পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6 o' বঙ্গদর্শন ভাবে আলোচনা করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছি ক্লেন, তাহার কারণ নির্দেশার্থ ফরাসী পণ্ডিত ভিক্টর কুজ্যার ফরাসীতে লিখিত গ্রন্থের শ্ৰীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় কৃত অনুবাদ হইতে নিম্নোদ্ধত অংশটর প্রতি পাঠকগণের দৃষ্টি ভিক্ষা করিতেছি। কুজ্য বলেন ; “বাকু্যই কবিতার সাধনযন্ত্ৰ ; কবিতা বাক্যকে আপনার উপযোগী করিয়া গড়িয় লয়, এবং আদর্শসৌন্দর্ঘ্য প্রকাশ করিবার জন্য তাহাঙ্কুে মনোবস্তুতে পরিণত করে। কবিতা বাক্যকে ছন্দের দ্বারা সুন্দর করিয়৷ তোলে ; বাক্যকে সামান্ত কণ্ঠস্বর ও সঙ্গীত এই উভয়ের মধ্যবর্তী করিয়া দড়ি করায় ; উহাকে এমন কিছু করিয়া তোলে যাহা মূৰ্ত্ত ও অমূৰ্ত্ত উভয়ই, যাহা আকৃতি ও দেহ-গঠনের ন্যায় সীমাবদ্ধ, পরিস্ফুট, সুনির্দিষ্ট ; যাহা বর্ণচ্ছটার ন্যায় জীবন্ত ভাবাপন্ন, যাহা ধ্বনির ন্যায় মৰ্ম্মস্পর্শী ও অনন্ত। শব্দ স্বয়ং, বিশেষতঃ কবিতার নির্বাচিত ও রূপান্তরিত শব্দ, একটা প্রবল বিশ্বজনীন সঙ্কেত।” তাই বলিয়াছিলাম যে কবি জ্ঞানদাসের ছন্দে একটা এমন কিছু আছে যাহা মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করিয়া স্বচ্ছন্দে আপন মৰ্ম্ম বিজ্ঞাপন করে। যেমন আনন্দের ছন্দ, লিযাদের ছন্দ আমরা দেখাইয়াছি, তেমনি মনের অপরাপর ভাবাবলীর ছন্দও এক জ্ঞানদাসেই দেখিতে পাওয়া যায়। বৈষ্ণবকবি মনুষ্য-হৃদয়ের ছবি তুলিয়াছেন, এবং সেই ছবি ভাবের বর্ণে উজ্জ্বল করিয়া দেখাইয়াছেন। সেই চিত্রের প্রকাশ হইয়াছে র্তাহাদের বাক্য ও ছন্দে। বাক্যের উপরই { ১২শ বর্ষ, বৈশাখ, ১৩১৯ ছন্দ প্রতিষ্ঠিত, যদিও ছন্দের এমন শক্তি আছে যদ্বারা সে বাক্যের উপর নির্ভরতা ত্যাগ করিয়া, আপনার গুণে আপনি প্রতিষ্ঠা লাভ করিতে পারে। কালিদাসের কুমার-সম্ভবের রতিবিলাপের ছন্দের প্রতি মনোনিবেশ করিলেই এ কথা বেশ হৃদয়ঙ্গম হইবে। যে সংস্কৃত কিছুই জানে ন। তাহার কাছে যদি এই রতিবিলাপ যথাযথ রীতি অনুসারে আবৃত্তি করা বায় তাহা হইলে সেও বুঝিতে পারিবে যে কবি বিষাদের গান গাহিতেছেন। জ্ঞানদাসের আর একটা পদ উঠাইয়। এই কথা সাব্যস্ত •করিবার চেষ্টা করিব । বসন্তকালে বিরহবিধুর ঐরাধ শূঙ্ক কুঞ্জবনে বিলাপ করিতেছেন, এই বিলাপ ব্রজবুলিতে গ্রথিত অতএব ইহাতে বাক্যের রহস্তাত্মক ভাবও যথেষ্ট রহিয়াছে, কিন্তু ইহ৷ গুনিলেই বুঝা যাইবে যে, এই পদে কবি কোনও বিষাদের তান তুলিয়াছেন – ফুটল কুসুম নবকুঞ্জ কুটার বন কোকিল পঞ্চম গাবই রে। মলয়ানীল হিম শিখরে সিধারল পিয়া নিজ দেশ না আইব রে ॥ অনিমিখ নিকট নহে মুখ নিরখিতে তিরপিত নহি এ নয়ান । এ সব সময় সহয়ে এত শাকই অবলা কঠিন প্রধাণ । চন্দন চাদ তাধিক উতপাতই উপবন অলি উতরোল। সময় বসন্ত , কান্ত দুর দেশ জানমু বিহি প্রতিকুল।