৪র্থ সংখ্যা ] গভীর আলোচনা রহিয়াছে, সত্য ; কিন্তু অতি অল্প লোকেই সে সময়ে “কমলাকান্তের" সুমধুর বিক্ৰপাত্মক স্বরসিকতার নিগৃঢ় মৰ্ম্ম-উদঘাটনে সমর্থ হইয়াছিলেন। নব্যশিক্ষাভিমানী লোকেও কেবল র্তাহার অপূৰ্ব্ব সাহিত্যর টুকুই আস্বাদন করিতেন, লেখকের অদ্ভুত কৌতুককুশলতা এবং অসাধারণ শব্দসম্পদ দেখিয়াই মুগ্ধ হইতেন, কিন্তু এ সকল ছলাকলার অন্তরালে যে গভীর সমাজতত্ত্ব ও রাষ্ট্রতত্ত্ব লুকাইয়াছিল, তাহার সন্ধানলাভ করেন নাই। এই সকল কারণে, বঙ্গদর্শন নানাদিক দিয়৷ আমাদিগের নবজাত স্বাদেশিকতাকে পুরিপুষ্ট করিয়াও, বিশেষভাবে ইহাকে বস্তুতন্ত্র করিয়৷ তুলিতে পারে নাই। সুরেন্দ্রনাথই প্রথমে এই স্বাদেশিকতার মধ্যে এক অভিনব এবং উন্মাদিনী ঐতিহাসিকী উদ্দীপনার সঞ্চার করেন। চল্লিশ বৎসর পূৰ্ব্বে আমাদিগের মধ্যে স্বদেশের ইতিহাসের জ্ঞান ছিল না বলিলেও, অত্যুক্তি হয় না। ইংরেজি বিদ্যালয়ে কিয়ৎ পরিমাণে ভারতবর্ষের ইতিহাস পড় ঠইত বটে, কিন্তু সে সকল ইতিহাস ইংরেজেরই রচিত ছিল। সেকালে যুরোপেও ইতিহাস বলিতে লোকে কেবল কতকগুলি রাজার নাম এবং তাহাদের যুদ্ধবিগ্ৰহাদির বিবরণই বুঝিত। ইতিহাস যে সমাজবিজ্ঞানের অঙ্গ, ঐতিহাসিক ঘটনার অন্তরালে যে মানব-প্রকৃতুির আশা ও আকাজ এবং তাহার আত্মচরিতীর্থতা-লাভের প্রয়াস ও প্রতিষ্ঠা বিদ্যমান থাকে, এক যুগের ইতিহাস যে পরবর্তী যুগের জনমণ্ডলীর কৰ্ম্মজীবনের চরিত-চিত্র .ফিরিয়া ৩৩৩ উদ্দীপনার ও শিক্ষার মূল স্বত্রগুলি আপনার পশ্চাতে তাহাদিগের জন্য রাখিয়া যায়, এ সকল কথা সে কালের যুরোপীয় ঐতিহাসিকেরাও ভাল করিয়া ধরেন নাই। ঐতিহাসিক আলোচনার এই পদ্ধতি তপনে ভাল করিয়া প্রতিষ্ঠিত হয় নাই । সুতরাং আমর চল্লিশ বৎসর পূৰ্ব্বে স্কুলকলেজে যে সকল ইতিহাস পাঠ করিতাম, তাহার ভিতরে কোনো উন্নত আদর্শ কিম্ব কৰ্ম্মের উদ্দীপন আছে, ইহা অহুভব করিতে পারি নাই। আর এই কারণেই যদিও ভারতবর্ষের ও ইংলণ্ডের —আর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করিয়া প্রাচীন গ্রীস, রোম ও মধ্যযুগের যুরোপখণ্ডের—ইতিহাস ও পাঠ করিতাম, কিন্তু এ সকল আমাদিগের প্রাণে কোনো প্রকারের সজীব স্বদেশপ্রেমের কিম্ব উদার মানব-প্রেমের সঞ্চার করিতে পারিত না । স্বরেন্দ্রনাথ স্বদেশের রাষ্ট্রীয় কৰ্ম্মক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়াই সৰ্ব্বপ্রথমে আমাদের নব্যশিক্ষিত সম্প্রদায়ের সমক্ষে প্রত্যেক জাতির ইতিহাসই যে সেই জাতির স্বদেশভক্তির আলম্বন ও প্রতিষ্ঠা এই সত্য প্রচার করিলেন । সুরেন্দ্রনাথ দ্বিতীয় বার বিলাত হইতে আসিয়াই ৬আনন্দমোহন বস্থ মহাশয়ের একযোগে সৰ্ব্বপ্রথমে কলিকাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যুবকবৃন্দকে লইয়| এক ছাত্র-সভার প্রতিষ্ঠা করেন। এই ছাত্র-সভাই তাহার স্বাদেশিক কৰ্ম্মের প্রথম ও প্রধান কেন্দ্র হইয় উঠে। যে অলোকসামান্ত বাগিতা-শক্তির প্রভাব ক্রমে সমগ্র ভারতের নব্যশিক্ষিত সম্প্রদায়ের চিত্তকে অধিকার করিয়া তাহার অনন্যপ্রতিযোগী ঐতিহাসিক প্রতিপত্তির
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৩৩৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।