পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২৮ থাকে। ম্যাক্সমুলার ভালই বলিয়াছেন, “প্রত্যেক ভাষাতেই শব্দসমূহের মধ্যে এবং ব্যাকরণসম্মত রূপ সকলের মধ্যে প্রতিনিয়ত জীবন-সংগ্রাম চলিতেছে ; যাহারা হ্রস্ব, সরল, উত্তম তাহারাই জয়ী হইতেছে। তাহাদিগের অন্তর্নিহিত উপযোগিতাবশতঃই জয়ী হইতেছে।” এই সকল গুরুতর কারণে কতিপয় শব্দ অপরাপর শব্দের স্থান অধিকার করে। এতদ্ব্যতীত আরও দুইটী কারণ আছে, নূতনত্ব এবং রুচি ; কারণ মানবমন সকল বিষয়েই অল্প পরিবর্তন খুব ভাল বাসে। জীবন-সংগ্রামে কতিপয় শব্দ টিকিয়া যায় অথবা রক্ষিত হয়, ইহাই প্রাকৃতিক নিৰ্ব্বাচন। অনেক অসভ্য জাতির ভাষা-গঠন অতি সুশৃঙ্খল এবং জটিল, ইহা হইতে অনেকে বিবেচনা করেন যে ঐ সকল ভাষ! ঈশ্বরদত্ত অথবা উহাদিগের নিৰ্ম্মাতাগণ সভ্য ও খুব কৌশলী ছিলেন। এফ, ডন, শ্লেগেল লিখিয়াছেন, “অতি নিয়শ্রেণী ঃ বুদ্ধিহীন জাতিগণের ভাষা মধ্যেও আমরা অনেক সময় উত্তম ব্যাকরণসম্মত গঠন-কৌশল দেখিতে পাই ; বাস্ক, ল্যাপোনিয়ান এবং আরও কতিপয় অ্যামেরিকান ভাষা সম্বন্ধে এই কথা বিশেষরূপে সত্য। কিন্তু ভাষাকে শিল্প বলা নিশ্চয়ই ভ্ৰম, কারণ শিল্প শব্দে মনুষ্য কর্তৃক যত্নপূর্বক বিধিমত গঠিত বুঝায়। ভাষা তত্ত্ববিদগণ এক্ষণে স্বীকার করেন যে বিভক্তি ও প্রত্যয়গুলি পূৰ্ব্বে পৃথক পৃথক শব্ব ছিল, তংপর অন্ত শব্দে যুক্ত হইয়াছে ; কিন্তু ঐ সকল শব্দ পূৰ্ব্বে বস্তু ও ব্যক্তির সম্বন্ধবাচক থাকায় আদিকাল হইতেই প্রায় সমস্ত জাতি উহ দিগকে ব্যবহার করিয়াছে। ইহা আশ্চর্য্যের বঙ্গদর্শন [ ১২শ সংখ্যা, মাঘ, ১৩১১ বিষয় নহে। নিয়ের দৃষ্টান্ত হইতে বুঝা যাইবে যে ভাষার পূর্ণত সম্বন্ধে কত সহজে ভ্ৰমে পতিত হইতে পারি ; একটা জীবের কখন কখন দেড়লক্ষ খোসা থাকে, উহার। অতি উৎকৃষ্ট ভাবে ব্যাসাৰ্দ্ধ রেখার ন্তায় সজ্জিত ; কিন্তু কোন জীবতত্ত্ববিৎ এই শ্রেণীর জীবকে সমদ্বি-পাশ্বিক জীব অপেক্ষা অধিক উন্নত বোধ করেন না, যদিও ইহাদিগের তত অধিক অংশ নাই, এবং যাহা আছে তাহাও অসম, কেবল দেহের দুই পার্থস্থ অংশগুলি তুল্য। দৈহিক যন্ত্র সকল পৃথক পৃথক হওয়া এবং নির্দিষ্ট অংশে নির্দিষ্ট কৰ্ম্ম নিপন্ন হওয়াকেই জীবতত্ত্ববিদগণ উন্নতির (পূর্ণতার ) লক্ষণ বিবেচন৷ করেন ; ইহাই সঙ্গত। ভাষা সম্বন্ধেও তাহাই। যে সকল ভাষা শৃঙ্খলাহীন, ংক্ষিপ্ত, মিশ্র অথবা সঙ্কর ; যাহারা সু স্পষ্ট শব্দ, অথবা প্রয়োজনীয় গঠন পদ্ধতি বিজেতৃ কিম্বা বিজিত জাতির অথবা নবাগতগণের ভাষা হইতে গ্রহণ করিয়াছে, সেই সকল ভাষাকে [ ঐ হেতুতে ] শৃঙ্খলাযুক্ত জটিল ভাষা হইতে অধিক উন্নত বিবেচনা করা সঙ্গত নহে । এই সকল অসম্পূর্ণ এবং অল্পসংখ্যক বৃত্তান্ত হইতেই আমি বিবেচনা করিতে পারি যে, অনেক অসভ্য জাতির ভাষাগঠন সুশৃঙ্খল এবং জটিল হওয়াতেই ঈশ্বর কর্তৃক পৃথক স্থষ্ট বলিয়া প্রমাণিত হয় না এবং স্পষ্ট উচ্চারিত বর্ণাত্মক ভাষা কেবল মানুষেরই আছে, এ হেতুতেও নিয়তর জীব হইতে মানবের উৎপত্তি হওয়া বিশ্বাস করিবার অলঙ্ঘনীয় বাধা হয় না । (ক্রমশ ) ঐশশধর রায় ।