পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

نوارS: বিলাতে অর্থের বলে নীচ হইতে উচু হওয়া যায়। জাতিভেদ-পীড়িত ভারতে অর্থের এ মর্য্যাদা নাই। এখানে জন্মের বন্ধন ছাড়াইতে হইলে অর্থ নহে কিন্তু পরমার্থের প্রয়োজন হয় । ধন-লাভ জ্ঞানভক্তি লাভ অপেক্ষ সহজ। অর্থ উপাঞ্জন পারমার্থিক-সম্পদ-আহরণ অপেক্ষ। অশেষ স্বল্পায়াসসাধ্য। প্রত্যেক সমাজেই অতি স্বল্পসংখ্যক লোক পমাৰ্থ-লাভে প্রয়াসী হন, ইহঁদের মধ্যে ৰুচিৎ কোন ব্যক্তি সিদ্ধি লাভ করিয়া থাকেন । “মকুষাণাং সহশ্রেযু কশ্চিৎ যততিসিদ্ধয়ে। যততামপি সিদ্ধানম্ কশ্চিম্মাং বেত্তি তত্ত্বতঃ ॥ সহস্র মন্ত্ৰষ্ঠ মধ্যে কচিৎ কোনো ব্যক্তি সিদ্ধির জন্য যত্ন করেন। আর সাধনশীল সিদ্ধপুরুষদিগের মধ্যে রূচিৎ কোনো ব্যক্তি আমাকে তত্ত্বভাবে জানেন। পরমার্থলাত যে সমাজে নিয়জাতি হইতে উচ্চতর জাতিতে যাইবার একমাত্র পন্থা, সে সমাজে যে বহুলোকে জন্মের বন্ধন কাটায়। উঠিতে পারে না, ইহা বিচিত্র নহে। ইংরেজসমাজ যে দাম লইয়া নিম্নশ্রেণীর লোককে উচ্চশ্রেণীতে যাইতে দেয়, হিন্দুভারতে কেহ সেই দাম" দিয়া সামাজিক আভিজাত্য কিনিতে পারে না। ঠহাই কেবল সত্য । নতুবা ভারতের জাতিভেদ একান্ত অনতিক্রমণীয় আর ইউরোপের শ্রেণীভেদ একান্তই অতিক্রমণীয় ; দুইয়ের মধ্যে এ পার্থক্য প্রতিষ্ঠা হয় না। একটা দুরতিক্রমণীয় ও অপরটা সহজে অতিক্রম করা যায় এ কথাই সত্য । বঙ্গদর্শন ১২শ বৰ্ষ, বৈশাখ, ১৩১৯ জাতিভেদ যতই কেন মন্দ হউক না, গতে মানুষের ম্যুত্বকে চাপিয়া রাখে, আর ইউরোপীয় শ্রেণীভেদে রাখে না, এমন কথাও নিঃসঙ্কোচে বলিতে পারি না। বরং ইউরোপ যে প্রণালীতে নিম্নশ্রেণীকে উপরে তুলিয়। লয়, বোধ ছয় তাহাতেই মনুষ্যত্ব-বিকাশের 1েণী হানি হয় । ভারতবর্ষের চিরাগত প্রণালীতে তাহার ততটা আশঙ্কা নাই বলিয়াই মনে হয় । ইউরোপে টকা দিয়া আভিজাত্য কেনা যায়। মানুষ সমাজের পদমর্য্যাদার কাঙাল সৰ্ব্বত্রই । যেখানে টাকায় এ পদমর্য্যাদা কেন। যাইতে পারে, সেখানে টাকার আদর অবশুষ্ট বেশী হইবে । এই জন্য ইউরোপে টাকার দাম আমাজের দেশ অপেক্ষ অনেক বেশ । আর যেখানেই টাকার দাম চড়িয়া যায় সেখানেই মনুষ্যত্ব বলিতে যা কিছু বোঝায়, তাহার মূল্য অনেকটা কমিয় আসিবে, ইহা অনিবাৰ্য্য। ইউরোপে কি তাহাই হইতেছে না ? সে দেশে দারিদ্র্য আমাদের পঞ্চমহাপাতকের সমান। টাকার মর্য দি বাড়িলেই ভোগবিলাসের মাত্র। চড়িয়া যাইবে, ইহাও অবশ্বাস্তাবী। যে সমাজে টাকার উপরে সমাজের পদ ও সম্মান-প্রাপ্তি এতটাই নির্ভর করে, সেখানে লোকে সৰ্ব্বদাই আপনার অর্থ জাহির করিতে বাগ হইবে। ইহা হইতে সমাজে বাহা আড়ম্বরের বৃদ্ধি হইবেই হইবে। টাকাকড়ি, ঘোড়াগাড়ী, বাগানবাড়ী এ সকল যখন লোকে জাহির করিবার জন্য একান্ত ব্যগ্র হইয় উঠে, তখন সে সমাজে প্রকৃত মনুষ্যত্ব ক্রমশঃ ক্ষীণ হইতে