পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা ] উজ্জ্বল আদর্শ মুদ্রিত করিবার চেষ্টা করিয়া যে হিন্দুসাধারণের কৃতজ্ঞ তী-লাভের অধিকারী হইয়াছেন, তাহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই । বৰ্ত্তমান গ্রন্থ ভূপেন্দ্রনাথের "ধর্মপ্রচারগ্রন্থাবলীর” তৃতীয় গ্রন্থ। তিনি ইতিপূৰ্ব্বে "দিনচৰ্য্যায় হিন্দুর দৈনিক জীবনযাপন প্রণালীর এবং “আশ্রমস তুষ্টয়ে’ হিন্দুর আএমধৰ্ম্মের বিশদ চিত্র অঙ্কিত করিয়াছেন । বর্তমান গ্রন্থে তিনি হিন্দুর ঐকান্তিক সাধনার পরিচয় দিয়াছেন । ভূপেন্দ্রনাথ বলেন “হিন্দুশাস্ত্রমতে বিপুল ব্ৰহ্মাণ্ডের প্রতি পরমাণু ভগবানের অনন্ত শক্তিতে পরিপূর্ণ। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এমন স্থান কোথাও নাই যেখানে তাহার অনন্ত সত্তার অস্তিত্ব নাই। মুতরাং মানুষের মধ্যেও র্তাহার এই বিরাজি ত, কিন্তু মোহের প্রভাবে, অজ্ঞানের প্রভাবে, কদভ্যাসের প্রভাবে, এই বিপুল শক্তি জড়ীভূত, ক্ষীণ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের স্তায় মৃদু, বাজনিহিত বৃক্ষশক্তির ন্যায় সুহ্ম, অস্পষ্ট, অদৃশ্য। উপযুক্ত সাধন দ্বারা যদি এই শক্তিকে বিকশিত করিয়া তোলা যায়, তাহ হইলে মানুষ অসাধ্য সাধন করিতে পারে।” হিন্দু এই তত্ত্ব অবগত ছিলেন বলিয়াই ' ঐকান্তিক সাধন দ্বারা এমন অপূৰ্ব্ব শক্তি সঞ্চয় করিতে পারিয়াছিলেন। ভূপেন্দ্রনাথের মতে আমাদের বর্তমান দেশব্যাপী দুরবস্থার সর্বপ্রধান কারণ— “অন্ধ, ভ্রান্ত,অবসাদকরঅদৃষ্টবাদ।" যেদিন হইতে জুড়ভাবাপন্ন ভারতবাসী কর্মের শক্তির প্রতি আস্থা হারাইয়াছে, সেইদিন হইতেই তাহার দুরবস্থার আরম্ভ। অভ্যাস যোগ 0.8%) দৈব ও পুরুষকার সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচন দ্বারা ভূপেন্দ্রনাথ দেখাইয়াছেন যে, আমরা যে দৈবের উপর অন্ধ নির্ভরের ভাব দেখাই তাহ শাস্ত্রসন্মত নহে। “যোগবশিষ্ঠে"র যুমুফু প্রকরণে পরম গ্রাজ্ঞ বশিষ্ঠ দেব ত্রিলোকপাবন ত্রীরামচন্দ্রকে বলিয়াছেন “দৈরই বল’ প্রদান করে, ইহা মূঢ়ের কল্পনা। কেননা পুরুষকার ভিন্ন সিদ্ধিলাভ সম্ভব নহে। * * দুৰ্ব্বল ও বলবানে যুদ্ধ ঘটলে যেরূপ দুৰ্ব্বলের পরাজয় হয়, দৈব ও পৌরুষ এই উভয়ের মধ্যে তমনি দৈলেরই পরাজয় হইয়া থাকে।” সুতরাং বৰ্ত্তমান দুৰ্গতি হইতে মুক্তি পাইবার একমাত্র উপায় কৰ্ম্মের সাধন।। কিন্তু কর্মের সাধনা করিবার পূৰ্ব্বে কৰ্ম্ম কি, তাহা বুঝ হালখক । সুতরাং গ্রন্থকার “অভ্যাসযোগ ও কৰ্ম্মযোগ" নামক অধ্যায়ে বহুল শাস্ত্রবাক্য ও যুক্তি সহকারে কৰ্ম্মের প্রকৃত তাৎপৰ্য্য বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছেন। একদিন মনস্বী বঙ্কিমচন্দ্র তাহার সুপ্রসিদ্ধ “ধৰ্ম্মতত্ত্বে" তাহার স্বদেশবাসীকে কৰ্ম্মের তাৎপৰ্য্য বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন । বঙ্কিমচন্দ্র বলিয়াছিলেন “সকল বৃত্তির পূর্ণ পরিণতি ও সামঞ্জন্তের” সাধনাই কৰ্ম্ম। ভূপেন্দ্রনাথ দেখাইয়াছেন যে শাস্ত্রমতে ভগবৎগীতের সাধন এবং ভগবৎ উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত কৰ্ম্মই—প্রকৃত কৰ্ম্ম। কারণ “যিনি সকল শক্তির মূল, সকল জ্ঞানের আধার, সকল আনন্দের অমুতনিকেতন, তাহাকে লাভ করিলে সকল বৃত্তি আপনিই যথাযথ বিকশিত হইয়া উঠে,