ఇది বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, বৈশাখ, ১৩১৯ কখনই ভাঙ্গিয়া দিতে চান নাই ; বরং সৰ্ব্বদাই অনেক বিষয়েই ভারতের প্রাচীন সমাজ তাহাকে সঙ্গত বলিয়াই সমর্থন করিয়াছেন । ইহারা পারলৌকিক ধৰ্ম্মের দিক্ দিয়া হিন্দু রীতিনীতির পোষকতা করেন নাই। সে ধৰ্ম্মে তাদের আদৌ বিশ্বাস ছিল না । কেবল শুদ্ধ সমাজের কল্যাণকামনায়, সমাজস্থিতিরক্ষার্থে, সমাজনীতি বা মরালিটর দিকৃ দিরাই এ সকলের সমর্থন করিতেন। গুরুদাস বাবু কোমতমতুবলী নহেন। কিন্তু সমাজনীতিসম্বন্ধে গুরুদাস বাবুর লৌকিকচারের ঐকাস্তিক আনুগত্য যে কোমত মতের দ্বারা সমর্থিত হইয়া, আধুনিক যুরোপীয় নীতিবিজ্ঞানের সঙ্গে ইহার একটা সঙ্গতিসাধনে যে র্তাহার বিশেষ সাহায্য করিয়াছে, ইতাও অস্বীকার করা যায় না। তাঁরই জন্য গুরুদাস বাবুর আধুনিক শিক্ষা এবং সাধনাও র্তার চরিত্রগত মধ্যযুগের হিন্দুয়ানীর ঐকান্তিক লৌকিকচারানুগত্যকে নষ্ট করিতে পারে নাই। গুরুদাস বাবুর এই রক্ষণশীলতার আরো একটা বিশেষ কারণ আছে। গুরুদাস বাবু একদিকে যুরোপের আধুনিক সাধনা ও অন্তদিকে স্বদেশের সনাতন সাধনার উভয়েরই মূল প্রকৃতিটা ভাল করিয়াই ধরিয়াছেন। এই कुछ्रे সাধন ও সভ্যতার মধ্যে যে বিশাল বৈষম্য আছে, ইঙ্গাও তিনি জানেন । আর যেমন প্রত্যেক ব্যক্তির, সেইরূপ প্রত্যেক সমাজের ধৰ্ম্মও যে সৰ্ব্বদাই তার ভিতরকার মূল প্রকৃতি হইতে, সেই প্রকৃতিকে অবলম্বন করিয়াই প্রকাশিত ও প্রতিষ্ঠিত হইয়া থাকে,এবং এই জন্য কি ব্যক্তির পক্ষে কি সমাজের পক্ষে, সকলেরই পক্ষে যে পরধৰ্ম্ম ভয়াবহ হয়,ইহা ও তিনি বিশ্বাস করেন । আমাদের সমাজসংস্কারপ্রয়াস, যে প্রকৃতিকে উপেক্ষা করিয়া, য়ুরোপের রীতিনীতির স্বল্পবিস্তর অনুকরণচেষ্ট্রীয় চলিয়ছে, ইহাও তিনি দেখিতেছেন। যুরোপ যে পথে যাইয়া, অসংযত বিষয়-ভোগলালসার বিক্ষিপ্ত হইয়া, আপনার জীবনসমস্যাকে বিষম জটিল করিয়া তুলিতেছে, নূতন নূতন পন্থার অনুসরণ করিয়া, সমাজের বুকে সমস্যার উপরে সমস্যাই স্ত,পাকার করিয়া তুলিতেছে, একটারও সমীচিন মীমাংসা করিতে পারিতেছে না, কখনো পরিবে কি না, তাহারও স্থিরতা নাই ; গুরুদাস বাবু এ সকলই জানেন। আর আমরা যে সমাজের হিতেচ্ছ, হইয়া, এ সকল না বুঝিয়া, সংস্কারের নামে, অনেক সময়, নিজেদের সমাজের উপরে এই ভয়াবহ পর বোঝা চাপাইয়া দিতেছি, ইহাও তিনি প্রত্যক্ষ করিতেছেন। আর এই জন্যই অজ্ঞাত ও অপরিক্ষিত পন্থীয় সমাজকে ' চালাইবার পূৰ্ব্বে, সে পথ সমাজের অন্তঃপ্রকৃতির অনুযায়ী হইবে কি না, ইহা দেখিলার জন্যই, তিনি সৰ্ব্বদা এই লৌকিকচারের মুখাপেক্ষী হইয়া চলিতে চাহেন। কারণ, কি ব্যক্তি কি সমাজ উভয়ই সৰ্ব্বদা আপনার প্রকৃতিকেই প্রাপ্ত হয়। ইহাকেই আধুনিক জীবতত্ত্বে বা বায়লজিতে, প্রাকৃতিক নিৰ্ব্বাচনের নিয়ম কহে । এই নিয়মাধীন হইয়াই, সামাজিক রীতিনীতি ও বিধিব্যবস্থারও বিকাশ এবং প্রতিষ্ঠা হইয়া থাকে। কদাপি যে এ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে না, এমন নহে। কিন্তু যেখানেই ব্যতিক্রম ঘটে, সেখানেই সমাজ পরধৰ্ম্মবশে আত্মাহারা হইয়া, বিপ্লবমুখী ও বিনাশোয়খ হইয় উঠে । গুরুদাস বাবুর ধৰ্ম্মের
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।