পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 × 8 দেখিতাম। কিন্তু এই হাতে গড়া কাট খড়ের মূৰ্ত্তিটাই যখন সুসজ্জিত হইয়া, মহাসপ্তমীর প্রত্যুষে ধূপ দীপ নৈবিদ্যাদির দ্বারা অর্চিত হইত, তখন যে তাহা অচেতন পুত্তলিকা মাত্র, এমন ভাবটা মনে স্থান পাইত না । সন্ধ্যাকালে চণ্ডীমণ্ডপের বারান্দীয় দাড়াইয়া বড় বড় ধুনচী হাতে লইয়।, আমরা বালকের দল যখন দেবী-প্রতিমাকে ধূপধুমে ছাইয়া ফেলিতাম, তখন সেই দীপালোক-সমুজ্জ্বল ধূপগন্ধমোদিত, কঁশিরঘণ্ট-প্রভৃতির-আরত্রিক-বাদ্য-মুখরিত চণ্ডীমণ্ডপের মাঝখানে সেই দেবীপ্রতিম! যেন ভক্তের বন্দনায় তুষ্ট হইয়া হাসিতেছেন, এমনই বোধ হইত। আর মহানবমীর রাত্রিশেষে যখন আবার ধূপদীপ জালাইয়। দিতাম, তখন সেই প্রসন্ন মুখই যেন আসন্ন বিরহ ভাবিয়া ক্রমে বিষঃ হইয়া যাইতেছে, এমনটাই অনুভব করিতাম। বিজয়ার দিনে প্রতিমা বিসর্জন, করিয়া যখন বাড়ী ফিরিয়। আসিতাম, তখন আর চণ্ডীমণ্ডপের দিকে চাহিতে সাহস হইত না। এমনও কখনও ঘটিয়াছে যে বিজয়ার পরের দিন প্রাতঃকালে চণ্ডীমণ্ডপের দ্বারে আসিয়া, দেবীশূন্য দেবতার ঘর দেখিয়া চক্ষের জল সংবরণ করিতে পারি নাই। এ সকলই কেবল কল্পনার খেলা ছিল সন্দেহ নাই । কিন্তু ধৰ্ম্মজীবনে বিশেষ ধৰ্ম্মের ভাবাঙ্গ-সাধনে, আমাদের পরিণত বয়সের জ্ঞানদৃপ্ত সাধন-ভজনেই সত্যের প্রতিষ্ঠা কতটা আর কল্পনার প্রভাবই বা কতটা, কে বলিতে পারে ? কল্পনাই ধৰ্ম্মের প্রাণ। আর যে কল্পনাকে বঙ্গদর্শন s ১২শ লণ, কাৰ্ত্তিক, > 9. § আশ্রয় করিয়া এই দুর্গোৎসবের আনন্দটুকু জাগিয়া উঠিত, শৈশবের ধৰ্ম্মজীবন গঠনে, তাহা যে কতটা সাহায্য করিয়াছে, তার পরিমাণ করা সস্তব বলিয়া বোধ श्झ न! : ফলতঃ দুর্গোৎসব আমার শিশুজীবনের সকল দিকট। এমনভাবে জড়াইয়। থাকিত, যে, বলিতে কি, পরিণত বয়সের মুসংস্কৃত ব্রহ্মোৎসবও তেমন করিয়া আমাকে কখনও আঁকড়াইয়া ধরিতে পারে নাই । ব্রহ্মোৎসবে যে আনন্দ পাইয়া থাকি, তাহা মানসিক ; ভিতরকার বস্তু। অন্তরের আদর্শের প্রকাশে তার উৎপত্তি। এ আনন্দ নিরাকার ; মানসকল্পনাকে আশ্রয় করিয়া ইহার র্তি হইয়া থাকে। মুমধুর সঙ্গীত, সুললিত বাক্যযোজনা, চিত্তহারিণী কবিকল্পনার সঙ্গে, একটু আধটু ভক্তিরস মিশ্রিত হষ্টয়া, এই উৎপবানন্দের স্বষ্টি করিয়া থাকে। কলাসাহিত্যের অনুশীলনে মানুষ যে গভীর আনন্দ উপভোগ করে, ইহা কিয়ৎ পরিমাণে সেই জাতীয় । কচিং কোনও সাধুভক্ত জনে ইহা আরও গভীরতা লাভ করে বটে, তখন স্বেদকম্পপুলক শ্রী প্রভৃতি ভাবের লক্ষণ র্তাহীদের মধ্যে ফুটিয়াও উঠে। কিন্তু সাধারণ উপাসক ও শ্ৰোতাগণ ব্রহ্মোৎসবের যে আনন্দ সম্ভোগ করেন, তাহ কেবল সাহিত্যরস হইতেই উৎপন্ন হইয়া থাকে। এইজন্য সদ্বক্তাগণই সৰ্ব্বদা এই উৎসবের আনন্দকে জাগাইয়া তুলিতে পারেন ; সাধকের আধ আধ কথায় এ ফোয়ার ছুটিয় উঠে না। কিন্তু শৈশবে দুর্গোৎসবে যে আনন্দ পাইতাম