(to 8 নবীপ ও শান্তিপুর। গোস্বামীগণই ইহাদিগকে বৈষ্ণবধৰ্ম্মে দীক্ষিত করেন। ইহার রাসযাত্রী, দোলযাত্রা, রথযাত্র। প্রভৃতি বৈষ্ণব উৎসবগুলি অতিশয় সমারোহ সহকারে সম্পাদন করিয়া থাকে। এই মণিপুরীদিগের রথ একটা অতি অপূৰ্ব্ব বস্তু। যাহারা হিন্দুভূমের অন্যাঙ্গ স্থানের . রথই কেবল দেখিয়াছেন, রথ যে এত সুন্দর হইতে পারে, ইহা তাহ দের কল্পনাতেও আলিবে না। মণিপুরী রথের চাকা ক’খানা ছাড়া আর কোথাও কঠের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নাই। রথের ঠাটট। আদ্যোপান্ত সুন্দর, সরল, চিক্ষণ বঁাশ দিয়৷ প্রস্তুত। আর এ রথের সাজসজ্জাও অদ্ভুত। ইহাতে সঠিন, কিংধাব, জড়িজরওয়ার চিহ্ন পৰ্য্যন্ত থাকে না। কিন্তু হরিত পত্রের, বিকচ পল্লবের ও বিবিধ বর্ণের ও বিবিধ গন্ধের বনফুলের অপুৰ্ব্ব সমাবেশে, মণিপুরী রথ বিপুলবিভব ছড়ান জড়ি-জরওয়ার সাজসজ্জাকেও লজ্জিত করিয়া তুলে। মণিপুরীদের এই অপূৰ্ব্ব রথ দেখিয়া, কুরুক্ষেত্রের কথা মনে পড়ে না, কিন্তু ঐীরন্দাবনের পিচিত্র রসলীলার স্মৃতিই প্রাণে জাগিয়া উঠে। ছেলেবেলাকার রথের স্থতিতে মণিপুরী রথের এই মধুর ছবিটী অতিশয় উজ্জ্বল হইয়া আছে। বড় হইয়া, কলিকাতায় পড়াশুনা করিতে আসিয়া, একবার কয়জন সতীর্থের সঙ্গে মাহেশে রথ দেখিতে গিয়াছিলাম। কিন্তু লোকের হুড়োছড়ি ও গ্রাম্য রসের ছড়াছড়ি দেখিয়া,প্রাণে কোনও আনন্দ লাভ করা দূরে থাকুক,বরং সমস্ত ব্যাপারটার উপরেই একটা বঙ্গদর্শন [ ১২ বর্ষ, অগ্রহায়ণ, ১৩১৯ গভীর অশ্রদ্ধা জন্মিয়া যায়। মাঝে মাঝে কলিকাতার পথে, রথের দিনে বেড়াইতে যাইয়া, রাণী রাসমণির ছোট্ট খাট্ট রুপার রথখানি দেখিয়াছি। কিন্তু তাহাতে অন্তরে ভালমন্দ কোনও ভাবের প্রেরণা কখনও জাগে নাই । কিন্তু এবারে ঘটনাবশে রথযাত্রার দিনে পুরিধামে থাকিয় যে রথ দেখিয়াছি এমনটা জীবনে পূৰ্ব্বে আর কখনও কোথাও দেখি নাই । কোনও কোনও পাশ্চাত্য পণ্ডিত না কি বলেন যে এই রথযাত্রাট। আদিতে হিন্দুর পর ছিল না। বেীদ্ধেরই প্রথমে ভগবান বুদ্ধদেবের দন্তাদি দেহাবশেষকে রথে চড়াইয়া, জনগণের কল্যাণার্থে চারিদিকে ঘুরাইয়া আনিতেন । সিংহলে আজিও এই বৌদ্ধপৰ্ব্বট জাগিয়া আছে । ফলতঃ জপমালা, গঙ্গাজল, এমন কি প্রচলিত প্রতিমা-পূজাদি পৰ্য্যন্তও, ইহঁদের মতে হিন্দুগণ বৌদ্ধধিগের নিকট হইতে ধার করিয়া আনিয়াছেন। এ সকল প্রত্নতত্ত্বের আলোচনা, আমার বিদ্যাসাধ্যের অতীত এবং বর্তমান, প্রবন্ধে অপ্রাসঙ্গিক ও নিম্প্রয়োজন। যদি সত্যসত্যই হিন্দুর রথযাত্রাট বৌদ্ধদিগের নিকট হইতে ধার করিয়া আনিয়াও থাকে, তথাপি হিন্দুর সাধনা ইহাকে আপনার আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা ও ভক্তিরসের দ্বারা গড়িয়া পিটিয়া, সাঙ্গাইর, গুজাইয়া এতটা পরিমাণেই নিজের করিয়া লইয়াছে যে, এখন এই রথযাত্রার ভিতরে কোনও প্রারের বৌদ্ধগন্ধ আছে বলিয়া সন্দেহ মাত্রও উপস্থিত হয় না।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫০৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।