জগন্নাথের “নবকলেবর” এবার জগন্নাথের নবকলেবর হইবে, পাণ্ডার “নবযৌবন” কথাটাও ব্যবহার করেন। জগন্নাথের আবার নবকলেবর ও নবযৌবন -কথাটা আমাদের বিদেশীয়ভাবে অভ্যস্ত কাণে অত্যন্তই বাজে। যিনি ত্রিকাল তীত, নিত্যও নিরাময়, তার আবার নকলেবর ও নবযৌবন কি ? একদিন ভাবিতাম হিন্দু বুঝি তার কৰ্ম্ম-কাণ্ডের এ সকল বালকত্ব কিছুষ্ট বোঝে ন । কিন্তু জগন্নাথের যে কোনো ভৌতিক দেহ নাই, সুতরাং সে দেহের উৎপত্তি-লয়াদি যে অসম্ভব, এ সকল কথা কোন হিন্দু না জানে ? অার এ সকল কথা অমল ভাল করিয়া জানে ও বোঝে বলিয়াই হিন্দু নানা মূৰ্বর এবং নানা বিগ্রহের পূণ অর্চন করিয়াও, প্রকৃত পক্ষে কখনই সাকারবাদী বা জড়োপাসক হয় না। হিন্দুর দেবতা আর সে দেবতার মূৰ্ত্তি এক নহে। নিনের আত্মবস্তুকে হিন্দু অতি প্রাচীন কাল হইতেই দেহ হষ্টতে পৃথ" ‘বলিয়া জানিয়াছিল। আর তার নিজের দেহ যেমন তার আত্মা নয়, কিন্তু আত্মা হইতে ভিন্ন, দেহের রোগশোক উৎপত্তি বিনাশ প্রভূতিতে সেই আত্মাকে স্পর্শ করে না ; সেইরূপ তার দেবতার যে মূৰ্ত্তি নিজের হাতে হিন্দু গড়িয়া তোলে, যে মূৰ্ত্তি বা বিগ্ৰহং যে প্রকৃত দেবতা নয়, এ কথাও হিন্দু বেণই জানে। আর এ কথা জানে বলিয়াই, হিন্দুর ধৰ্ম্মে মূৰ্ত্তি-পূজা, কোনও কোনও সিদ্ধান্তে, নিকৃষ্ট বলিয়। পরিগণিত হইলেও, কখনও পাপ বলিয়া নিষিদ্ধ হয় নাই। ইহুদীয়, মেহম্মদীয় ও খৃষ্টীয় ধৰ্ম্মে মূৰ্ত্তিপূজা মহাপাপ। ইহার কারণ এই যে অতি প্রাচীনকালে, ইহুদীয় ও আরব প্রভৃতি জাতির সাধনাতে, মানুষের আত্মা যে তার দেহ হইতে স্বতন্ত্র এ জ্ঞান ফুটিয়া উঠে নাই। . হিন্দু চিরদিনই তাঁর আত্মাকে নিত্য ও দেহকে অনিত্য, অহংবস্তুকে অবিনাশী ও দেহাদি যাবতীয় ইদংবস্তুকে নশ্বর বলিয়া জানে। সুতরাং দেহের পরিণামে আত্মার যে কোন প্রকারের পরিবর্তন হয় না, এ বিশ্বাস তার মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে গাথিয়া আছে । র্তার দেবতা জড় নহেন, অজড় ; অনাত্মা নহেন আত্মা। র্তার নিজের আত্মা যেমন কৰ্ম্মবশে বিদেহী হইয়াও দেহ ধারণ করে, হিন্দুর দেবতাও সেইরূপ অমূৰ্ত্ত হইয়াও সাধকের হিতার্থে, সাধনার সাহায্য করিবার জন্য, মূৰ্ত্তিতে অধ্যাসিত হইয়া থাকেন। কিন্তু দেবতা নিজে সেই মূৰ্ত্তি নহেন। সুতরাং মূৰ্ত্তি জলে ভাসাইয়া, শ্মশানে ফেলিয়া, আগুণে পোড়াইয়াও, হিন্দু আপনার দেব তাকে নষ্ট করিল, এমন কল্পনা করে না । বরং মোহবশে কখনো কখনো তার নিজদেহে আত্মবোধ জন্মে বটে, কিন্তু কদাপি তার দেবতার মূৰ্ত্তিতে নিষ্ঠাবান হিন্দুর কখনও দেবত-জ্ঞান জন্মে না । এই জ্ঞান বা অজ্ঞান কখনো জন্মে না বলিয়াই, জগন্নাথের নবকলেবর বা নব
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৫২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।