পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০ম সংখ্যা ] যখন লোকসংঘষ্ট্রের মধ্যে পথহারা অসহায় শিশুদিগের হাত ধরিয়া লণ্ডনের পাহারাওয়াল। তাহাদিগের পিতামাত বা অন্য অভিভাবককে খুজিয়া বেড়ায়, তখন তাহার মধ্যে কুমুমের কোমলতা ফুটিয়া উঠে। পুলিশ প্রহরীর ভিতরে কোন প্রকারের সৌজন্য থাকিতে পারে, ইহা এ দেশের কল্পনাতেও আসে না । কিন্তু লণ্ডনের পাহারাওয়ালার সৌজন্তের মুখ্যাতি সত্য জগতময় ছাইয়া গিয়াছে। লণ্ডন সহর ন সাহারা অনেক সময় বুঝিয়া উঠিতে পীরা যায় না । জগতের আর কোথাও এরূপ জনাকীর্ণ বিজনতা আছে বলিয়া জানি না । আর এই সহরে যদি এই পাহারাওয়ালাগুলি না থাকত, তাহা হইলে বিদেশীয়দিগের পক্ষে যথা ইচ্ছা চলা ফেরা করা একেবারেই সম্ভব হইত না। লণ্ডন সহরে দীর্ঘকাল বাস করিয়াও আমি তার দিকৃনির্ণয় করিতে এখনও সমর্থ হই নাই। আমাদের কলিকাতার মত আট দশট সহর লণ্ডনের ভিতর পুরিয়া দিলেও তাহার সকল স্থান অধিকার করা যাইবে কি না সন্দেহ। এক পল্লীর লোকের নিকটে অপর পল্লীর পথঘাট অনেক সময় একান্তই অপরিচিত হইয়া থাকে। এ অবস্থায় কোন অপরিচিত পল্লীতে যাইতে হইলে, বিচক্ষণ পথপ্রদর্শকের আবগুক হইত। আর হয় না এই জন্য যে সহরের ঘাটিতে ঘাটিতে লণ্ডনের এই পাহারাওয়ালাগুলি দাড়াইয়া, করা মাত্রই অশেষ সৌজন্য সহকারে অনভিজ্ঞ পথিককে আপন আপন গন্তব্য পথ দেখাইয়া দেয়। কোন বিলাতের পুলিশ v)( পথিককে নিতান্ত অসহায় দেখিলে, আর তাহার গন্তব্য স্থান অতি দুরে যদি না হয়, তাহা হইলে কখন কখন পাহারাওয়ালা নিজে সঙ্গে করিয়া লইয়া গিয় তাহাকে সে স্থানে রাখিয়া আসে, এমনটাও দেখিয়াছি। . ' .লও সহরে পথে ঘাটে যেমন লোকের জনতা, সেইরূপ গাড়ীরও ভিড়। এ জন্য পদব্ৰজে যার যাতায়াত করে, তাহাদের পক্ষে বড় বড় রাজপথগুলি পারাপার হওয়া, একেবারেই নিরাপদ নহে। কিন্তু লণ্ডনের পাহারাওয়াল৷ এই বিপদজনক পথকেও, পথিক জনের পক্ষে সৰ্ব্বদা নিরাপদ করিয়া রাখে। যখনই কোন ভীরু পথিক গাড়ীর ভিড় দেখিয়া রাজপথে অগ্রসর হইতে সাহস পায় না, তখনই নিকটস্থ পাহারাওয়াল পথের মাঝখানে যাইয়া আপনার হাতখানি তুলিয়া ধরে; আর অমনি দ্রুতগামী শকটশ্রেণী যে যেখানে আসিয়া পহুছিয়াছিল, সেইখানেই থামিয়া যায়, এবং পথিকেরা নিৰ্ব্বিঘ্নে রাজপথের একপাশ্ব হইতে অপর পাশ্বে চলিয়া যাইতে পারে। এইরূপে যে সকল লোক রাস্ত পাড়ি দিবার জন্য দাড়াইয়াছিল, তাহারা এধার হইতে ওধারে চলিয়া গেলে, পাহারাওয়ালীও হাতখানি নামাইয়া সরিয়া যায়, এবং গাড়ী, ট্যাকুলী, বাস প্রভৃতি আবার রাজপথ জুড়িয়া যাতায়াত আরম্ভ করে। লণ্ডনের পাহারাওয়ালা যখন পথের মাঝখানে দাড়াইয়া থাকে, তখন তাহাকে মানুষ বলিব না প্রস্তরমূৰ্ত্তি বলিব বুঝিয়া উঠি নাই। মুখ দেখিয়া তাহার মনের ভিতর