838 নিরামিষেরও ব্যবস্থা নাই, একাদশীর দিনে নিরন্তু উপবাসও করিতে হয় না। আহারবিহারে সধবায় বিধবায় কোন পার্থক্য নাই। সাজসজ্জ। সম্বন্ধেও, বৈধব্যের আদিকায় বৎসরকালের পরে, কোন বিশেষ বিধি-নিযেধ নাই। বিলাতী বৈধব্যে সমাজশাসননিবন্ধন, ভোগবিলাসের কোনো প্রকারের সঙ্কোচ একান্তই অনাবশ্যক । বৈধব্যের আদিতে কতকটা সংযমের ব্যবস্থা আছে সত্য ; কিন্তু বিধাতাপুরুষ আপনি যেখানে এ বৈধব্যের বিধান করেন কেবল সেখানেই এ সকল সংযম অবলম্বন আবশ্বক হয়। চক্ষের উপরে যারা বৈধব্যদশা প্রাপ্ত হন, কেবল তাহাদিগকেই সমাজের মুখ চাহিয়া এ সকল নিয়ম অবলম্বন করিতে হয় । যাদের পূর্ব পরিচয় নাই, যাদেরে সধবা রূপে পূৰ্ব্বে দেখা যায় নাই, সে সকল অপরিচিতাদের বৈধব্য-গ্রহণে এ সকল সংযমাদি অবলম্বন অনাবশ্যক। এরূপ স্থলে একদিকে, স্বামীর ঐকান্তিক অকুপস্থিতি, আর অন্যদিকে স্ত্রীর অনামিকাতে বিবাহাঙ্গুরীয় ধারণ, এই দুটই বৈধব্যের সন্তোষকর লক্ষণ বলিয়া গণ্য হয়। এই এক আংটার বলেই অনেক সময় অনূঢ়৷ বিবাহিত বলিয়া, এবং অবিবাহিতা বিধবা ৰলিয়া সমাজে স্বচ্ছন্দে চলিয়া যাই তে পারেন। বিধা বাড়ীওয়ালীদের বিবাহের চিহ্নস্বরূপ অনামিকান্ধত অঙ্গুরীয়টই বৈধব্যের প্রামাণ্য বলিয়া গৃহীত হয়। এই অঙ্গুরীয় ধারণ করিয়াই তারা একেবারে, “মিস্” হইতে “মিসেস” হইয়া উঠিতে পারেন। অবশ্ব ক্ষুদ্র , পল্লিঞ্জীবনে এরূপ ভাবে বঙ্গদর্শন পরিজনের [ ১২শ বর্ষ, কাত্তিক, ১৩১৯ অনূঢ়ার পক্ষে স্বেচ্ছারৈধব্যলাভ সম্ভব হয় না । যেখানে সকলেই সকলকে জানে, সেস্থলে এরূপ অবস্থাবিপৰ্য্যয় ঘটাইতে হইলে, বছর দুবছরের জন্য দেশত্যাগী হইয়া থাকা অবখ্যক হয়। কিন্তু মগুন তো সহর সহে, এক বিশাল সাহারা এ মরুভূমে কে কাকে চেনে ? কে কার খবর রাৰ্থে ? এক পল্লিতে যে সুপরিচিত, অন্ত পল্লিতে সে একান্তই অপরিচিত। এক পল্লিতে যে অনূঢ়া, অপর পল্লিতে যাইয়া সে বিবাহ না করিয়াও বিবাহিত কিম্বা বিবাহিত না হইয়াও বিপবী সাজিয়া বসিতে পারে। এই জন্যই অনেক রূপযৌবনবতী বিধবা বাড়ীওয়ালীর বৈধব্যটা সত্য না স্বরচিত, ইহা ঠিক করিয়৷ বলা যায় না । বিলাতে সকল প্রকারের ব্যবসাতেই রূপ জিনিযটা বড়- কাজে লাগে । ধে আপনার দোকান জাকাইয়া তুলিতে চায়, সে বাছিয়া গুছিয়া রূপসী চাকরণ জুটাইয়া আনে, এর মোহিনী সাথে সাজিয়া, গ্রাহকদিগকে আকর্ষণ করেন। এরা সকলেই বা অধিকাংশই যে অসচ্চরিত্র এমন মনে করা অসঙ্গত। অনেক সতী লক্ষ্মী এদের মধ্যে থাকেন, যার দরিদ্র ভরণপোষণের জঙ্গ, હફ দাসীবৃত্তি অবলম্বন করিতে বাধ্য হন। এ সকল লোককে দেখিলেই চেনা যায়। এদের নিজের রূপের জ্ঞান আছেকোন রমণীর তাহা নাই ?—কিন্তু রূপের অহঙ্কার নাই। প্রসাধনের পটুতা আছেকোন রমণীষ্ট বা প্রসাধনে উদাসীন -
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৪৩৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।