8 సె8 চেষ্টা করিতেছেন,–শাস্ক ও শাসিতের মধ্যে কোথাও একটা স্থায়ী বিরোধ জাগাইয়৷ রাখা নীতিসঙ্গত নহে বলিয়া তিনি যে সম্রাটকে মধ্যস্থ করিয়া, বঙ্গভঙ্গের ব্যবস্থাটা উলটাইয়৷ দিয়া রাষ্ট্রে শান্তি স্থাপনের পথ পরিষ্কার করিয়াছেন,—এ সকল কথাসাধারণ লোকেও মোটামুটি বুঝিয়াছে। আর এটী বুঝিয়াছে বলিয়াই সকল সম্প্রদায়ের লোকে লাট হার্ডিঞ্জকে অত্যন্ত প্রীতি ও শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিতে আরম্ভ করিয়াছে। এই জন্যই র্তাহার উপরে এই আততায়িতার আক্রমণে দেশের সকল শ্রেণীর ও সকল সম্প্রদায়ের লোকে এক বাক্যে এমন আন্তরিকতা সহকারে এ সময়ে এতটা সমবেদনা কেবল প্রকাশ করিতেছে তাহা নহে; সত্য সত্যই অন্তরে অস্তরে অনুভবও করিতেছে। কিন্তু লাট হার্ডিঞ্জের সঙ্গে সমবেদনা কিম্বা এই আততায়ী কৰ্ম্মের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করিয়া ক্ষান্ত থাকিলেই চলিবে না। কেবল শাসনে বা প্রতিবাদে এ সকল সামাজিক ব্যাধির আরোগ্য হয় না। আততায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ যদি কখনও ধরা পড়ে, এবং রাজদ্বারে দণ্ডিত হয়, তাহ হইলেই যে এ উৎপাত একেবারে থামিয়া যাইবে এমন কল্পনা করাও যায় না , এই উপদ্রব কে ঘটাইল জানি না, কখন জানিব কি না বলিতে পারি না, কিন্তু যেই ঘটাক ম। কেন, সে যে স্বদেশের ও স্বাদেশিকতার বিষম শক্র এ কথা ভাল করিয়া বুঝিতে ও বুঝাইতে হইবে। র্যায়। আজ লাট হার্ডিঞ্জের প্রতি স্বল্পবিস্তর শ্রদ্ধাবশতঃ এই আততায়ী কৰ্ম্মের প্রতিবাদ করিয়াছেন, বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, মাঘ, ১৩১৯ তারাও সকলে যে এই কাজটা সত্য স্বাদেশিকতার কত বড় শক্রতা সাধন করিয়াছে, ইহা ভাল করিয়া বুঝিয়াছেন বলিয়া মনে হয় না। অপরে এই আততায়ী কৰ্ম্মের ফলে বুঝি বা দেশে পুনরায় লাট মিণ্টোর কঠোর শাসননীতি প্ৰবৰ্ত্তিত হয়, এই ভয়ে ইহার প্রকাগু প্রতিবাদ করিতেছেন। কিন্তু তাহারাও এই দুষ্কর্মের প্রকৃত মৰ্ম্ম হৃদয়ঙ্গম করিয়াছেন কি না সন্দেহ। আর যতদিন দেশের জনসাধারণে এটা ভাল করিয়! বুঝিতে না পারিয়াছেন, ততদিন কোন না কোন সম্প্রদায়ের অন্তরে কোনও না কোন আকারে বিদেশীয় বিপ্লবপন্থীদিগের এই সকল আসুরিক কৰ্ম্মেং প্রতি স্বল্পবিস্তর সহানুভূতি থাক। নিতান্ত অসূস্তব নহে। এই সকল বিপ্লবপন্থীর কৰ্ম্মচেষ্টার সঙ্গে আমাদের সত্য স্বাদেশিকতার কোনও প্রকারের সঙ্গতি-সাধন যে একেবারে অসম্ভব, চিরদিন ইহা জানিতাম ও বুঝিতাম। স্বদেশী আন্দোলনের প্রথমাবধি যখনই এই সকল ভাব বিন্দুমাত্র প্রকাশ পাইয়াছে, তখনই প্রাণপণে তাহার প্রতিবাদ ও করিয়াছি। কিন্তু লাট মিন্টোর শাসনকালে যথাযোগ্য ভাবে এই বিষম রোগের প্রতীকার করিবার উপযুক্ত অবসর আমরা পাই নাই। রাজপুরুষেরা তখন আমাদের প্রকাগু প্রতিবাদই চাহিতেন, ইহার প্রতীকারের ভার আমাদের উপরে অর্পণ করিতে সাহস পান নাই। রোগের প্রতীকার করিতে হইলে প্রথমে তাহার নিদান-নির্ণয় আবগুক !
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৯৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।