পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] 'চরিত-চিত্র ১৭ সংসারের বিবিধ সম্বন্ধসকলের কোনো নিত্য · রস-স্বরূপ যে পূৰ্ণব্ৰহ্ম তাহারই নিপিলরসামৃত লক্ষ্য বা পারমার্থিক প্রতিষ্ঠা নাই। সুতরাং প্রচলিত শঙ্কর-ট্রিদ্ধান্তে সমাজ-ধর্ম ও সামাজিক উন্নতি-অবনতি, সকলই অতি নিচের কথা ; সাধনার্থীর নিকটে ইহার মূল্য থাকিলেও, সিদ্ধ পুরুষের নিকটে কোনো সত্য, কোনো মূল্যই নাই। ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম, পাপপুণ্য প্রভৃতির ব্যবহারিক সত্য ও সার্থকতা আছে 'মাত্র ; পারমর্থিক সত্য ও সার্থকতা নাই। অতএব দেহশুদ্ধি বা ভূতশুদ্ধি, ইন্দ্ৰিয়সংযম, মনঃসংযম, উপরতি, তিতিক্ষ, এ সকল সাধনসম্পংলাভের জন্য উপযোগী অভ্যাসের ক্ষেত্র বলিয়াই সংসার প্রয়োজনীয়। সাধনসম্পং লাভ ইয়া ক্রমে বিবেক-বৈরাগ্যাদি ও সৰ্ব্বশেষে ব্রহ্ময়ৈকত্বমুভূতি বা কৈবল্যসিদ্ধি হইলে, সৰ্পের থেলিস যেমন আপনা হইতেই, অনাবশ্বক বলিয়, তাহার গাত্র হইতে খসিয় পড়ে, সেইরূপ : “জীবের সংসার ও তাহার যাবতীয় সামাজিক সম্বন্ধাদিও তাছার মন হইতে আপনি খসিয়া পড়িয়া যায়। কিন্তু কেবল মায়াবাদীর নিকটেই যে সংসারের সম্বন্ধসকল অনিত্য, ও অনিত্য বলিয়াই পারমার্থিক দৃষ্টিতে অলীক, তাহা নহে। কোনো হিন্দুসিদ্ধান্তেই এ সকলের অনিত্যত অস্বীকৃত হয় নাই। র্যার মায়বাদী নহেন, তারাও এগুলিকে নিত্য বা সত্য বলেন না । সুতরাং এ সকল ক্ষণস্থায়ী সম্বন্ধের অতীত হইবার চেষ্ট সকল সাধনেই আছে। তবে মায়াবাদী এ সকলের পশ্চাতে কোনো স্থায়ী রস প্রত্যক্ষ করেন না। আর যার মায়াবাদী নহেন, তারা সংসরের সৰ্ব্ববিধ অনিত্য সম্বন্ধের মধ্যেও কতকগুলি স্থায়ী রসের প্রতিষ্ঠা করেন, এবং এই সকল রসকে সিন্ধুর উপরিস্থ তরঙ্গভঙ্গ বলিয়া গ্রহণ করেন। এ সংসারে পিতাপুত্রের যে কায়িক সম্বন্ধ তাঁহ প্রত্যক্ষতঃই অনিত্য। প্রাকৃতজনে যে বাৎসল্যরস আস্বাদন করে তাহাও অস্থায়ী, সন্তানের জন্মের সঙ্গে তাহার উৎপত্তি হয়, আর সন্তান গত হইবার পরে সচরাচর তাহ ক্ষীণ হইয়া, দীর্ঘকাল পরে, লুপ্তপ্রায় হয় কিন্তু এই সম্বন্ধের পশ্চাতে একটা স্থায় বাংসল্যরস আছে। এই স্থায়ী রসই, দেশকাল ধীন এই সংসারে লৌকিক পিতামাতার সঙ্গে পুত্ৰকস্তার যে সম্বন্ধ, তাহারই মধ্য দিয় আত্মপ্রকাশ করিতেছে। এ রস ভগবৎ প্রকৃতির অন্তর্গত, সুতরাং পারমার্থিক ও নিত্য । সংসারের বিভিন্ন সম্বন্ধ এই স্থায় ভাগবতীলীলা-রসকে আশ্রয় করিয়া প্রকাশিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সকল সম্বন্ধের অন্তরালে, শাস্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর এই পঞ্চ স্থায়ী রস বিদ্যমান রহিয়াছে । আর এই জন্ত, এই পঞ্চ স্থায়ী রসের প্রকাশ ও আলম্বন বলিয়া, সংসারেরও একটা পারমার্থিক সত্য ও মাহাত্ম্য, মৰ্য্যাদা ও মূল্য আছে। জীব ও সংসার অত্যন্ত অনিত্য নহে, অত্যন্ত নিত্যও নহে ; কিন্তু নিতানত মিশ্ৰিত ইহাকে পরিণামী নিত্য বলা যায়। আর পরিণামী নিত্য বলিয়াই, এই সংসার ভাগবতী-লীলার আশ্রয় হইয়া আছে . এই লীলা-প্রয়োজনেই মনুষ্যসমাজ মহাবিষ্ণু বা নারায়ণের কায়ব্যুহ হইয়াছে। কিন্তু ব্ৰহ্মস্বরূপের আত্মচরিতার্থতার জন্যই, সেই অদ্বৈত-স্বরূপেরই মধ্যে, যে একটা দ্বৈত-সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হয়, যে দ্বৈতসম্বন্ধ বা ভেদাভেদকে অবলম্বন করিয়াই