৫৮২ হইবার পথে অন্তরীয় স্থাপন করিতেছিল । আবেদন-নিবেদনেই দেশের নবজাগ্রত রাষ্ট্রীয় কৰ্ম্মণকাজক্ষ আপনাকে নিঃশেষ করিয়া ফেলিতেছিল, জনশক্তিকে প্রবুদ্ধ করিয়াও এই সকল রাষ্ট্ৰীয় কৰ্ম্মচেষ্টা, সে শক্তিকে সংহত ও কার্য্যক্ষম ক রয়া তুলিতে পারিতেছিল না। বরং প্রজা-সাধারণের নিজেরহাতে আত্মচেষ্টাতে কোনও স্বাদেশিক কৰ্ম্মসাধনের ইচ্ছা ও প্রয়{সফে নষ্ট করিয়াই ফেলিতেছিল। . এই দ্য উপাধ্যায় রাষ্ট্রীয় জীবনে আত্মনির্ভর ও আত্মচেষ্টার আদর্শটাকে প্রতিষ্ঠিত করিতে চেষ্টা করেন। নিজের কোটে থাকিয়া, গবর্ণমেণ্টের দিকে একান্তভাবে মুর্থ ফিরাইয়া, শান্ত ও সমাহিত ভাবে আমরা জনশক্তির সংগতিতে সৰ্ব্ববিধ স্বাদেশিক কাৰ্য্য সাধন করিব,— উপাধ্যায় সৰ্ব্বদা এই কথাই বলিতেন। গবর্ণমেণ্টের সঙ্গে বিরোধ বাধীনই প্রথমাবধি যে তার রাষ্ট্ৰীয় কৰ্ম্মচেষ্টার লক্ষ্য ছিল, এমন কথা বলা যায় না। ক্রমে, ঘটনাচক্রে, এরূপ একটা বিরোধের সূত্রপাত হয় সত্য ; কিন্তু এই বিরোধকে উপাধ্যায় নিজে ইচ্ছা করিয়৷ জাগাইয়াছিলেন, এমন কথা ও বলা যায় না। ফলতঃ দেশের তদানীন্তন অবস্থাধীনে গবর্ণমেণ্টের সঙ্গে মিলিয়া মিশিয়া স্বাদেশিক কৰ্ম্ম করা নীতিসম্মত । না হইলেও, চিরদিনই যে জনমণ্ডলীর পক্ষে এরূপ স্বতন্ত্র্য অবলম্বন করা আবখ্যক বা বাঞ্ছনীয় বা সম্ভব, উপাধ্যায় এমনটা কখনও ভাবিতেন বলিয়া বোধ হয় না । সে সময়ে দেশ ঘোরতর তামসিকতার দ্বারা আচ্ছন্ন হইয়াছিল বলিয়া তাহাকে একটা রাজসিক প্রেরণা প্রদান করা আবগুক হয়। এই জন্যই উপাধ্যায় জীবনের শেষ দশায় এই স্বাতন্ত্র্য-নীতি অবলম্বন করেন। কিন্তু রাজসিকতা ভারতের সভ্যতা ও সাধনার চিরন্তন বা বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, পৌষ, ১৪১৯ উৰ্দ্ধতন লক্ষ্য যে নয়, উপাধ্যায় ইহ। যেমন জানিতেন, এমন আর. কেহ জানিতেন বলিয়াই বোধ হয় না। তবে যে সান্ধিকতা চিরদিনই আমাদের সভ্যতা ও সাধনার চরম লক্ষ্য হইয়া আছে; সেই সাত্ত্বিকতাকে জাগাইতে হইলেই, সে অবস্থায়, প্রথমে দেশব্যাপী তামসিকতাকে রাজসিকতার দ্বারা অভিভূত করা আবশুক - উপাধ্যায় এ সত্যটাকে দৃঢ় করিয়া ধরিয়াছিলেন । রাষ্ট্রীয় কৰ্ম্মক্ষেত্রেই এই রাজসিকতাকে জাগাইয়। তোলা সহজ ও সৰ্ব্বাপেক্ষা নিরাপদ । তাহাতে ভবিষ্যতের সাত্বিকতার পথও উন্মুক্ত হইবে, অথচ সমাজে কোনও প্রকারের সাংঘাতিক অরাজকতার প্রতিষ্ঠারও কোন বিশেষ আশঙ্ক থাকে না । এই জন্যই উপাধ্যায় রাষ্ট্রীয় জীবনে এই অভিনব স্বাতন্ত্র্য নীতি প্রচার করিয়াছিলেন। দেশের লোকের আত্মচৈতন্যকে জাগাইয়া তোলা, তাহাদিগের চক্ষুকে আপনার উপরে নিবদ্ধ করা, নিজের হাতে দেশের কাজ দশে মিলিয়া কৰিলে যে শিক্ষা, যে সংযম, যে শক্তি লাভ হয়, ইহাতে আপনাদের উপরে যে আস্থা জন্মে, ও এই আস্থার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণে যে উৎসাহ, অন্তরে যে অtশ1, পেশিতে যে বল সঞ্চারিত হয়, এই সকলের জন্যই উপাধ্যায় এই নীতি প্রচার করিতে প্রবৃত্ত হন, নতুবা গবর্ণমেণ্টের সঙ্গে গায়ে পড়িয়া বিরোধ বাধালই যে তার অভিপ্রায় ছিল, এমন কথা কিছুতেই বলিতে পারি না । . কিন্তু উপাধ্যায় মহাশয়ের স্বদেশিকতার সত্য আদর্শটাকে ধরিতে হইলে, বিশেষভাবে র্তার সমাজ-নীতির আলোচনা করা অবশুক । কারণ এখানেই তার স্বদেশিকতার নিজস্ব স্বরূপট ফুটিয়া উঠিয়াছিল। সময়ান্তরে সে কথা বলিবার বাসনা রহিল । ঐবিপিনচন্দ্র পাল । ২১১ নং কর্ণওয়াগিস খ্ৰীট, ব্রাহ্মমিশন প্রেসে ক্রমবিনাশচন্দ্র সরকার দ্বারা মুদ্রিত
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৮৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।