৩৩২ প্রভৃতির কবিপ্রতিভ, নানা দিকে ও নানা ভাবে এই স্বদেশাভিমানকে ফুটাইয়৷ তুলে। হেমচন্দ্রের "ভারতসঙ্গীত’, সত্যেন্ত্রনাথের “গাও ভারতের জয়, হোক ভারতের জয়, কি ভয় কি ভয় গাও ভারতের জয়” ; গোবিন্দচন্দ্রের “কতকাল পরে, বল ভারতরে” এবং প্রাচীন স্মৃতিবাহিনী “যমুনা লহরী” ; মনোমোহনের “দিনের দিন সবে দীন” –এই সমুয়েই এই সকল জাতীয় সঙ্গীত প্রচারিত হয়। দীনবন্ধুর “নীলদর্পণ” ইঙ্গর পূৰ্ব্বেই রচিত হইয়াছিল। জ্ঞানেন্দ্রনাথের “শরং-সরোজিনী” ও “সুরেন্দ্র-বিনোদিনী” নীলদর্পণের মৰ্ম্মঘাতিনী উদ্দীপনাতে নূতন ইন্ধন সংযোগ করিয়া দেয়। নবপ্রতিষ্ঠিত বঙ্গ-রঙ্গমঞ্চ পুনঃ পুনঃ এই সকল নাটকের অভিনয় করিয়া ইহাদিগের শিক্ষা ও উদ্দীপনাকে জনসাধারণের মধ্যে ছড়াইয় দেয় । এই সময়েই নবীনচন্দ্রের “পলাশীর যুদ্ধ” প্রকাশিত হইয় দেশের নবজাত স্বদেশপ্রীতিকে আধুনিক রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করিয়া দেয়। “ভারত মাতা” প্রভৃতি নুতন গীতি-নাট্য এই অভিনব স্বদেশ-প্রীতিকে এক নূতন দেবভক্তির আকারে ফুটাইয় তুলিতে চেষ্টা করে। এই স্বজাতি প্রেম ও স্বদেশ-ভক্তির সুরধুনী-স্রোত যখন শিক্ষিত বঙ্গসমাজের প্রাণকে স্পর্শ করিয়া তাহাদের মধ্যে এক নূতন চেতনার সঞ্চার করিতে আরম্ভ করে, তখন এই স্বাদেশিকতার তরঙ্গমুখে, এই নৃতন দেশচর্য্যার পুরোহিতরূপে, সুরেন্দ্রনাথ স্বদেশে রাষ্ট্রীয় কৰ্ম্মক্ষেত্রে আসিয়া দণ্ডায়মান হ'ম। আর দৈবকৃপায় দেশ-কালপাত্রের এরূপ শুভ-যোগাযোগ ঘটিয়াছিল বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, ভাদ্র, ১৩১৯ বলিয়াই, তাহার কৰ্ম্মজীবন এমন অনন্তসাধারণ সফলতা লাভ করিয়াছে। সুরেন্দ্রনাথের স্বাদেশিকতার শিক্ষা কোনো দেশে যখনি কোনো নূতন ভাব ও আদর্শ ফুটিতে আরম্ভ করে, তখন সৰ্ব্বাদে তাহা উদারমতি, বিযয়বুদ্ধিবিহীন, উদ্যমশীল যুবকমণ্ডলীর চিত্তকেই আকর্ষণ করিয়া থাকে। আমাদিগের দেশের এই নবজাত স্বদেশ-প্রেমও সৰ্ব্ব প্রথমে শিক্ষার্থী যুবক গণের চিত্তকে অধিকার করে এবং তাহীদের যৌবনস্বভাবসুলভ কল্পনা ও ভাবুকতাকে আশ্রয় করিয়াই বাড়িয়া উঠে। আর এই জন্য এই অভিনব স্বাদেশিকত প্রথমেই কোনো প্রকারের বস্তুতন্ত্রতাও লাভ করিতে পারে নাই। বঙ্কিমচন্দ্র ও তাহার সহযোগী সাহিত্যিকগণ বঙ্গদর্শনের সাহায্যে দেশের শিক্ষিত সমাজের মধ্যে স্বজাতির প্রাচীন গৌরবস্মৃতি জাগাইয়া কিযুৎপরিমাণে তাহাদের নূতন স্বদেশিকতাকে একটা ঐতিহাসিক ভিত্তির উপরে গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা করেন, সত্য। কিন্তু বঙ্গদর্শন প্রাচীন ভারতের শিল্প ও সাহিত্যের এবং সাধারণ সভ্যতার ও সাধনার লুপ্ত-গৌরবের উদ্ধারে যে পরিমাণে মনোনিবেশ করিয়াছিল, তাহার পূৰ্ব্বতন রাষ্ট্ৰীয় জীবনের আলোচনায় সে পরিমাণে মনোনিবেশ করে নাই। বিশেষতঃ দেশের আধুনিক রাষ্টীয় আশা ও আকাজার বিচার-আলোচনা কখনই প্রকাশুভাবে বঙ্গদর্শনে স্থান প্রাপ্ত হয় নাই। “কমলাকান্তের দপ্তরে” লেখকের অসাধারণ শ্লেষালঙ্কারে আচ্ছাদিত হইয়া, আধুনিক ভারতের অনেক রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও আদর্শেরই
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৩৩৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।