අ98 লাগিল। একদিন চাপাল গোপাল নামক এক দুমুৰ্থ ব্ৰাহ্মণ রাত্রিকালে শ্ৰীবাসের দ্বারসম্মুখস্থ স্থান উত্তমরূপে লেপিয়৷ তথায় হরিদ্র, সিন্দুর, রক্তচন্দন, মদ্যভাণ্ড প্রভৃতি ভবানীপূজার দ্রব্যজাত রাখিয়া আসিল। শ্ৰীবাস প্রাতঃকালে সমস্ত দেখিয়া ব্যাপার বুঝিতে পারিলেন এবং স্থানীয় সন্ত্রান্ত লোকদিগকে ডাকিয়া আনিয়া পাষণ্ডগণের কাগু দেখাইলেন । ইহার তিনদিন পরে গোপালের শরীরে কুষ্ঠলক্ষণসমূহ প্রকাশিত হইল। যন্ত্রণায় অস্থির হইয়। গোপাল গৌরের শরণ গ্রহণ করিলেন। একদিন এক ব্রাহ্মণ কীৰ্ত্তন শুনিতে আসিয়া দেখিলেন দ্বার রুদ্ধ। ব্রাহ্মণ মৰ্ম্মান্তিক দুঃখিত হইয়া ফিরিয়া গেলেন। ইহার কতিপয় দিবস পরে গঙ্গার ঘাটে গৌরকে দর্শন করিয়া ব্রাহ্মণ তাহাকে অভিসম্পাত করিলেন “তুমি আমাকে নিদারুণ মনঃকষ্ট দিয়াছ, আমি অভিসম্পাত করিতেছি—তোমার সংসারস্নখ বিনষ্ট হইবে।” ব্রাহ্মণের শাপে গৌরের মনে অপার আনন্দের উদয় হইল, তিনি খলখল করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। তটশালিনী ভাগীরথীর তীরে দলে দলে গাভীগণ বিচরণ করিতেছিল। নিমাই ভ্রমণ কুরিতে করিতে তথায় উপনীত হইলেন । গাতীদল দেখিয়া তাহার বৃন্দাবন ভ্রম হইল এবং ভাবষিষ্ট হইয়া “যুঞি সেই, মুঞি সেই” বলিতে বলিতে তিনি দৌড়াইয়৷ ঐবাসের গৃহে উপনীত হইলেন। জীবাণ গৃহমধ্যে নৃসিংহদেবের আরাধনায় নিরত ছিলেন। স্বারে পদাঘাত করিয়া নিমাই কহিলেন “শ্ৰীবাসিয়া, যাহাকে পূজা কচ্ছিস বঙ্গদর্শন [ ১২ বর্ষ, মাঘ, ১৩১৯ দেখিয়া যা সে সশরীরে টুপস্থিত ।” ঐবাসের ধ্যানভঙ্গ হইল। সম্মুখে দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিতে পাইলেন, নিমাই চতুভূজ হইয়। বীরাসনে উপবিষ্ট আছেন, এবং শঙ্খ-চক্রগদাপদ্ম ধারণ করিয়া মত্ত সিংহের মত গর্জন করিতেছেন। ঐবাস স্তস্তিত হইলেন, র্তাহার শরীর কঁাপিতে লাগিল। নিমাই র্তাহাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন “শ্ৰীবাস, এতদিনেও তুমি আমার প্রকাশ বুঝিলে না ! কোথায় তোমার চীৎকারে ও নাড়ার হুঙ্কারে আমি বৈকুণ্ঠ ত্যাগ করিয়া আসিলাম ; তুমি কি না নিশ্চিন্ত হইয়৷ বসিয়া আছ ? অার নাড়া আমাকে ছাড়িয়া শান্তিপুরে চলিয়া গেল। সাধুর উদ্ধার ও দুষ্টের বিনাশের জন্য আমি আসিয়াছি। আর চিন্তা নাই শ্ৰীবাস, এখন আমার স্তব পাঠ কর।” প্রেমপুলকিত প্রবাস তখন পড়িলেন “নেীমীড্য তেহস্রবপুষে তড়িদম্বরায়। গুঞ্জাবতংস পরিপিচ্ছলসমূখায় | বন্তস্ৰজে কবলবেত্র বিষাণ বেণু। লক্ষ্মশ্রিয়ে মৃদ্ধপদে পশুপাঙ্গজায় ॥ নিমাই প্রীত হইয়া কহিলেন “শ্ৰীবাস, স্ত্রীপুত্র সকলকে আনিয়। আমার রূপ দর্শন কর ও পূজা কর এবং অভিলষিত বর প্রার্থনা কর।” তখন সন্ত্রীক শ্ৰীবাস বিষ্ণুপূজার্থ আহৃত গন্ধ, পুপ, ধূপ, দীপ দ্বারা নিমাইর পূজা করিলেন। নিমাই, শ্ৰীবাস ও তাহার পরিবারস্থ সকলের মঙ্গকে চরণার্পণ করিয়া কহিলেন “শ্ৰীবাস, তোমাকে ধরিতে যবন-রাজা নৌকা পাঠাইয়াছে, শুনিয়া কি ভয় পাইয়াছ ? আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৮৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।