(2b, ο দিগের জীবনে সৰ্ব্বদাই প্রত্যক্ষ করিয়াছি। সংস্কারক সমাজের দোষভাগের প্রতি যতটা সজাগ থাকেন, তার গুণভাগের প্রতি ততটা সজাগ থাকিতেই পারেন না ; থাকিলে তার সংস্কার-বাসনার বেগটা কমিয়া যায়। আর যে প্রতিনিয়ত কেবল কোনও ব্যক্তির বা সমাজের হীনতারই আলোচনা করে, এবং এইরূপ আলোচনা করা কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্ম বলিয়াই ভাবিয়া থাকে তার পক্ষে সে ব্যক্তির বা সে সমাজের প্রতি সত্য ভালবাসা লাভ করা কখনওই সম্ভব হইতে পারে না । ভাগবাসী সুন্দরের সাক্ষাৎকারেই জন্মে, সুন্দরকেই চায়, সুন্দরের সন্ধানেই ফিরে । কুৎসিতের ধ্যানে বা দর্শনে ব। চিস্তনে, ভালবাসা জন্মিতেই পারে ন, বাড়িয়া ওঠা বা বঁচিয়া থাকা তো বহু দূরের কথা। অথচ সমাজসংস্কারক প্রায়ই মক্ষিকাবৃত্তি অবলম্বন করিয়া সমাজ-দেহের ক্ষতস্থানগুলির চারিদিকেই সৰ্ব্বদা ভন ভন করিয়া বেড়াল ; এরূপ না করিলে তার ব্যবসায় টিকিয়া থাকিতে পারে না । এই কারণে এই জাতীয় সমাজ-সংস্কারক অনেক সময়ই আত্ম-সম্ভাবিত, ও মদান্বিত হইয়। উঠেন। আর এ অবস্থায় ইহাদের পক্ষে স্বদেশকে বা স্বদেশের সমাজকে সত্যভাবে বা গভীররূপে ভালবাসা ধে অসম্ভব হইয় উঠে, ইহ। আর বিচিত্র কি ? উপাধ্যায় প্রথম যৌবনে কিয়ৎপরিমাণে এ জাতীয় সমাজসংস্কারক যে ছিলেন না, এমন বলা কঠিন। কিন্তু ক্ৰমে তিনি সে ভাবটাকে ছাড়াইয়া উঠেন। বাংলা দেশে তিনি যে অভিনব দেশভক্তি প্রচার করিয়া গিয়াছেন, বঙ্গদর্শন ১২শ বর্ষ, পৌষ, ১৩১৯ তাহা তার পরিণত বয়সের দীর্ঘসাধনলব্ধ বস্তু ; যৌবনের পরকীয় প্রতির মোহের মরীচিকা মাত্র নহে। তারই জন্য এ বস্তু এতট। সাচ্চ ও সজীব ইয়াছিল। উপাধ্যায় স্বদেশের ভালটুকুকে, স্বদেশী সমাজের শ্রেয়টুকুকে, স্বাদেশিক রীতিনীতির শোভনতাটুকুকেই ভাল করিয়া ধরিয়াছিলেন। ইহাতেই তার উদার কোমল প্রাণ মজিয়া গিয়াছিল । তাই তিনি অমন করিয়া স্বদেশকে ও স্বদেশী সমাজকে, স্বদেশী সভ্যতা ও স্বদেশী সাধনাকে এতটা পরিমাণে প্রেম দিতে পারিয়াছিলেন। র্তার চক্ষে আমাদের ভাল, আমাদের মন্দকে ছাপাইয়া উঠিত । আমাদের সৌন্দৰ্য্য, আমাদের কদর্য্যতাকে ঢাকিয় ফেলিত । আমাদের অধ্যক্ত শক্তি প্রকাগু দুৰ্ব্বলতার মায়িকত মাত্র প্রমাণ করিত। তিনি আমাদের সিদ্ধিকে উপেক্ষা করিয়৷ সাধ্যের ধ্যান করিতেন । আমরা কি করিতেছি বা করিয়াছি তার বিচার না কুরিয়া আমরা কি করিতে পারি তারই সন্ধান করিতেন । আর এই জন্যই আমাদের ক্রটি দুর্বলতা প্রভৃতি কিছুতেই তার প্রেমকে ব্যাহত করিতে পারিত না । এ বিষয়ে তিনি ভারতের সন্ত-সমাজ-মুলভ প্রখর অস্তদৃষ্টি লাভ করিয়াছিলেন। আমাদের সাধুসন্তেরা মানুষ .R স্থাছে তাহা তত দেখেন না, সে লত্য বন্ধটা যে কি, ইহা জানেন বলিয়, তাহার বর্তমান দুৰ্গতি বা পাপকলুষ দর্শনে বিন্দু পরিমাণেও বিচলিত হন না। এ দু’দিনের কৰ্ম্মত্তোগ ছুদিনে ফুরাষ্টয়া যাইবে। পথের
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।