পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০ম সংখ্যা ] কারণ সে ক্ষেত্রে বর্ণনা-বাহুল্যে নানাবিধ আনুসঙ্গিক চিত্র ফুটাইয়া তুলিয়া, গল্পের প্রাণভূত যে লোক-চরিত্র, তাহ কতটা ফুটিয়া উঠিয়াছে কি না উঠিয়াছে, সে মূল প্রশ্নটা কিয়ং পরিমাণে চাপি রাখিতেও বা পারা যায়। বিশেষ 28 লেপকের যেখানে অনষ্ঠ সাধারণ শব্দসম্পদ থাকে, যেখানে তিনি কবিতার ভাষার সাহায্যে আপনার বর্ণনাদিতে বিবিধ ব্যভিচারী রস ফুটাইয়া তুলিতে পারেন, সেখানে গল্প হিসাবে কোনও গ্রন্থ অতি অকিঞ্চিৎকর হইলেও, শুদ্ধ আপনার রচনা-নিপুণতাগুণে, তাহ লোকের চিত্তরঞ্জন করিয়া সাধারণ সাহিত্যে একটা অল্পবিস্তর স্থায়ী স্থানলাভ করিতেও পারে। কিন্তু ছোট গল্পে ইহার কোনওই সস্তাবনা নাই। চিত্রকলায় যাহাকে pastel drawing or chalk drawing বলে, সাহিত্যকলায় ছোটগল্প অনেকটা তারই সমশ্রেণীর । পেষ্টেলাঙ্কনে লোকবিশেষের প্রতিকৃতিকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে গোটাকতক স্কুল রেখার সাহায্যে, পরিষ্কার রূপে ফুটাইয়৷ তুলুিতে হয়। ছোটগল্পেও ঠিক সেইরূপ। এখানে গুটিকতক ঘটনাকে আশ্রয় করিয়া, অতি অল্প পরিসরের মধ্যে, দুচারিট লোকের ভিতরকার প্রাণটাকে ফুটুইয়া তুলিতে হয়, নতুবা সার্থকতা লাভ হয় না। এই জাতীয় ছোটগল্প রচনায় বাঙ্গালী ঔপন্যাসিকদিগের মধ্যে, আমার মনে হয়, ঐযুক্ত সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় যে পরিমাণে কৃতিত্বলাভ করিয়াছেন, আর কেহ তাহা করিয়াছেন কি না সন্দেহ । স্বধীবাবুং গল্পের একটা প্রধান গুণ এই করস্ক ৬৪১ যে, এগুলি প্রায়ই অতিশয় ছোট। “করস্কের” প্রথম গল্পটা স্বল্পায়তন পৃষ্ঠার চৌদ্দটা পৃষ্ঠা মাত্র পূর্ণ করিয়াছে। পড়িতে বোধ হয় ১০১২ মিনিট সময় লাগে। অথচ এই সামান্ত চিত্রপটে, দুই তিনটী ঘটনার সাহায্যে, তিনি (১) দরিদ্র ভদ্র বিধবা সুবোধর ম৷ (২ জমিদার-পত্নী ‘হ’বলা’র মা, (৩) স্থবোধ () হবলা—এই চরিটী চরিত্রকে কেমন উজ্জ্বলরুপে ফুটাইয় তুলিয়াছেন। পড়িতে পড়তে মনে হয়, এরা সকলেই যেন আমাদের পরিচিত, কতবার যেন ইহাদের দেখিয়াছি, কতদিন বেন ইহাদের চরিত্রের আলোচনা করিয়াছি। ভদ্রগৃহস্থের বিধবাট কিরূপে সামান্ত আয়ের উপর নির্ভর করিয়া আপনার একমাত্র পুত্রটকে প্রতিপালন করিতেছেন, জমিদারগৃহিণীর ইদানীন্তনলব্ধ ধনের মন্ততায় কত প্রাচীন আভিজাত্য-মৰ্য্যাদা পদদলিত হইতেছে, আর এদের পুত্ৰ দুটা এইরূপ বৈষয়িক অবস্থার বৈষম্য সত্বেও, কেমন সরলভাবে, কতটা ঔদার্য্য সহকারে, পরম্পরকে কত না ভালবাসে,— এ সকল যেন আমাদের প্রতিদিনের জীবনের ঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতা হইয়া আছে—সুধীবাবুর মিতে পড়িতে পড়িতে তাহাই মনে হয়। এখানে কিছুই অলৌকিক, কিছুই বিস্ময়কর, কোনও কিছুষ্ট প্রতিদিনের জীবনের অভিজ্ঞতার বাহিরের কথা নাই। অথচ আদ্যোপান্ত কেমন চিত্তাকর্ষক ! যেমন র্তার “মিতে” সেইরূপ “কাসিমের মুরগী"ও.অতি ছোট, অতি সরস, অতি সরল, অথচ অতিশয় কলাকুশলতাপূর্ণ একটা