৩২৮ অস্বীকার না করিলে, মানসক্ষেত্ৰ কদাপি সম্পূর্ণ সংস্কার-বর্জিত ও নিৰ্ম্মল হইতে পারে না । এই সৰ্ব্বগ্রাসী সন্দেহ ও অসত্যবোধ হইতেই ক্রমে খাটি ও সরল বিশ্বাস এবং সত্য আস্তিকবুদ্ধির সঞ্চার হয়। “নেতি” “নেতি’ বলিয়াই “ইতিতে” পৌছিতে হয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে "নেতি” “নেতি’ বলিয়া একেবারে পরমতত্ত্ব বা ব্ৰহ্মতত্ত্বশন্ত করিয়াই, পরে ব্রহ্মের সঙ্গে ব্রহ্মাণ্ডের একত্ব প্রতিষ্ঠা করিয়া, সৰ্ব্বংশ থম্বেদং ব্রহ্ম,—এই মহাসত্যে উপনীত হইতে হয় কেশবচন্দ্রের সমাজ ও ধৰ্ম্মসংস্কার-চেষ্ট রাজার আদর্শের অনুসরণ করিতে যাইয়া, প্রথমে এই “নেতি’র পথ ধরিয়াই চলিয়াছিল। এ পথ সংগ্রামের পথ, সন্ধির পথ নহে । এ পথ শক্তির পথ, সংঘমের পথ নহে। ইহ আত্মপ্রতিষ্ঠার পথ, আত্মবিলোপের পথ নহে। এ পথ ইংরেজিতে যাহাকে Independence বা অনধীনত বলে তারই পথ ; সত্য-স্বাধীনতার পথ নহে। এ পথে যাইয় একপ্রকারের ফ্রিডমে (Freedom) পৌছান যায়, কিন্তু উপনিষদ যাহাকে স্বারাজ্য বলিয়াছেন, সে বস্তু লাভ হয় না। এ পথ Rightংএর পথ, স্বত্বের পথ ; Reconciliationএর পথ বা সামঞ্জস্য ও শান্তির পথ নহে। কেশবচন্দ্র প্রথম বয়সে, ধৰ্ম্ম ও সমাজসংস্কার-ব্রতে ব্ৰতী হইয়া, এই স্বত্বের পথ ধরিয়াই চলিয়াছিলেন। শাস্ত্রের প্রাচীন অধিকারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিচারবিবেচনার স্বত্ব-প্রতিষ্ঠা ; গুরুর প্রাচীন অধিকারের বিরুদ্ধে অসংস্কৃত ও অসিদ্ধ স্বাভিমতের স্বত্ব-প্রতিষ্ঠা ; সমাজের বিধি বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ম, ভাদ্র, ১৩১৯ নিষেধাদির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত রুচি q প্রবৃত্তির স্বত্ব-প্রতিষ্ঠা –ইহাই কেশবচন্ধের প্রথম জীবনের কৰ্ম্মচেষ্টার মূল স্বত্র ছিন্ন। ধৰ্ম্মের ও নীতির আবরণের দ্বারা সুসজ্জিত হইলেও কেশবচন্দ্রের প্রথম জীবনের সমাজ ও ধৰ্ম্ম-সংস্কার-প্রয়াস সৰ্ব্ব বিঘরে ব্যক্তিগত Rights বা স্বত্বকেষ্ট জাগাইয়া তুলিতে চেষ্টা করিয়াছিল। আর কেশবচন্দ্ৰ ধৰ্ম্মসাধনে ও সমাজশাসনে সে ব্যক্তিগত অনধীনতার আদর্শকে জাগাই! তুলিয়া দেশের নব্যশিক্ষিত সম্প্রদাদের মধ্যে একটা নূতন শক্তির সঞ্চার করেন, সুরেন্দ্রনাথ সেই আদর্শকেই রাষ্ট্ৰীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করিতে যাইয় আপনার অনন্তপ্রতিসোণী ঐতিহাসিক কীক্তি করিয়াছেন । আধুনিক যুগে কেশবচন্দ্রের পূৰ্ব্বেই আমাদের দেশে এই ধৰ্ম্ম ও সমাজ-সংস্কারের সূত্রপাত হইয়াছিল। একদিকে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ধৰ্ম্মসংস্কারে, অন্যদিকে ডেভিড হেয়ার এবং ডি, রোজেরিওর শিষ্যগণ সমাজ-সংস্কারে অষ্টাদশ-পৃষ্ঠ শতাব্দীর ব্যক্তিত্বাভিমানী অন ধীনতার ব! Independence of আদর্শকে ফুটাইয়৷ তুলিতে চেষ্টা করেন। কেশবচন্ধের বিশেষত্ব এই যে তিনি একদিকে আপনার কৰ্ম্মজীবনে এই দুই সংস্কার-স্রোতকে একী ভূত করিম, জীবনের সকল বিভাগে હફ્રે অনধীনতার আদর্শৰে গড়িয়া তুলিতে চেঃ। করেন এবং অন্য দিকে এতাবৎকাল পয্যন্ত কার্যতঃ, যে ধৰ্ম্ম ও সমাজ-সংস্কার চেষ্ট্র ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির নিজ নিজ জীবনের বিচ্ছির কৰ্ম্মোদ্যমের ভিতর দিয়াই প্রকাশিত হইতে অর্জন
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৩৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।