পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০ম সংখ্যা | প্রভৃতি ইহাদের সবগুলিতেই প্রায় অবিকৃত ভাবে বিদ্যমান আঁছে। তাই জয়দেবের গীতাবলী ও রিদ্যাপতির পদাবলী এতদুভয়েরই পাঠকালে যতি-পতনের প্রতি দৃষ্ট রাখিয়া পড়িলে ইহাদের মিষ্টত্বের কোনও ক্ষতি হয় না। বিদ্যাপতিতে ছন্দের বৈচিত্র্য বোধ হয় জয়দেব অপেক্ষাও বেশী আছে, কিন্তু কতকগুলি ছন্দ, যেমন দেশী বরাড়ী প্রভৃতি, দুই কবিরই পদে পাওয়া যায়, এবং ছন্দের গতি ও মন্থণত জয়দেবের গীত হইতেই যে বিদ্যাপতিতে আসিয়াছিল সে বিষয়ে কোনও ভুল নাই । .বিদ্যাপতি বাঙ্গালী কবি নহেন, এ কথায় আর এখন কাহারও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। কিন্তু বিদ্যাপতি যে দেশেরই কবি হউন, তাহার প্রভাব যে বঙ্গবাসীর উপর অশেয,তাহ অস্বীকার করিবার উপায় নাই বহুশতাব্দী ধরিয়া বিদ্যাপতি বাঙ্গালীর আদি কবি বলিয়া গ্রন্থ হইয়াছিলেন; এবং বঙ্গদেশের বৈষ্ণবকবিকুল তাহাকে ও চণ্ডীদাসকে তঁহাদের পথপ্রদর্শক বলিয়া মানিয়া লইয়াছিলেন, এবং তাঁহাদের নমস্কার পূর্বক তন্নির্দেশিত পথে চলিয়াছিলেন। বৈষ্ণবকবিরাই বঙ্গদেশকে কবিত্বমুধা পান করাইয়া অমর করাইয়াছেন, এবং ভগীরথের মত বঙ্গদেশে কৃষ্ণপাদোদ্ভব পীযু্যবাহিনী গীতি-ভাগীরথীকে তাহারাই প্রথম প্রবাহিত করিয়াছেন। অতএব এই অমৃতধারার জন্য বঙ্গদেশ চিরকাল বিদ্যাপতির কাছে ঋণী থাকিতে বাধ্য। শুধু এই জন্যই নয়, বঙ্গদেশ বিস্কাপতির জয়দেব ও বিদ্যাপতি ఆoు কাছে অন্য কারণেও ঋণী। বিদ্যাপতির পদ ভক্তির অবতার শ্রীচৈতন্তের বড় প্রিয় পদার্থ ছিল ; তাহার পাশ্বদগণও বিদ্যাপতির পদাবলী হইতে মধুর রসসাধন পিপাসা মিটাইতে পারিয়াছিলেন এবং সেই রসের পরিপোষক শিক্ষাও দিতে পারিয়াছিলেন। অতএব বিদ্যাপতির কাছে বঙ্গদেশ পবিত্র বৈষ্ণবধর্মের পরিপুষ্টির জন্যও অনেক পরিমাণে ঋণী, তাহ বোধ হয় কেহ অস্বীকার করিবেন না। বৈষ্ণব কবির মধ্যে বিদ্যাপতির অকুকৰ্ত্তাই বেশী, তাহার একটা কারণও আছে, তাহা এ স্থলে বলিবার প্রয়োজন নাই। আমার বক্তব্য এই যে, আজ যদি আমরা জানিতে পারিয়াছি যে, বিদ্যাপতি মৈথিল কবি, বাঙ্গালী কবি নহেন, তাই বলিয়া যে আমরা তাহার ঋণপাশ হইতে মুক্ত হইয়। পড়িয়াছি তাহা নহে। সে ঋণ আমরা কখনও পরিশোধ করিতে পারিব না, কারণ বঙ্গদেশ বিদ্যাপতির কাছে কবিত্ব-ঋণে এত ঋণী যে সেই ঋণ পরিশোধ করাই অসাধ্য। সে হেন বিদ্যাপতি জরদেবের কাছে শুধু ছন্দের জন্য ঋণী নহেন, ভাবের জন্যও বিশেষ ভাবে ঋণী। জয়দেব বঙ্গদেশে মধুর রসের প্রবর্তক, অতএব বৈষ্ণব কবি মাত্রই তাহার কাছে ঋণগ্রস্ত। এ সম্বন্ধে বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস কেহই বাদ যান না। জয়দেবের কবিত্ব যে কেবল কথার বাধুনির বা ছন্দের পারিপাট্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নহে, তাহ হয় তে অনেকে বিশ্বাস করিতেই চাহিবেন না। কিন্তু যাহার কাছে বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস ভাবের জন্ত ঋণী, তিনি কবিত্ব-শক্তির দাবী