পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্য। ] এক কথায়, মানুষকে সামাজিক ও রাষ্টিক জড়তার দিকে লইয়া যায়। কিন্তু আমার বোধ হয়, শাক্যমুনির প্রকৃত উপদেশের প্রতি লক্ষ্য করিলে, এইরূপ দোষারোপের কোন ভিত্তি থাকে না । জ্বলন্ত উৎসাহপূর্ণ করুণ সদয় বুদ্ধ, যতটা সস্তব, মানুষের দুঃখ নিবৃত্তি করিতে ইচ্ছুক হইয়াছিলেন। সৰ্ব্বপ্রথমে তিনি পার্থিব সুখসম্ভোগকে আক্রমণ করিলেন । তিনি দেখাইলেন, এই সকল সুখ অতীব অসার। তাহার পর, যে অহংবুদ্ধি আমাদিগকে জীবনের প্রতি আসক্ত করে ও আমাদের অন্তরে ভবতৃষ্ণার উদ্রেক করে, সেই অহংবুদ্ধিকে মানৰঅন্তর হইতে উন্মলিত করিতে চেষ্ট৷ করিলেন। এই উদ্দেশ্য সাধন করিবার জন্য, তিনি যোনি-ভ্রমণবাদের আশয় গ্রহণ করিলেন, এবং সকলকে এই আশ্বাস দিলেন যে, যে ব্যক্তি নিৰ্ব্বাণের অনুসরণ করিবে সেই চরম মুক্তি বা মোক্ষলাভে সমর্থ হইবে। এক কথায়, তিনি মনুষ্যের হৃদয় হইতে সুখের অভাব-বোধ ষ্টিরোহিত করিয়া, মানুষকে পার্থিব সুখ হইতে বিযুক্ত করিয়াছেন। মানসিক ও সামাজিক উন্নতির উচ্ছেদ হউক ব৷ যাহাই হউক, তিনি মানুষের পরম কল্যাণ সাধন করিয়াছেন। ইহার দ্বারা কি দীনহীন দুঃাপীড়িত মানষমণ্ডলীর পরম কল্যাণ সাধিত হয় নাই ? তিনি যখন কারিগরদিগকে, শূদ্রদিগকে, দীনদরিদ্রদিগকে, অপশ্যদিগকে আপনার নিকট আহবান করিয়াছিলেন, ধৰ্ম্মপ্রচারকালে তখন এই সকল নিয়শ্রেণীর লোকদিগের কথাই থিওসফি ও বৌদ্ধধৰ্ম্ম ২৬৯ তাহার মনে হইয়াছিল, উচ্চশ্রেণীর কথা মনে হয় নাই ৷ পক্ষান্তরে, আমরা যাহাকে উন্নতি বলি, সভ্যত বলি, তাহাতে অবশ্য মানুষের জ্ঞানসম্পদ বৰ্দ্ধিত হইতে পারে, কিন্তু সে একপ্রকার ভৌতিক জ্ঞান, আধ্যাত্মিক জ্ঞান নহে। উদাম প্রবৃত্তি-সমূহ দমন করা দূরে থাকুক, তথাকথিত উন্নতি এমন-সব নূতন অভাবের হৃষ্ট করে, যাহা কখনই পূরণ হইতে পারে না। পাশ্চাত্য সভ্যতা মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি, মানুষের হৃদয়-ভাব, মানুষের অভাবসমূহ পরিপুষ্ট ও পরিবৰ্দ্ধিত করিয়া, মানুষকে অতি সূক্ষ্মচেত। করিয়৷ দিয়া, সেই সঙ্গে তাহার দুঃখবোধও তীব্র করিয়া তুলে । আমাদের যেরূপ ভৌতিক বা বৈষয়িক সভ্যতা, তাহাতে দারুণ জীবনসংগ্রামের উদ্ভব হয়। দীনহীল দরিদ্র ও দুৰ্ব্বলের প্রতি দারুণ নিৰ্দ্দয় এই যে সত্যত, ইহা সামাজিক সংগ্রাম-উৎপাদনকারীর সহিত মূলধনীয় বিরোধ, পররাজ্যের সহিত যুদ্ধ, পরদেশাত্ৰমণ প্রবৃত্তি এই সমস্ত উত্তেজন করে। এই সমস্ত আয়াসের বিনিময়ে মানুষ পায় কি ?—ততটুকু শিক্ষা পায় ষাতাতে করিয়া মানুষ তাহার অবস্থার হীনতামাত্র অনুভব করিতে পারে এবং সেই বিলাসমুখের অস্বাদ পায় যাহা তাহাকে কখনই পূর্ণমাত্রায় তৃপ্তি দিতে পারে না। প্রকৃত কথা, বাসনাহীন প্রশান্ত ধ্যানাত্মক বৌদ্ধজীবন-সেই জালাময়, অত্যুত্তপ্ত পাশ্চাত্য মানব-জীবন অপেক্ষ fক বাঞ্ছনীয় নহে, যে জীবন ভৌতিক সভ্যতার ভীষণ আবর্তে পড়িয়া সতত বিক্ষুব্ধ