১০ম সংখ্যা | ভয়াবহ পরধর্মের পথ,—উপাধ্যায় ইহাও বিশ্বাস করিতেন। " এই কারণেই বিলাত হইতে ফিরিয়া আসিয়া তিনি কতকটা পরিমাণে স্বদেশের সামাজিক জীবনের ও সামাজিক আচার-ব্যবহারের পক্ষপাতী হইয় উঠেন। কামোপভোগপ্ররণ যৌবনকালে র্যারা বিলাত যান, তাদের কথা যাহাই হউক না কেন, বেশী বয়সে, বিশেষতঃ প্রকৃত ধৰ্ম্মজীবনের কথঞ্চিং অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া, র্যাহারা বিলাতী সমাজের ভাবস্বভাব ও মতিগতি পরীক্ষা করিবার প্রত্যক্ষ অবসর প্রাপ্ত হন, তাহদের অনেকেই, বোধ হয়, স্বদেশের রীতিনীতি ও আচারব্যবহারের সমধিক পক্ষপাতী হইয়। বিলাত হইতে স্বদেশে ফিরিয়া আইসেন। অন্ততঃ উপাধ্যায় মহাশয় সম্বন্ধে এরূপই ঘটয়াছিল। এই জন্যই উপাধ্যায় মুহাশয় শেষ জীবনে সমাজ-সংস্কারকার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতে এতটা শঙ্কিত হইতেন। এরূপ শঙ্ক। ষে একান্তই অস্বাভাবিক বা নিতান্তই অযৌক্তিক, এমনই কি বলিতে পারা যায় ? ইংরেজি শিথিয়া, য়ুরোপীয় বাঝের ব্যক্তিত্বাভিমানী অনধীনতার ও গণতন্ত্রতার আদণ্ড মুগ্ধ হইয়া, আমরা এক সময়ে সমাজ-সংস্কারব্যাপারটা যত সহজ মনে করিয়াছিলাম, বাস্তবিক যে তাহা তত । সহজ নহে, এ জ্ঞান অনেকেরই অল্পে অল্পে জন্মিতেছে। বিশেষতঃ য়ুয়োপীয় সমাজচিত্রের ধ্যানে এই জ্ঞান বাড়িয়া উঠে বৈ হ্রাস হয় না। এক এক করিয়া, আমাদের বর্তমান সমাজ-সংস্কারের মুখ্য প্রয়াসগুলিকে ধীরভাবে তাকাইয়া দেখিলেই, ইহা বুঝিতে উপাধ্যায়ের সমাজনীতি やがSか○ পারা যায়। উপাধ্যায় এটা খুব ভাল করিয়া বুঝিয়াছিলেন বলিয়াই, এতটা সরাসরিভাবে সমাজসংস্কারের চেষ্টায় আপনিও প্রবৃত্ত হন নাই, অপরকেও এ কাৰ্য্যে প্রোৎসাহিত করিতেন না । প্রচলিত সংস্কার-প্রয়াসিগণ আমাদের জাতিভেদ-প্রথাটা ভাঙ্গিয় দিবার জন্য স্বাভাবিক। বৰ্ত্তমানে এই জাতিভেদ-প্রথা যে আকার ধারণ করিয়াছে, তাহাতে সমাজের স্থবিরত যে অনেকটা বাড়িয়া গিয়াছে, ইহা অস্বীকার করাও যায় না। আর পূৰ্ব্ব পূৰ্ব্ব যুগেও মহাজনেরা সময়ে সময়ে, এই বংশগত জাতিভেদ প্রথার সংস্কার সাধন ষে করেন নাই, তাহাও নহে। জাতিভেদের কঠোর শাসন সত্বেও বহু কালাবধি হিন্দুসমাজে যে বীজ-মিশ্রণ ঘটিয়া আসিয়াছে, ইহা ও বোধ হয় প্রমাণ কর। কঠিন নহে। এইরূপ বীজ মিশ্রণে কেবল বিবিধ বর্ণসঙ্করেরই উৎপত্তি হয় না , যার সমাজে সঙ্করবর্ণ বলিয়। পরিচিত নহেন, তাহদের মধ্যেও যে এরূপ বীজমিশ্রণ ঘটয়াছে, ইহারও প্রমাণ-প্রতিষ্ঠা অসাধ্য নহে। এতধ্যতীত বৈষ্ণব ও শক্তি উভয় মার্গের সাধক ও সম্প্রদায়-প্ৰবৰ্ত্তকগণের মধ্যে কেহ *েহ প্রকাগু ভাবেই এই জাতিভেদ-প্রথাকে স্বল্পবিস্তর ভাঙ্গিয়া দিয়াছেন, ইহাও অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং বর্তমানেও যে এ প্রথার সংস্কার প্রয়োজন নয়, অথবা সংস্কার হইবে না, এমন কথা কে বলিবে ? উপাধ্যায় কখনও এমন কথা বলেন নাই, তিনি জীবনের কোনও বিভাগে এরূপ
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৩৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।