পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] মধ্যযুগের হিন্দুস্থানী লৌকিকাচারকে যে এমন করিয়া ধৰ্ম্মের আসনে “ বসাইতে চাহিয়াছে, শঙ্কর-বোন্তের সঙ্গে ইহার অতিশয় ঘনিষ্ঠ যোগ আছে বলিয়া মনে হয়। আর আজিও হিন্দুসমাজের সকল সম্প্রদায়মধ্যেই শঙ্কর সিদ্ধাস্তের প্রভাব, প্রত্যক্ষভাবেই হউক আর প্রচ্ছন্নভাবেই হউক, নিরতিশয় প্রবল রহিয়াছে বলিয়াই, আমাদের শ্রেষ্ঠতম মনীষীগণও লৌকিকাচারের আনুগত্য পরিত্যাগ করিতে এত ভয় পাইয়া থাকেন। গুরুদাস বাবুর লৌকিকাচারের ঐকান্তিক আনুগত্যের অন্তরালেও শঙ্কর-বেদান্তের প্রভাব স্বম্পষ্টই লক্ষিত হইয়া থাকে।

  • লৌকিকাচারকে কেবল মধ্যযুগের হিন্দুয়ানীই যে ধর্মের আসনে বসাইয়াছে, তাহ নহে। বৰ্ত্তমান কালে কোনো কোনো যুরোপীয় সিদ্ধান্তেও তার প্রায় অনুরূপ মর্য্যাদাই প্রতিষ্ঠিত “হইয়াছে। অষ্টাদশ খৃষ্টশতাব্দীর যুরোপীয় চিন্তা, অতিপ্রাকৃত শাস্ত্রপ্রামাণ্য বর্জন করিয়া ও সমাজ-স্থিতিরক্ষার্থে একটা বিজ্ঞানসন্মত, যুক্তিপ্রতিষ্ঠ মরালিটার বা ধৰ্ম্মনীতির আশ্রয় গ্রহণ করিতে যাইয়া, ফলতঃ লৌকিকাচারকেই ধর্শ্বের আসনে বসাইয়াছে। প্রত্যক্ষবাদী কোমত-সিদ্ধান্তেও আমাদেরই শঙ্কর-বেদান্তের স্থায়, সমাজ-বিবৰ্ত্তনে সমাজের গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তির মধ্যে একটা সঙ্গতি ও সামঞ্জস্য রক্ষা করিবার জন্ত, এই লৌকিকচারই প্রত্যক্ষ ধৰ্ম্ম বলিয়া গৃহীত হইয়াছে। কোমূত,সিদ্ধাস্ত-বাদিগণ, ইংরেজিতে যাহাদিগকে পজিটিভিষ্ট, (Positivist) সম্প্রদায় বলে,—একদিকে যেমন সামাজিক উন্নতির জঙ্ক লালায়িত, সেইরূপ অন্যদিকে সমাজের

চরিত-চিত্র ১৯ স্থিতিভঙ্গ-নিবারণের জন্যও একান্ত ব্যঞ্জ হইয়া থাকেন। র্তারী কিছুতেই, কাৰ্য্যত:, সমাজের প্রচলিত বিধিব্যবস্থা ও রীতিনীতির প্রভাব নষ্ট করিতে প্রস্তুত নহেন । র্তাহীদের নিকটেও সমাজই ধৰ্ম্মের কায়ব্যুৎস্বরূপ। ক্যাথলিক খৃষ্টীয়মণ্ডলী মধ্যে চার্চ বা রোমক-কৃষ্টীয় সঙ্ঘ যে মৰ্যাদা প্রাপ্ত হয়, ধর্মের বহিঃপ্রকাশবলিয়া সকলে যেরূপ এই চার্চের বা সঙ্গের আয়ুগত্য স্বীকার করিয়া চলে, প্রত্যক্ষবাদী কোমত মতাবলম্বিগণ মধ্যে সমাজ সেইরূপ মৰ্য্যাদাই প্রাপ্ত হয়, এবং সমাজের আনুগত্য মানিয়া চল, কোমত মতে নিতান্তই নীতিসঙ্গত বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। কোমতমতের সঙ্গে মধ্যযুগের হিন্দুস্থানীর এই সমাজামুগত্য বা লৌকিকাচারানুগত্যের একটা যে ঐক্য আছে, বাঙালী হিন্দুদিগের মধ্যে যারা কোমত মত গ্রহণ করিয়াছিলেন,তাহাজের শিক্ষায় ও চরিত্রে তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে। খিদিরপুরের জমিদার, স্বৰ্গীয় যোগীন্দ্রচন্দ্র ঘোষ, ন্যাশন পত্রের সুযোগ্য সম্পাদক স্বৰ্গীয় নগেন্দ্রনাথঘোষ,ইহঁরা দু’জনেই কোমতমতাবলম্বী ছিলেন। নগেন্দ্রনাথ ঘোষ মহাশয় জীবনের শেষভাগে এই মত পরিত্যাগ করিয়াছিলেন কি না,জানি না। যোগীন্ত্রচক্র, ঘোষ মহাশয় যে পরিত্যাগ করেন নাই, ইহা সকলেই জানেন। আর এরা দু’জনই একদিকে ঘোরতর প্রত্যক্ষবাদী ও যুক্তিবাদী হইয়াও হিন্দুসমাজের রীতিনীতি ও সংস্কারাদির ঐকান্তিক আনুগত্য গ্রহণ করিতে কদাপি কুষ্ঠিত হন নাই। ইংরেজ কোমত বাগিণ মধ্যে স্যার হেনরী কটন প্রভৃতি প্রায় সকলেই হিন্দুর এই লৌকিকাচারের আয়ুগত্যকে