পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৩৪ প্রতিষ্ঠা করিয়াছে, কলিকাতার এই ছাত্রসভাতেই তাই সৰ্ব্বপ্রথমে ক্ষরিত হয়। এই ছাত্রসভায় স্বরেন্দ্রনাথ “শিখ-শক্তির অভু্যদয়"The rise of Shikh Power,–RWY'R CH sistময়ী বক্তৃতা প্রদান করেন, তাহার স্মৃতি,— সেই বক্তৃত যাহারা শুনিয়াছিলেন—তাহদিগের চিত্ত হইতে কখনই লুপ্ত হইবে ন। শিখধর্মের উৎপত্তি, শিখ খালসার প্রতিষ্ঠ, প্রথমে মোগল এবং পরে ব্রিটিশ প্রভূশক্তির সঙ্গে, শিখ খালসার যুদ্ধ-বিগ্রহের কথা, সেকালের স্কুলপাঠ্য ভারত ইতিহাসের মধ্যেও ছিল। স্বরেন্দ্রনাথ এই বক্তৃতায় যে সকল ঘটনার উল্লেখ করেন, তাহ যে একেবারে অজ্ঞাত ছিল এমন নহে। কিন্তু সেই সকল পূৰ্ব্বপরিচিত ঘটনার অন্তরালে স্বরাষ্ট্র প্রীতির যে শক্তিশালিনী উদ্দীপনা বিদ্যমান ছিল, সুরেন্দ্রনাথের তড়িতসঞ্চারিণী বাগ্মীপ্রতিভাই সৰ্ব্বপ্রথমে আমাদের নিকট তাহ। ফুটাইয়া তুলে। সেই হইতেই এদেশের নব্যশিক্ষিত সম্প্রদায়ের মানসচক্ষে আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাসের এক অভিনব মৰ্ম্ম ও উন্মাদিনী উদ্দীপনা প্রকাশিত হইতে আরম্ভ করে। ছত্রপতি মহারাজ শিবাজি আধুনিক ভারতক্ষেত্রে যে এক বিশাল হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন, তাহার মর্য্যাদাজ্ঞান তখনো আমাদের জন্মায় নাই । সুতরাং সে সময়ে মহারাষ্ট্র ইতিহাসের উদ্দীপনা অামদিগের নবজাগ্রত স্বাদেশিকতাকে স্পর্শ করে নাই । আমাদের এই নৃতন স্বাদেশিকত৷ তখন একটা কল্পিত বিশ্বজনীনতার ভাব অবলম্বন করিয়া ফুটিয়া উঠিয়াছিল। একটা স্বদেশাভিমান মাত্র আমাদের চিত্তকে তখন लग्नानि { ১২শ বৰ্ষ, ভাদ্র, ১৩১৯ অধিকার করিয়াছিল। হিন্ধু বলিয়া কোনে গৌরবাভিমান তখনে আমাদের মধ্যে জন্মায় নাই । হিন্দুধর্শের প্রচলিত প্রাণহীন কৰ্ম্ম কাণ্ডে আমাদের পুরুষানুগত বিশ্বাস একেবারে ভাসিয়া গিয়াছিল। জাতিভেদপ্ৰপীড়িত হিন্দুসমাজের প্রতিও গভীর অশ্রদ্ধ। জন্মিয়াছিল। এই সকল কারণে ছত্রপতি মহারাজ শিবাজি ভারতে যে মহা হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন, তাহার প্রকৃত মৰ্ম্ম ও উন্নত মৰ্য্যাদ উপলব্ধি করিবার অধিকার আমাদের ছিল না। অন্য পক্ষে বাবা নানক প্রবর্তিত ধৰ্ম্মে একদিকে যেমন কোনো প্রকারের কৰ্ম্মবাহুল্য ছিল না, অন্য দিকে সেইরূপ গুরুগোবিন্দ-প্রতিষ্ঠিত সমাজতন্ত্রে জাতিকর্ণগত কোনো বৈষম্যও ছিল ন৷ শিখ খালস বহুল পরিমাণে ইংলণ্ডের পিউরিট্যান ( Puritan ) সাধারণ-তন্ত্রের বা Commonwealth Wool ছিল। আর এই জন্যই আমাদের ইংরাজি শিক্ষা ৪ যুরোপীয় সাধনায় অভিভূত চিত্তকে শিখ ইতি হাসের উদ্দীপনাতে এমন প্রবলভাবে অধিকার করিতে পারিয়াছিল। টডের রাজস্থান ইহার অনেক পূর্বেই রচিত হইয়াছিল বটে এবং. রঙ্গলালের পদ্মিনীর উপাখ্যানের ভিতর দিয়া রাজপুত-সমাজের অলৌকিক স্বদেশচর্য্যার উদ্দীপনা বাংলা সাহিত্যে ও প্রবেশ করিয়াছিল, সত্য ; কিন্তু পদ্মিনীর উপাখ্যান যে একান্তই “পৌরাণিকী” কাহিনীর উপরে প্রতিষ্ঠিত নহে, এই জ্ঞান তখনে খুব পরিপুষ্ট হয় নাই। স্বরেন্দ্রনাথের মুখে শিখ ইতিহাসের ব্যাখ্য শুনিয়া আমাদের নব্যশিক্ষিত সম্প্রদায়ের চক্ষু রাজপুতনার কীৰ্ত্তিকাহিনীর উপরেও