১ম সংখ্যা ] হয়। কিন্তু সে কথা এখন বলিতেছি না। বৈঞ্চবকবিতার শিল্পাংশই এখন আমার লক্ষ্য। বৈষ্ণবকুবিতায় যে একটা ঝঙ্কার শুনিতে পাওয়া যায়, সেই ঝঙ্কারে যে একটু রহস্তুের ভাব আছে, তাহা বড় উপাদেয়। গানের প্রধান অঙ্গ যেমন সুর, গৌণতঃ ভাব, তেমনি বৈষ্ণব কবিতায় এই ঝঙ্কারই তাহার প্রথম কৌশল আমরা যখন বৈষ্ণবকবিতা পড়ি তখন প্রথমে আকৃষ্ট হই তাহার রহস্যময়ী ভাষাদ্বারা, তার পর তাহার ভাবের দিকে নজর পড়ে। এই ভাষার একটা বৈচিত্র্য এই যে ইহা দ্বারা যেন ভাবটী ছন্দে ও সুরে বাধা পড়িয়া शैग्न । , সখিরে ভাল করি পেখন না ভেল। মেঘ লতা সঙে তড়িত লতা জতু হৃদয় শেল দেরি গেল । একটা অনিৰ্ব্বচনীয় ভরা মুরের সহিত কাণের ভিতর বাজিয়া উঠে । ইহ। গানের আলাপের মত কথার অপেক্ষা রাখে ন}, ভাবের লালি তাকে প্রকাশ হইবার অবসর দিতে চাহে না । এমনি করিয়া বৈষ্ণবকবির পদাবলী আমাদের হৃদয়ে একটা স্বরের মোহ স্বজন করে। কোকিল বা পাপিয়ার কূঞ্জনের অর্থ বাহির করিয়া । আমরা তাহার মিষ্টতা • উপভোগ করি ন}, তাই। শুনিলেই মিষ্ট্র লাগে । কোমল ভাবে ভরপুর বৈষ্ণবকবির হৃদয় এই মুরে বিভোর হইয়াছিল, তাই অধিকাংশ বাঙ্গালী বৈষ্ণবকবিই এই ভাষার সাহায্যে তাহদের পদাবলী রচনা করিয়াছিলেন। স্বয়ং চণ্ডীদাসও ইহার আশ্রয় লইয়াছেন, তবে বৈষ্ণবকবি জ্ঞানদাস 8ማ অনেক কম যাত্রায়, এবং বোধ হয় বিদ্যাপতির সহিত সাক্ষাৎ হইবার পর । জ্ঞানদাসের পদাবলীর মধ্যে অবিমিশ্র বাঙ্গলাপদ কতকগুলি আছে, কিন্তু তাহার অধিকাংশ পদই “ব্রজবুলি"তে লিখিত, অথবা ব্রজবুলিমিশ্রিত ভাষায় রচিত। “গ্রামরি সোঙরি ক্টোহারি নাম ।” হইতে জ্ঞানদানের পদাবলীর অfরস্তু হইয়াছে। জ্ঞানদাস ও অন্যান্য বৈষ্ণবকবিগণের পদযোজনাবিষয়ে বিশেষত্ব এই যে, ইহার জন্স তাহার। অত্যন্ত আয়াস স্বীকার কুরিয়াছেন, অথবা ইহারই প্রতি র্ত্যহাদের দৃষ্টি আবদ্ধ ছিল, তাহ কোথাও মনে হয় না । যেখানে যাহা আসিয়া পড়িয়াছে তাহাই তাহারা বসাইয়া গিয়াছেন, কাটছাট করিবার প্রয়াস করেন নুই, কথা বাড়িয়া গিয়াছে কি কথা পড়িয়া গিয়াছে, অত ভাবিবার তাহদের প্রবৃত্তি বা সময় ছিল না অথচ মনের উল্লাসে র্তাহারা যে গান গাহিয়৷ ছেন তাহ অনায়াসে সম্পাদিত হইলেও অধিকাংশ স্থলেই সুন্দর ভঙ্গীতে মনোহর ছন্দে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। সেই আত্মপ্রকাশ বহু বৈচিত্র্যময়, এবং প্রায় সৰ্ব্বত্রই ভাবের উপযুক্ত। কবি জ্ঞানদাস রাসলীলার আনন্দ কেমন সুন্দরব্রুপে প্রকাশ করিয়াছেন তাহ দেখিবার যোগ্য । দেখরি সখি শু্যামচন্দ ইন্দু বদনী রাধিক। বিবিধযন্ত্র যুবতীবৃন্দ গাওয়ে রাগ মালিকা ৷ মন্দ পবন কুঞ্জভবন কুসুম গন্ধ মাধুরী।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।