী ইদা – সে পাশে দাড়াইয়া কঁাদিতেছিল। সকলেই কঁদিতেছে! আর আমি, আমি হতভাগিনী —যে তোমাকে জীবনে প্রাণ ভরিয়া ভাল বাসিয়াছে,-- আমার পোড়া চোখে এক ফোটা জল নাই ! আর যারা কাদিতেছে তার কি তোমাকে আমার মত ভাল বাসিত ! কাতরকণ্ঠে ইদাকে বলিলাম, "আমাকে ছাড়,—আমি আর ঘরে ফিরিব না - আমি আমার প্রিয়তমকে ছাড়িয়া থাকিতে পারিব না ! আজি তিন বৎসর আমাদের বিবাহ হইয়াছে—এক দিনও সে আমাকে ছাড়িয়া থাকে নাই—আজি সে একলা কেমন করিয়া থাকিবে । তাহারই পাশে আমার স্থান ।”
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।