৩২০ করিয়াছেন, ধৰ্ম্মকৰ্ম্মে বা ধৰ্ম্মসাধনে এই প্রকৃতির কোনও অঙ্গকে উপেক্ষা করিতে বা চাপিয়া রাখিতে চান নাই। মানুষের জড়দেহ আছে। মরণ পর্যন্ত এই জড়দেহের সঙ্গে তার অতিশয় ঘনিষ্ঠ যোগ থাকে। এই দেহকে আশ্রয় করিয়া তার মন, মনকে আশ্রয় করিয়া তার বুদ্ধি, বৃদ্ধিকে আশ্রয় করিয়া, দেহী অবস্থায়, মানুষ যাহকে আত্মস্থলে সে বস্তু বাস করে। এই আত্মবস্তুকে ফুটাইয়া তোল ধৰ্ম্মের চরম লক্ষ্য হইলেও, এই শরীর বা জড়দেহ হইতে আরম্ভ করিয়াই সেই ধৰ্ম্মকে গড়িয়া তুলিতে হয়। ইহা বুঝিয়া শুনিয়াই হিন্দু বলেন,—“শরীরমাদ্যং খলু ধৰ্ম্মসাধনম্।” তাহারই জন্ত হিন্দুর ধৰ্ম্ম সামান্ত শারীর চেষ্টার প্রতি এতটাই দৃষ্টি রাখিয়া চলে। মামুষের শরীরের সঙ্গে তার মনের সম্বন্ধ কতটা যে গভীর ও ঘনিষ্ঠ, অতি প্রাচীনকাল হইতেই হিন্দু ইহা বুঝিয়াছিলেন। মামুষের প্রবৃত্তি সকল যে কতটা পরিমাণে তাহার শরীরের স্নায়ুমণ্ডলীর অধীন, আধুনিক যুরোপীয় ও আমেরিকান মনস্তত্ববিদ পণ্ডিতেরাও ইহা একটু একটু বুঝিতে আরম্ভ করিয়াছেন। কিন্তু হিন্দু বহুকাল পূর্বেই এই সত্যের সন্ধান পাইয়াছিলেন । এইজন্য এই স্নায়ুমণ্ডলীকে অবলম্বন করিয়াই হিন্দু মানবচরিত্র গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা করিয়াছেন। হিন্দু জানেন যে, "ভাল হও’ বলিলেই লোকে ভাল হয় না। পরের উপদেশ শুনিয়া বা দৃষ্টান্ত দেখিয়া ভাল হইতে ইচ্ছা করিলেই কেহ ভাল হইতে পারে মনে মনে সাময়িক ভাবের প্রেরণায় যতই সাধু সংকল্প সে করুক না কেন,— | || বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, ভাদ্র, ১৩১৯ তাঁর শরীর অর্থাৎ স্নায়ুমণ্ডলী যদি সে সংকল্প, রক্ষার অমুকুল অবস্থা লাভ না করে,--কেবল মনের জোরে সে সংকল্প রক্ষা করা কখনও সম্ভব বা সাধ্যপর হয় না । ফলতঃ আমর যtহাঁকে মনের জোর বলি—ইংরেজিতে Witto inhibitive power of the will বলে,—তাছাও সৰ্ব্বথাই স্বায়ুমণ্ডলীর সুস্থ ও সবল অবস্থার উপরে সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করিয়া থাকে । উন্মাদরোগগ্ৰস্ত লোকের এই মনের জোর একেবারেই নাই। যখন যে ভাব মনে জাগে, তাছাতেই তাহাদিগকে ক্ষেপাইয় তুলে। সে উত্তেজনাকে রোধ করিবার শক্তি তাষ্ঠীদের থাকে না । ইহার কারণ, তাঙ্গাদের স্বায়ুমণ্ডলীর অপ্রকৃতিস্থ, অমুস্থ, আতান্তিক উত্তেজিত অবস্থা। সেইরূপ যাহাঁদের কুপ্রবৃত্বি অভ্যস্ত প্রবল, আজন্মকাল যাহার চৌর্য্য, পারুষ, নরহত্য প্রভৃতি সমাজদ্রোহিতlচরণে প্রবৃত্ত হয়, আধুনিক যুরোপীয় মনস্তত্ত্ববিদগণ digtstoczt instinctive criminals too, র্তাহীদের এই অদম্য কুকৰ্ম্মাসক্তি ও বিকৃত স্বায়ুমণ্ডলীরই ফল । কামক্রোধাদি সকল রিপুরই মূল আমাদের শরীরের স্নায়ুমণ্ডলীর উত্তেজিত ও অপ্রকৃতিস্থ অবস্থা। এ সকল কথা অল্পে অরে, আধুনিক যুরোপীয় মনস্তত্ববিদ পণ্ডিতগণের গবেষণায় ও সিদ্ধান্তে ফুটি উঠিতেছে। হিন্দু সাধকের বহুকাল হইতেই এ সকল কৃথা জানেন। মুতরাং র্তাহার প্রথমাবধিই মানুষকে ধাৰ্ম্মিক করিষ্ঠে যাইয়া, সৰ্ব্বদে তাহার' শরীরকে শোধ করিতে চাহিয়াছেন। হিন্দুর যৰ্ম্মের স্নানাদি নিত্যকর্মের ও ব্ৰতোপবাসাদি নৈমিত্তিক কৰ্ম্মের বাবধ
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৩২৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।