১১শ সংখ্যা অসমর্থ হইয়। মূৰ্ছিত হই। পড়িলেন। ক্ষণকাল পরে কথঞ্চিং প্রকৃতিস্থ হইয়৷ “প্রভুকে আমি আনিয়াছি" বলিয়া হুঙ্কার করিয়া উঠিলেন এবং “আমার ই জষ্ঠ আমার প্রাণনাথ বৈকুণ্ঠ ছাড়িয়া আসিয়াছেন” বলিয়া ভূতলে লুষ্ঠিত হইলেন। কিয়ৎকাল পরে প্রকৃতিস্থ হইয়া আচাৰ্য্য বলিলেন—“রামাঞি, যদি তিনি আমারই প্রভু হন, তাহা হইলে তাহার ঐশ্বৰ্য্য তিনি আমাকে নিশ্চয়ই দেখাইবেন । তাহ। যদি দেখিতে পাই, আমার মস্তকে যদি চরণ তুলিয়া দেন, তবে জানিব তিনিই আমার প্রাণনাথ।” এই বলিয়৷ পূজার সমস্ত উপকরণ লইয়া সপত্নীক রামাঞির সঠিত নবদ্বীপাভিমুখে যাত্রা করিলেন। পথি বলিলেন “আমি নন্দন আচার্য্যের গৃহে গিয়া লুকাইয়৷ থাকিব ; তুমি গিয়া প্রভুকে বলিলে অদ্বৈত আসিল না।" এই বলিয়া অদ্বৈত নন্দন আচার্য্যের গৃহাভিমুখে প্রস্থান করিলেন। শ্ৰীবাসগৃহে গৌরচন্দ্র ভক্তগণ সহ বসিয়৷ আছেন। অকস্মাৎ হুঙ্কার করিয়া বিষ্ণুপট্টীয় উঠিয়া বসিলেন এবং "নাড়া আদিতেছে, নাড়া আসিতেছে, নাড়া আমার ঠাকুরভাব দেখিতে চাইতেছে" বলতে লাগিলেন। তখন নিত্যানন্দ তাহার মস্তকে ছত্র ধারণ করিলেন—গদাধর তাম্বুল কপূর প্রদান করিলেন, ভক্তগণ যুক্ত করে স্তব পাঠ কৱিন্তে লাগিলেন । এমন সময় রামঞি আসিয়া উপস্থিত হইলেন। রামাঞি কোনও কথা বলিবার পূৰ্ব্বেই গৌরচন্দ্র বলিয়া উঠিলেন “আমাকে পরীক্ষা করিবার জন্ত নিমাই-চরিত্র ৩8৫ নাড়া তোমাকে পাঠাইয়াছে। নন্দন আচার্ঘ্যের ঘরে লুকাইয় থাকিয় আমার পরীক্ষার জন্য তোমাকে পাঠাইয়াছে। তুমি এখন ফিরিয়া গিয় তাহাকে লইয়া আইস । রামাঞি তৎক্ষণাৎ অদ্বৈতকে আনিতে ছুটিলেন। অদ্বৈত্ব সমস্ত শুনিয়া আনন্দিত চিত্তে শ্ৰবাসগৃহে আগমন করিলেন, এবং দূর হইতে স্তবপাঠ কৰিতে করিতে সপত্নীক গেীরের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। উপস্থিত হইয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে তাহার বাকুরোধ হইল - দেখিলেন জ্যোতিৰ্ম্ময়াদহ বিশ্বস্তর বিশ্বরূপ ধারণ করিয়া ধিরাজ করিতেছেন, দেবগণ র্তাহার স্থতি করিতেছেন, অনন্ত র্তাহীর মস্ত কাপরি ছত্র ধারণ করিয়া আছেন। তখন স্তম্ভিত আচার্যাকে সম্বোধন করিয়া গেীর জিজ্ঞাসিলেন “কি দেখিতেছ আচার্য্য ! তোমারই কাতর রোদনে আমি অবতীর্ণ হইয়াছি।” তখন অদ্বৈত নানাভাবে গৌরের স্তব করিয়া সস্ত্রীক তাহার চরণে প্রণ ত হইলেন । ভক্তবৎসল গেীরও অদ্বৈতের মস্তকে চরণ অর্পণ করিয়া তাহাকে নৃত্য ও কীৰ্ত্তন করিতে আদেশ করিলেন । তখন সেই ভক্তগণ •মধ্যে প্রেমের বন্ত প্রবর্তিত হইল । সংকীৰ্ত্তনে মত্ত হইয়া সকলেই নৃত্য করিতে লাগিলেন। নৃত্যান্তে আপনার মালা অদ্বৈতের গলায় অর্পণ করিয়া গৌর কহিলেন ‘আচার্য্য, তোমার অভিমত বর প্রার্থনা কর।” তখন নিষ্কামযোগী ভক্তরাজ অদ্বৈতাচাৰ্য্য কহিলেন “আর কি বর চাহিব ? যাহা চাহিয়াছি সকলই পাইয়াছি। '
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৫০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।